ব্রহ্মপুত্রের বুকজুড়ে চাষাবাদ
প্রকাশিতঃ 7:53 pm | February 24, 2018
আব্দুল মান্নান পল্টন, কালের আলো :
ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে ধু-ধু বালুচর। সেই বালু চরে কৃষক করছে চাষাবাদ। যত দুর চোখ যায় নদের বুক জুড়ে শুধুই সবুজের সমারোহ। বাম্পার ফলন উৎপাদনের আশায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝলক। আবার নদের পানি একেবারেই শুকিয়ে যাওয়াতে এপার-ওপারের কৃষকদের দৃঃচিন্তারও যেন শেষ নেই। নদের তলদেশে পানি না থাকায় ব্রহ্মপুত্রের এপার ওপারের সেচ নির্ভর কৃষকরা মহাসঙ্কটের আশঙ্কা করছেন।
স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্যে, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের অধিকাংশ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল ৭ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশন্ত। আসামের ধুবড়ি থেকে নেমে দক্ষিণ-পূর্বমুখী কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে ফুলছড়ি, হরিচন্ডি, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ি এলাকার যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ।
সেখান থেকে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, জামালপুর সদর, ময়মনসিংহ জেলা সদর। ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, নান্দাইল, গফরগাঁও, কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর, কটিয়াদি, কুলিয়ারচর, ভৈরব উপজেলার প্রায় ২৫০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ভৈরবে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে।
সেই উত্তাল নদকে ঘিরে প্রাচীণ আমলে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল নৌ-বন্দর ও বানিজ্য কেন্দ্র। যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য সৈন্য ও গোলাবারুদ এই নৌপথেই আনা নেওয়া হতো। এর শাখা প্রশাখাগুলোও ছিল প্রবল খরস্রোতা। কিন্তু কালের বিবর্তনে অধিকাংশ শাখা নদীর চিহ্ন পর্যন্ত এখন আর নেই।
তিব্বতের কৈলাস পর্বতের হিমশীতল জলপ্রবাত,মানস সরোবরের নীলপদ্ম বিধৌত জলরাশি ও চেমাইয়াং ডং হিমবাহের স্রোতে সৃষ্ট প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। নদের তলদেশে পানি না থাকায় ব্রহ্মপুত্রের এপার ওপারের সেচ নির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহাসঙ্কটে।
ব্রহ্মপুত্র নদের কূল ঘেষেঁ উত্তর-দক্ষিণে ১৬ কিলোমিটার পূর্ব পশ্চিমে সাড়ে ৮ কিলোমিটার আয়তনের ১২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহের উপজেলা গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়ন। সেই দূর্গম চরআলগী ইউনিয়নের বসবাসরত ৭০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। চরআলগীবাসীর শত বছরের লালিত স্বপ্ন ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেত ু নির্মাণ, দুর্গম চরে পাকা রাস্তা ও বিদ্যুত।
২০১৩ সালে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে আওয়ামীলীগ সরকার। সেতুটি নির্মানের স্বপ্নদৃষ্টা ছিলেন ময়মনসিংহ আ’লীগের অবিসংবাদিত নেতা গফরগাঁওয়ের আমৃত্যু এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। প্রয়াত আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ পুত্র গফরগাঁওয়ের জনপ্রিয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের প্রচেষ্টায় সেতুটির নাম করন করা হয় আলতাফ গোলন্দাজ সেতু।
পাশাপাশি দুর্গম চরের অন্তত ২০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়। বেশকটি পাকা রাস্তার নির্মাণ করা হয়। অবকাঠামোগত অমুল উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে চরআলগী ইউনিয়নের চালচিত্র। বর্ষা এলেই যে মানুষেরা উত্থাল পাতাল ঢেউ-এ ভিটে বাড়ী ফসলের জমি ভাঙ্গনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতো তারাই এখন নৌকায় চড়ে এগাঁও থেকে সেগাঁও, একচর থেকে আরেকচর ঘুরে বেড়ায়। তারা উপভোগ করে বৈঠার বারিতে ঢেওয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। প্রতিদিন হাজারো বিনোদন প্রেমী মানুষ সেতু এলাকায় ঘুরতে আসেন।
নদ শুকিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানা যায়, বিগত ৫০ বছরে কোন ড্রেজিং না হওয়ায় নদের তলদেশে পলি জমে বরাট হয়ে গেছে। ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না হলে চরম বিপর্যয় দেখা দিবে। অতিদ্রুত ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় পাড়ের বসবাসরত মানুষ।
এসব বিষয়ে স্থানীয় তরুণ সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল দৈনিক কালের আলোকে বলেন, আমার বাবা গফরগাঁওয়ের আমৃত্যু এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের প্রাণপ্রিয় চরআলগী ইউনিয়নের আমুল পরিবর্তন আনা হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং কাজ করানো হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে পাইলিং বাঁধ নির্মাণসহ চরআলগী ইউনিয়নবাসীর জন্য যা যা প্রয়োজন করা হবে।
কালের আলো/এএমপি/ওএইচ