১৫ বছরে যা পারিনি, ১৫ মাসে তা করেছি : আইসিটি মন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 8:07 pm | April 27, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
গেল ১৫ বছরে যা করতে পারেননি, মন্ত্রী হওয়ার পর ১৫ মাসে তা করেছেন বলে দাবি করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘এটা ক্ষমতার বাড়তি সুযোগ। এই বাড়তি ক্ষমতাটা কাজে লাগানো যায়। এছাড়া গত ১৫ মাসে যা শিখেছি গত ৫০ বছরেও তা শিখতে পারিনি।’
শনিবার(২৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে ‘ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড ইন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি’ (আইডিয়া) প্রজেক্ট এবং তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ইয়াং বাংলার যৌথ উদ্যোগে ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ : চ্যাপ্টার ওয়ান’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে এসব কথা বলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, আইডিয়া প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সৈয়দ মজিবুল হক, ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতসহ আরো অনেকে।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে যে শব্দ প্রচলিত ছিল তা হচ্ছে ‘বটমলেস বাস্কেট’ অর্থাৎ তলাবিহীন ঝুড়ি। বাস্তবেও কিন্তু তা ওইরকমই ছিল। এ কথাটি বলেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তখন মনে হয়েছিল যদি পারতাম কিসিঞ্জারের গালে একটা থাপ্পড় দিতাম। যদিও আমার হাতটা তখন ছোট ছিল। ঠিক এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। ১৯৭২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ১২০ ডলার এবং শিক্ষার হার ছিল মাত্র ২৩ ভাগ। কিন্তু ২০১৯-তে এসে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতির সাথে তুলনা করে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং বর্তমানে তা কমে ২৩ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। অন্যদিকে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের এক টাকায় ভারতের ২টাকা পাওয়া যেত। এখন বাংলাদেশের ১ টাকায় পাকিস্তানের ২টাকা পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত এমনকি প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এখন সকল ধরনের সূচকে এগিয়ে আছে।
মন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ডে ডব্লিউএসআইএস (ওয়ার্ল্ড সামিট অন দি ইনফরমেশন সোসাইটি)-এর ফোরামে অন্য দেশের মন্ত্রীরা আমার পিএসের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়িয়েছে শুধুমাত্র আমার সাথে ৫ মিনিট কথা বলার জন্য। বাংলাদেশে কিভাবে পরিবর্তনটা হয়েছে তা জানার জন্য। কমপক্ষে ৮-১০টা দেশের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। তারা অনুরোধ করেছে তাদের সরকারকে গিয়ে বুঝানোর জন্য কিভাবে ডিজিটালাইজন করা হয়। এটি বাংলাদেশের জন্য গর্ব করার বিষয়।
বাংলাদেশের পূর্বে ‘ডিজিটাল’ শব্দ সারা দুনিয়ার কেউ উচ্চারণ করেনি উল্লেখ করে আইসিটি মন্ত্রী বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন, ইন্টারনেট নির্ভর রেভ্যুলেশনসহ তিনটা রেভ্যুলেশন মিস করলেও ডিজিটাল রেভ্যুলেশনের নেতা আমরা। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার।
আমাদের দেখাদেখি পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদেরকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটাতে চাচ্ছে। এদেশের অর্থনীতি আগে কৃষিতে নির্ভর ছিল। কিন্তু বর্তমানে দিন দিন আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হচ্ছি। বাংলাদেশে যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার হয় তার ৯০ ভাগ এদেশেই উৎপন্ন হয়। আমাদের উৎপাদিত টেলিভিশন এখন জার্মানিতেও রপ্তানি হয়।
তিনি আরো বলেন, খুব শিগগিরই দেশের সকল টিভি চ্যানেলকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে। আসুস, ডেল এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশেই পণ্য উৎপাদন করতে বাধ্য করা হবে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বয়সের কোটা বাড়িয়ে চাকরি হবে না। বর্তমানে চাকরির যেসব ক্ষেত্র রয়েছে ভবিষ্যতে ৮০ ভাগ ক্ষেত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং পেশায় টিকে থাকতে হলে এবং উন্নত করতে হলে ডিজিটাল দক্ষতা থাকতে হবে। এতোদিন শক্তিটা কায়িক শ্রমের উপর নির্ভর থাকলেও তা এখন মেধার উপর নির্ভরশীল।
মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যত পৃথিবী তোমাদের। কোন কিছু শুরু করতে আইডিয়ার অভাব হয় না। শুধুমাত্র প্রচলিত ধারণার সাথে নতুন কিছু যোগ করলেই হয়। তবে এসব আইডিয়া যেন জনগণের কল্যাণে হয় এবং এ থেকে যেন আয় হয়। অর্থাৎ আইডিয়াকে পণ্য বা সেবায় রূপান্তর করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশের আটটি বিভাগের ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলবে ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ : চ্যাপ্টার ওয়ান’-এর কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে ৩টি দল বাছাই করা হবে। এই ১২০ দল নিয়ে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হবে সাভারে।
সেখান থেকে দর্শক এবং বিচারকদের ভোটে বাছাই করা হবে মূল প্রতিযোগিতার ৩০ স্টার্টআপ। আইডিয়া প্রকল্পের বাছাই কমিটি এবং অন্য বিচারকদের সাহায্যে ১০ স্টার্টআপকে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই দলগুলো নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ ও পরামর্শসহ যাবতীয় সহায়তা পাবে আইডিয়া প্রজেক্ট থেকে।
কালের আলো/এমএইচএ