সক্ষমতার নতুন উচ্চতায় দেশের অর্থনীতির সোনালি প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিতঃ 8:54 pm | April 24, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

দিনে দিনে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে নানা প্রকল্প, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যোগ হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। যা বন্দরের কার্যক্রমকে করেছে গতিশীল। চলমান রয়েছে ১২টি হাইড্রোগ্রাফিক জাহাজ কেনার প্রক্রিয়াও। অন্তর্বর্তী সরকারের নিবিড় তদারকিতে বেড়েই চলেছে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। বন্দরের প্রতিটি সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি-রপ্তানি পণ্য উঠা-নামায়ও রেকর্ড অতিক্রম করেছে। চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি আয় গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে বন্দরে মোট ৩ হাজার ৫৮টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

দেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৮তম বন্দর দিবস শুক্রবার (২৫ এপ্রিল)। এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সুসংবাদ দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। নানা তথ্য-উপাত্তে প্রাঞ্জল উপস্থাপন সংবাদ সম্মেলনটিকে করেছে অর্থবহ ও সমৃদ্ধ। রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অপেক্ষমাণ সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ কনটেইনার জাহাজ বহিঃনোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই জেটিতে ভিড়ছে, কখনও কখনও অন-এ্যারাইভ্যাল ভিত্তিতেও জেটিতে ভিড়ানো সম্ভব হচ্ছে।’

  • কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.০১ শতাংশ
  • এই মার্চে রপ্তানি আয় গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ বেড়েছে
  • চলমান রয়েছে ১২টি হাইড্রোগ্রাফিক জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া
  • বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত
  • জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন হচ্ছে
  • বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকছে এনসিটির মালিকানা

সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৭ হাজার ১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ পণ্য বন্দরের মাধ্যমে পরিবহন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি আয় গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ বেড়েছে।’

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সোনালি প্রবেশদ্বার
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ইতিবাচক চালচিত্রকেই উপস্থাপন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সোনালি প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বন্দরটিকে জঞ্জালমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব ও কর্মকুশলতায় কর্মচঞ্চল ও চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। তিনি একাধিকবার বন্দরটি পরিদর্শন করেছেন।

নানা সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করেছেন। উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অনুন্নয়নের অচলায়তন ভেঙে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বন্দরটি। বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য থমকে দেওয়ার যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দিতেও সক্ষম হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পূর্ণোদ্যমে সচল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও গতিশীল হয়েছে। তাতে দারুণ খুশি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ডেলিভারি না যাওয়ায় শেড ও ইয়ার্ডে লোহার বাক্স, রাসায়নিক পণ্য এবং কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়েছিল। এই জাতীয় পণ্য বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ৩৬৭ বাক্স ৬১৭ টিইইউএস কনটেইনার ধ্বংস করা হয় এবং ৩৫৭ বাক্স ৬৪০ টিইইউএস কনটেইনার অপসারণ করা হয়। এছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শন করেন। তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে শেডের মাঠ থেকে নিলাম যোগ্য ৩০৪টি গাড়ি সরানো হয়। গাড়িগুলো বর্তমানে বন্দরের বহুতল কার শেডে রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃক গাড়িসমূহ নিলামের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ওই স্থানে ইয়ার্ড নির্মাণ করে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত
১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিজনেস সামিটে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এর জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এ মাস দেশ ও বন্দরের জন্য সৌভাগ্যের। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অপারেশনে চলে যাবে। বন্দর ও কাস্টমসকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন। নিলামে গতি এসেছে।

জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন
বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ই টিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করছি। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশন ও ডি কার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন করে ফেলব। গ্রিন মেরিটাইম করিডোর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। মাতারবাড়ী, বে টার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। এই টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড় সম্ভাবনা। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হবে সিঙ্গাপুর। বিনিয়োগকারী প্রস্তুত। নিরাপত্তা, আস্থা, সুন্দর পরিবেশ চায় তারা। মেরিটাইম ও পোর্ট সিকিউরিটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়। ফ্রি ট্রেড জোন নেই উল্লেখ করে বলেন, এটা করতে পারলে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। আমরা এক নম্বর তুলা ব্যবহারকারী দেশ। ফ্রি ট্রেড জোন হলে তুলা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, শিল্পাঞ্চল থাকায় এ জোন চট্টগ্রামে হওয়া যৌক্তিক। বন্দরে ইউএস এইডের অর্থায়নে রেফার কনটেইনার ইয়ার্ড ও কোল্ড স্টোরেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আধুনিক পোর্ট ইকোসিস্টেম, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এটিকে বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগ কাজ ডি-নথি পদ্ধতিতে সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডি-নথির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পেনশনভোগীদের পেনশন নথিসমূহ ডিজিটাল আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত কাজটি চালু হয়েছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি ক্রয় সম্পাদনের লক্ষ্যে ক্রয় সংক্রান্ত কাজ ই-জিপিতে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া যাতে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক এবং বৈষম্যহীন হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নানাবিধ পদক্ষেপ
চট্টগ্রাম বন্দরের ভৌত ও প্রযুক্তিগত কাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে নতুন কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ, রাসায়নিক সংরক্ষণের জন্য আধুনিক শেড নির্মাণ এবং কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ২৮৫০ মিটার রেভেটমেন্ট কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তিনি জানান, এছাড়াও বন্দরে মোবাইল ক্রেন, হেডি ট্রাক্টর, লো বেড ট্রেইলার ও মাল্টি হ্যান্ডলারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে বন্দরের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি জানান, বে টার্মিনাল হলে টানেলের ব্যবহার বেড়ে যাবে। ৬৬৩ জনকে পদোন্নতি এবং ৩৬৩ জন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বন্দর যাতে ব্যবহারবান্ধব হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে বন্দরের কার্যক্রম চলমান আছে। গত ২০ এপ্রিল বে-টার্মিনালের ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। গত বুধবার বে-টার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বে-টার্মিনাল প্রকল্প আগামী ২০২৯-২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ-১ (দুটি জেটি নির্মাণ)-এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্ঠান পেন্টাওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও টোয়া করপোরেশনের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ২২ এপ্রিল। এটি দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে। বে-টার্মিনাল হয়ে গেলে টানেলে যানবাহন চলাচল বাড়বে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও জানান, ১৬ মিটার ড্রাফট মেইনটেইনের উপযোগী দুইটি ড্রেজার কিনবে বন্দর। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা প্রকল্পে নানাভাবে সহায়তা করছে চট্টগ্রাম বন্দর। বহির্নোঙরে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকছে এনসিটির মালিকানা
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনালের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সবচেয়ে বড়। প্রায় ৪৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ জেটির এই টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হয়। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের হস্তক্ষেপে টার্মিনালটি আট বছরেও পুরোপুরি চালু করা যায়নি। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনালে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জেটি ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া দেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনা করছে। তবে টার্মিনালটি এখন নতুন করে বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

তবে সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টিকে পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন বন্দরের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, এনসিটির মালিকানা আমরা কাউকে দিয়ে দিচ্ছি না, মালিকানা আমাদেরই থাকছে, শুধুমাত্র টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগ করছি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এনসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) ও সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) দিয়ে দেয়ার একটা কথা বলা হচ্ছে। যে কথাগুলো বলা হয়, এগুলো আসলে বিভ্রান্তিকর কথা। আমরা এনসিটির মালিকানা কাউকে দিয়ে দিচ্ছি না। আপনি যদি একটা বিল্ডিং বানান, যদি সেটা ভাড়া দেন, এটাও ঠিক ওরকমই। মালিকানা আমাদেরই থাকছে, আমরা শুধু তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) টার্মিনালের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ করছি, যেমনটা আমরা পিসিটিতে (পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল) করলাম।’

‘তারপর বে-টার্মিনালে যেটা হবে, সিসিটি-ওয়ান যেটা হবে, সেটা করবে সিঙ্গাপুর। সিসিটি-টু করবে ডিপি ওয়ার্ল্ড (দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান)। ঠিক একইভাবে এনসিটির জন্য গভর্নমেন্ট লেভেলের নির্দেশনা অনুযায়ী যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুসারে কাজ চলমান আছে। এটায় দুই দেশের কমিটমেন্ট অনুসারে কাজ চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এটার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও ওভাবে ফাইনালাইজ হয়নি। আমাদের ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার আছে, তাদের কাজ চলছে, তাদের প্রতিবেদন পেলে বুঝতে পারব।’

দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যা-ই করি না কেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করে, দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে করা হবে। আমরা এখানে যারা আছি, কেউই কিন্তু পার্মানেন্ট না। কাজেই আমাদের হাত দিয়ে যে কাজটা হবে, সেটা দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষ যেন উপকৃত হয়, রাষ্ট্রের যে স্বার্থ সেটা যেন নিশ্চিত হয়। সেটা নিশ্চিত করেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বিদেশি টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের সুবিধা বর্ণনা করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ফরেনারদের কাছে দেব, সেটা প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় দেব, আর্থিকভাবে আমরা যাতে সর্বোচ্চ বেনিফিটেড হই, সেভাবে দেব। দ্বিতীয়ত. এটার মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা নিশ্চিত হবে। তখন টার্মিনাল-টার্মিনালে কম্পিটিশন হবে। তৃতীয়ত. এটার মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি দ্রুত হবে। জাহাজের ভাড়া কমে যাবে, কনটেইনারের ভাড়া কমে যাবে।’

‘আমাদের টার্গেট হচ্ছে, ভবিষ্যতে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া কত কমানো যায় আর কত দক্ষতা বাড়ানো যায়। এজন্য ফরেন টার্মিনাল অপারেটরদের দিলে কম্পিটিশন বাড়বে, তারা কার্গো জেনারেট করবে এবং রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। এখান থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হবে, কোস্টাল কানেক্টিভিটি স্টাবলিশ হবে। নিজেরা করলে এসব অ্যাডভান্টেজ তো আমরা নিতে পারবো না। কিন্তু উনারা যেহেতু ইনভেস্ট করবেন, উনারা এটাকে আরও এফিশিয়েন্ট করার চেষ্টা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিং রেট যে হারে বাড়ছে, আমাদের কিন্তু ভবিষ্যতে কনটেইনারাইজেশনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত আধুনিক টেকনোলজি লাগবে। আমাদের সিসিটি-এনসিটিতে যে ইক্যুইপমেন্টগুলো আছে, সেগুলোর বয়স অলরেডি শেষের দিকে। অলরেডি ওভারডিউ হয়ে গেছে। এখন নতুন টেকনোলজি যদি আমাদের আনতে হয়, ইক্যুইপমেন্ট চেঞ্জ করে যদি নতুন আনতে হয়, তাহলে কী পরিমাণ টাকা লাগবে একবার চিন্তা করেন। একটা নরমাল কী গ্যান্ট্রি ক্রেনেই তো ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। সুতরাং আমাদের সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে