৮০ হাজার কিন্ডারগার্টেনকে বাগে আনতে উদ্যোগ নেই
প্রকাশিতঃ 7:19 pm | February 28, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
নিয়ম নীতির বাইরে থাকা দেশের প্রায় অর্ধ লাখ নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলকে বাগে আনতে কোন উদ্যোগ নেই। কয়েক বছর আগে জোরেশোরে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও উদ্যোগ কার্যত বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে এই স্কুলগুলোর সঠিক সংখ্যাসহ সব ধরণের তথ্য সংগ্রহ, করণীয় নির্ধারণ ও সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত টাস্কফোর্সও নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
সূত্র মতে, কয়েক বছর আগে এসব বিদ্যালয়ের নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন বলতে গেলে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কোন সাড়া নেই। এছাড়া কিন্ডার গার্টেন ও সমমানের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ সরকারের টাস্কফোর্স গঠনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে এ স্কুলগুলোর আরো দীর্ঘ সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা জারি করা হয়। পরে কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের আগষ্ট মাসে নিবন্ধন ফি ও ভূমির পরিমাণ কমানোসহ ৯ টি বিধি সংশোধন করা হয়। এরপর প্রথম সাত মাসে নিবন্ধনের জন্য বিদ্যালয়গুলোকে আবেদন করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এরপর এ বিষয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য করেনি মন্ত্রণালয়।
অর্থাৎ, বিধিমালা জারির পর বছর বছর পেরুলেও এই স্কুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে অবশ্য এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সারা দেশে বিধিমালা উপেক্ষা করে বেসরকারি উদ্যোগে এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং নিয়ম-বহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, বিভিন্ন ফি নির্ধারণ, প্রযুক্তি ব্যবহার ও পাঠ্যবই অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না। ফলে পাঠ্যবইয়ের আধিক্যে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে।
পরে টাস্কফোর্সের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোর দায়িত্ব অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় পরিচালিত নার্সারি, প্রিপারেটরি, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠার অনুমতি বা নিবন্ধন সংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা ও বিদ্যালয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করা, পাঠদান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, আর্থিক কার্যক্রম, ছাত্রছাত্রীর ভর্তিসহ বিভিন্ন ফি নির্ধারণ ও আদায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয় যাচাই করা এবং করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ তৈরি করে বছর কয়েক আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যমান কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন সমিতির হিসাবে দেশে নিবন্ধনের বাইরে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে ছাত্রছাত্রী আছে দেড় কোটিরও বেশি। শিক্ষক আছেন প্রায় ৮ লাখ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন দুই লাখ। যদিও সরকারের আনুমানিক হিসাবে এসব বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপের তথ্যানুযায়ী দেশে ১৬ হাজার ১৭৯ টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এগুলোতে অধ্যয়ন করছে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থী। শিক্ষক আছেন ৯৩ হাজার ৭৯৯ জন।
কালের আলো/এসআর/এমএ