আওয়ামী লীগের কাছে ৭০ আসন চায় শরিকরা!

প্রকাশিতঃ 4:41 am | February 25, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে আসন নিয়ে দরকষাকষি করতে চায় ১৪ দলের শরিকরা। এবার শরিকদের আসনের চাহিদা বেড়েছে। বিএনপিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার তাঁরা বেশি আসন দাবি করবে জোটের প্রধান দলটির কাছে।

এজন্য তাঁরা জোটের প্রধান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এবার জাতীয় পার্টি ছাড়া শুধুমাত্র অন্যান্য শরিকরাই ক্ষমতাসীনদের কাছে ৬০ থেকে ৭০ টি আসন দাবি করতে পারে, এমন তথ্য জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের একাধিক নেতা।

সূত্র জানায, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়াকার্স পার্টিসহ অন্যান্য শরিকরা আসন ওয়ারি নিজেদের প্রার্থীদের তালিকাও প্রস্তুত করছে। তবে শেষ পর্যন্ত জোটনেত্রী তাদের কতটি আসন দেন এ নিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শরিকদেরকে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে বর্তমানে ১৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)।

এর মধ্যে ন্যাপের একজন সংরক্ষিত, ওয়ার্কার্স পার্টির সংরক্ষিতসহ সাতজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ছয়জন, তরীকত ফেডারেশনের দু’জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) দু’জন রয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের সময় শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে ৬০টি আসন দাবি করে। ওই সময় তাদের দেওয়া হয় ১৮টি আসন।

সূত্র মতে, মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম.এরশাদ এককভাবে নির্বাচন করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার সব হিসাব-নিকাশ নির্ভর করবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কী যাবে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির গাঁটছড়া থাকলে দলটি কমপক্ষে ৭০ টি আসন দাবি করতে পারে।

সূত্র জানায়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, দলটির মহাসচিব এমএ আউয়াল, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারসহ ১৪ দলীয় জোটের কমপক্ষে ১০ জন শীর্ষ নেতাকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে তাদের পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

সূত্র মতে, নিজেদের আসন ছাড়াও শরিক দলগুলো আরো কমপক্ষে ৬০ টি আসন দাবি করবে জোট নেত্রীর কাছে। তারা কোন কোন আসনে ছাড় চায় এমন একটি তালিকাও তৈরি করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই তালিকা তুলে দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, শরিকদের দাবি করা আসনসমূহ এখন আ’লীগের সংসদ সদস্যদের দখলে রয়েছে। তবে শরিকরা বিশেষ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র নেতৃত্বাধীন জাসদ কমপক্ষে ২৫ টি আসনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু পুরোমাত্রায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি নিজ নির্বাচনী আসন কুষ্টিয়ায় যেভাবে সময় দিচ্ছেন ঠিক তেমনি তাঁর দলের প্রার্থীদের জন্যও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন। দলকে পুরোমাত্রায় সুসংগঠিত করছেন।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, যেসব আসনে আওয়ামী লীগের এমপিদের আমলনামা ভালো নয়, নানা কারণে তাঁরা চরমভাবে বিতর্কিত, কোন্দল ও বিভক্তি চরমে রয়েছে এমন আসন টার্গেট করছে জাসদ।

উদাহরণ দিয়ে দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে আ’লীগের ৫ বারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বিস্ফোরণমুখ অবস্থা তৈরি করেছে। এমনকি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কলেজে কুখ্যাত এক শিবির নেতাকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দিয়েছেন আ’লীগের প্রবীণ এ সংসদ সদস্য।

এ অবস্থায় সেখানে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দূয়ারে দূয়ারে কড়া নাড়ছেন মহানগর জাসদের সভাপতি সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। সম্প্রতি ফুলবাড়িয়ায় এক বিশাল জনসভা করে তাকে ১৪ দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন তথ্যমন্ত্রী। এ আসনটি আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের দখলে রাখতে ভোটের মাঠে সাড়া ফেলা মিন্টু ক্রমশও শক্তিশালী হয়ে উঠছেন বলেও মত দলটির নেতা-কর্মীদের।

একই রকম অবস্থা রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়াকার্স পার্টিসহ অন্যান্য জোটভুক্ত দলটির শীর্ষ নেতাদের। তারাও গতবারের চেয়ে এবার বেশি আসনে জোট প্রধান আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইছেন।

সূত্র জানায়, ১৪ দলের বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিন জোট নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয়নি। ১৪ দলের গতানুগতিক বৈঠকেও এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসাও সম্ভব নয়। নির্বাচনী কৌশল, আসন সমঝোতাসহ নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসবে।

এ কারণে জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেদিন জোটনেত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে সেদিনই এ সংক্রান্ত একটি ফয়সালা আসবে বলেও মনে করেন জোট শরিকরা।

জোট নেতারা কে কী বলছেন
১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদে আমাদের দলের ৭ জন এমপি আছেন। তারা সংসদ ও নির্বাচনী এলাকায় দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি আগামীতে আমরা আরো বেশ কয়েকটি আসন বেশি দাবি করবো।’

গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘আমরা প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের কাছে ১০টি আসন চাইব। সে অনুযায়ী তালিকাও প্রস্তুত করেছি।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন রায়হান দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘আসন নিয়ে আমাদের মাঝে এখনো কোন আলাপ হয়নি। তবে আমরা পুরোমাত্রায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি। জাসদ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। অনেক আসনে আমাদের প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। ফলে গতবারের চেয়ে আমাদের দাবি থাকবে আরো বেশি আসন।

কালের আলো/এসএম/এএ