বীর উত্তম এ কে খন্দকারের নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটির নামকরণ, মৃত্যুঞ্জয়ী নীল সীমানায় ইতিহাসের মহার্ঘ্য পৃষ্ঠায়
প্রকাশিতঃ 9:48 pm | April 10, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বীর উত্তম এ কে খন্দকার। পুরো নাম আব্দুল করিম খন্দকার। অপারেশন কিলো ফ্লাইটের সমন্বয়ক ও মুক্তিবাহিনীর উপ-অধিনায়ক। ছিলেন ১নম্বর সেক্টর কমান্ডার। স্বাধীনতার পর প্রথম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর বীরত্বব্যঞ্জক ভূমিকার জন্য মানুষ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। দেশের স্বাধীনতা, শোষণমুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পতাকায় উজ্জ্বল হয়ে লিপিবদ্ধ তাঁর নাম।
অবনত, অতল ও বিনম্র শ্রদ্ধায় এই মৃত্যুঞ্জয়ী পূর্বসূরির নামে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা সেনানিবাসস্থ কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটির নামকরণ করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এদিন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন নাম হয়েছে- ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার’। এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতোভয় বীর ও জাতির ইতিহাসের এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তমকে তাঁর বীরত্বগাঁথা অবদানের জন্য বিমান বাহিনীর এই ঘাঁটির পুনঃনামকরণ করা হয়েছে।’ তিনি নিজের বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সকল শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের স্মৃতিফলর ঠিক নিচে নীল রঙের আভায় লেখা ছিল- ‘মৃত্যুঞ্জয়ী নীল সীমানায়’। এই বাক্যের মধ্যেই যেন পুঞ্জীভূত হয়েছে একটি প্রেরণা, একটি সংগ্রাম আর একটি আদর্শের প্রতীক এ কে খন্দকারের নাম। এর মাধ্যমে মুক্তির লড়াইয়ে এক সাহসী পথপ্রদর্শক ও অফুরান প্রেরণার এই উৎসের প্রতি বর্ণাঢ্য স্মৃতিতর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় অধ্যায়কে গৌরবোজ্জ্বল করার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্ম ও গোড়াপত্তনের ইতিহাসকে আলোকময় করার মাধ্যমে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তিকে সমুজ্জ্বল করা হয়েছে যেন!
কিছু কিছু ঘটনা ও নাম সময়কে ছাপিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠে। কেবল স্মরণ করা মাত্র বা একঝলক দেখাতেও যুগের পর যুগ ধরে মানুষ তা চিনতে ও মনে করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও ইতিহাস সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে হয়ে ওঠে উদ্ভাসিত। ঠিক তেমনি বীর উত্তম এ কে খন্দকারের নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটির নামকরণ অম্লান করবে ইতিহাসকে। নিজের কর্মফলকে পুণ্যের ঘরে উঠিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছা এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) বীর উত্তম এ কে খন্দকার নিজের জীবনকে গোটা জাতির কাছে এক অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই কঠিন কাজটি তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি জাতির কাছে মৃত্যুঞ্জয়ী।
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সাহস ও শৌর্যের প্রতীক এ কে খন্দকার। তিনি জাতীয় বীর। ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতাও। যিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার অটুট নিষ্ঠা, কৌশলগত বুদ্ধি এবং অদম্য চেতনা জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি কঠোর মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে বিজয়ের দিকে পরিচালিত প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয়সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন এবং তাঁর যোগ্যতম পরিচালনায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিমান বাহিনী পুনর্গঠনে সক্ষম হন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর আরও জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রতিষ্ঠায় এ কে খন্দকারের অবদান ও এই বাহিনীর উন্নয়নে অতুলনীয় ভূমিকা রাখার জন্য তাঁর নামে এই ঘাঁটির নামকরণ করে তাঁকে এবং তাঁর উত্তরাধিকারীদেরকে সম্মান জানানো হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে সুসংগঠিত করা এবং দেশ গঠনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১’ এ ভূষিত করে।
এই নামকরণ অনুষ্ঠানে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তম এর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধানরা, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার এর এয়ার অধিনায়ক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে