জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস

প্রকাশিতঃ 4:00 pm | April 23, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

চলতি ২০২৪-২৫ বছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার নিয়ে তিন আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়ান ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চলতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশ দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে এডিবি’র পূর্ভাবাসটি কিছুদিন আগের। সংস্থাটি তাদের সর্বশেষ ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এ বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩.৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

তবে এ তিন আন্তর্জাতিক সংস্থাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে এডিবি’র মতে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৫.১ শতাংশ; আইএমএফ এর মতে ৬.৫ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাংকের মতে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপ প্রবৃদ্ধির হার কমতে পারে বলে অনুমান করছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। বিগত সরকার কর্তৃক প্রণীত চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। চলমান আর্থিক সংকট, ব্যবসায় স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে এই সংশোধন করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানায়।

এদিকে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রেক্ষিতে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোই ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনীতিকে আরও সহনশীল করতে সহায়ক হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। রাজস্ব আয় বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ফাঁকফোকর বন্ধ, কর বিধিমালা সরলীকরণ, কর আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং দূষণমূল্য আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির হার নিয়েও পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছে সংস্থাগুলো।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছালেও আগামী অর্থবছরে তা কমে ৫.২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর আগে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির হার ১১ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এডিবি’র মতে, বাংলাদেশের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা পরবর্তী অর্থবছরে কমে ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

বাজারে পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতার অভাব, নীতিগত দুর্বলতা, তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ চেইনে সীমাবদ্ধতা ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পাইকারী বাজারের অদক্ষতা দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতিকে আরও জটিল করে তুলছে- বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

কালের আলো/এমডিএইচ