জঙ্গি দমনে বিশ্বে ‘নজির’ বাংলাদেশ, বঙ্গকন্যার বিচক্ষণতায় সাফল্যে পুলিশ

প্রকাশিতঃ 7:48 am | April 27, 2019

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :

শ্রীলঙ্কার গির্জা ও অভিজাত হোটেলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ। এমন হামলার পর বাংলাদেশ কতটা শঙ্কামুক্ত এ নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধরনের সহিংস উগ্রবাদী হামলার কোনো তথ্য না থাকলেও আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেননি স্বয়ং সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সরকার দেশীয় জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লুকোছাপার কিছু নেই।

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি, তার পরও আশঙ্কা আছে। আমরা বিভিন্ন সময় তথ্য পাই, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।’ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বছর তিনেক আগের রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ইতিহাসের জঘন্যতম, নৃশংস ও নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনার ভয়ানক ও তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের।

আরো পড়ুনঃ দেশবাসীকে ‘সতর্ক’ প্রধানমন্ত্রীর, নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘বার্তা’ আইজিপির

বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমেই জঙ্গিবাদের ভয়াল সেই থাবা থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। আপন মহিমায় ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন বাংলাদেশকে।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন জাতির জনকের বাংলাদেশকে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জার্মানির পার্লামেন্টে শেখ হাসিনা সরকারের ভূয়সী প্রশংসাও হয়েছে।

দেশকে ভয়াল জঙ্গিবাদের উত্থানমঞ্চ বানানোর ষড়যন্ত্র থেকে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাশ টেনে ধরার নজিরবিহীন এ সাফল্যের নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। বিশ্ব পরিমন্ডলে উজ্জ্বল করেছে দেশের ভাবমূর্তি। বিশ্ব দেখেছে নতুন এক বাংলাদেশকে।

সরকার প্রধানের কঠোর নির্দেশে দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাগরণ তৈরি করেছে। পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুলে নিজের দেশকেই বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেন।

আরো পড়ুন: কঠোর পথে আইজিপি, মাদক ‘বিপর্যয়’ থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ?

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত পদক্ষেপের কারণেই জঙ্গিবাদকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই সফলভাবে জঙ্গি দমন করা সম্ভব হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, লংকানদের চেয়েও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিপূর্ণ নয় বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময়ে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ গোষ্ঠী মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো এবং বিভিন্ন মহল থেকে তাদের মদদ ও ব্যবহার করা হয়েছিলো।

কিন্তু এরকম নেতিবাচক ঘটনার পরও নিজেদের প্রচেষ্টাতেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আর এর মূল কারণ একটিই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে এখানে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব গণজাগরণের ফলশ্রুতিতে ঘৃণাভরে প্রত্যাখিত হয়েছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ।

দেশের অগ্রগতি ও নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বড় ধরনের অন্তরায় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে দেশের মানুষ ও পুলিশকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ২৮ জুন সংসদে সংসদ নেতা বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।

সরকারের আন্তরিকতা ও গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

চলতি বছরের পুলিশ সপ্তাহে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল। পুলিশ বাহিনী সক্রিয় থাকায় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।’

ইউরোপ, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক বড় বড় নাশকতার ঘটনা সামলাতে গলদঘর্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেখানে কয়েক বছরেই জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যকে বেশ ইতিবাচকভাবে দেখছে বিশ্ব মিডিয়া।

বাংলাদেশের এক সময় সমালোচনায় মুখর বিশ্বের বড় মিডিয়াদেরও বলতে হয়েছে, হলি আর্টিজানের পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর, জঙ্গিবাদও দৃশ্যত নিম্নমুখী। বিপর্যয় পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানো এমন দু:সাহসী বাংলাদেশের স্বপ্নই তো এতদিন দেখেছে শান্তিপ্রিয় ষোল কোটি মানুষ।

মাত্র কয়েক বছরেই রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা কীভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে বিভিন্ন সময়ে সেই বক্তব্যই উপস্থাপন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। জঙ্গি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দিন-রাত একাকার করে তিনি দেশের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছুটেছেন।

একই সঙ্গে নিজ বাহিনীর সদস্যদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শিকার হচ্ছে।

তারা আমাদের কাছে জানতে চায় এতো দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ কীভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।’

কীভাবে এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে তাঁর ব্যাখ্যাও দেন পুলিশ প্রধান। ঠিক দুই মাস পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ আয়োজিত একই রকমের সমাবেশে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকাকে ‘বিশ্বের কাছে বিস্ময়’ বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ আমরা যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, তা বিশ্বের অনেক দেশের জন্য শিক্ষনীয়। আমাদের শক্তির উৎস হলো আমাদের জনগণ। কারণ, জনগণই জঙ্গিবাদ বিষয়ে তথ্য দিয়ে, ধরিয়ে দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

সেদিন আইজিপি আরো বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সেইসব রক্তক্ষয়ী যোদ্ধা যারা হোলি আর্টিজনে প্রাণ দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন অকুতোভয় যোদ্ধাকে হারিয়েও আমরা থেমে যাইনি।

আপনাদের সবার সহযোগিতায়, জনগণের সহযোগিতায়, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতায় আমরা তাদেরকে রুখে দিয়েছি।’

অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ নাগরিক অধিকারের প্রায় সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেল। কিন্তু এ উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় জঙ্গিবাদ। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন একজন শেখ হাসিনা।

জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব গোটা বিশ্বেই প্রমাণিত ও প্রশংসিত হয়ে উঠেছে। জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

বঙ্গবন্ধু’র জ্যেষ্ঠ কন্যার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রাখা, নির্লোভ ও সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেন, দেশ বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে।

বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশকে এখন নিরাপদ জায়গায় নিয়ে এসেছি।

জঙ্গিরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য কাউন্টার টোরোরিজম ইউনিট এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটসহ পুলিশের বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত শাখা খোলা হয়েছে।

জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যে সক্ষমতা থাকা উচিত, তা আমরা অর্জন করেছি। প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং (ইন্টেলিজেন্স নির্ভর) নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে কাজ করছি। ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমেই জঙ্গি ও আগুন সন্ত্রাস দমন করেছি।’

‘যেভাবে ১৯৭১ সালে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। হলি আর্টিজানে হামলার খুব অল্প সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, যেভাবে ১৯৭১ সালে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।’ সগর্বে এমন বক্তব্য কেবল পুলিশ প্রধানের মুখেই মানায়।

কালের আলো/এইকেএ/এএএমকে