আনিসুল হকের মতোই কী মেয়র পেয়েছে উত্তরের নাগরিকরা?

প্রকাশিতঃ 10:08 am | May 13, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বহুমাত্রিক মানুষ ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। সফল ব্যবসায়ী, সাহসী নেতৃত্বগুণ, আত্মবিশ্বাস আর কাজ পাগল মানসিকতার কারণেই নগরবাসীর মনের ক্যানভাসে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর মৃত্যুতে সর্বগ্রাসী শুন্যতায় অভিভাবকহীন হয়েছিলো ঢাকা উত্তর। আর এ শুন্যতা পূরণে মানবিকতা ও উচ্ছ্বলতায় পরিপূর্ণ আরেকজন মানুষকেই বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অকৃত্রিম ব্যবহার, স্বপ্নবাজ, স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আনিসুল হকের মতোই কথার চেয়ে তাঁর কাছে ‘অ্যাকশনই’ পছন্দ। সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার মানসিকতায় তাঁর প্রতিও উত্তরের বাসিন্দাদের মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার শক্ত বন্ধন তৈরি হচ্ছে। গৎবাঁধা বৃত্তে বন্দি ডিএনসিসিকে নিজের উদ্যোগ আর তাগিদে বের করে আনতে প্রয়াস নিয়েছেন।

কার্যত ঢাকা উত্তরকে আধুনিক নগরীতেই রূপ দেওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ যেমন নিজেই তদারকি করছেন তেমনি ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন এবং বেদখল হওয়া খালসহ বিভিন্ন জলাধার পুনরুদ্ধারেও মনোযোগী হয়েছেন।

রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে নগরীর প্রতি নিজের মমত্ববোধ থেকেই মানবিক, গতিশীল, সবুজ, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও ছায়াশীতল ঢাকা উপহার দিতে রাত-দিন ব্যস্ততাকে সঙ্গী করেছেন।

আরো পড়ুন: চ্যালেঞ্জের মুখে মেয়র আতিকুল ইসলাম?

বর্ষার আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তরের বেদখল হওয়া খালসমূহকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে উত্তরার শায়েস্তা খান এভিনিউ, আশকোনা সড়ক, বনানীর মেট্রোরেল প্রকল্প এবং বাড্ডার সুতি খাল পরিদর্শন করে নিজের উপলব্ধি থেকেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দেখেছি খাল দখলের কারণে মানুষের কী দূর্বিষহ ভোগান্তি হচ্ছে।

এখন সময় এসেছে যে, নগরবাসী একটি সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরে ভোগান্তি, দুর্ভোগ ছাড়া বাস করবেন। আমি কোনো অজুহাত শুনবো না। প্রয়োজনে আমি খালে নেমে খাল খনন করবো। যেখানে আটকে যাবেন, পারবেন না; আমাকে বলবেন।’

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার বনানীর এফ আর টাওয়ার পরিদর্শন করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের এখন আর কথা বলার সময় নয়, অ্যাকশনের সময়। আমরা অ্যাকশনে বিশ্বাস করি।’

আরো পড়ুন: জনপ্রত্যাশা ও জনস্বার্থ ভিত্তিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার মেয়র আতিকুল ইসলামের

প্রতি রমজানেই দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয় মধ্যবিত্ত থেকে সব শ্রেণির মানুষকে। কোনমতেই নিয়ন্ত্রণ থাকে না বাজার। এমন অবস্থায় নিজেই বাজারে বাজারে আকস্মিকভাবে হানা দিচ্ছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

পবিত্র রমজানে ভেজালমুক্ত, সঠিক ওজনে এবং কম দামে পণ্য বিক্রয় করার জন্য ব্যবসায়ীদের যেমন আহ্বান জানিয়েছেন তেমনি সিয়াম সাধনার এ মাসে ধর্মীয় ও নৈতিকতার দিক থেকে হলেও ব্যবসায়ীদের সৎভাবে ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র কয়েকটি মুদি দোকানে গিয়ে মূল্যতালিকা প্রকাশ্যে রাখা আছে কিনা যাচাই করেন। মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে দাম যাচাই করেন।

একটি গরুর মাংসের দোকানের একপাশে ৫২৫ টাকা, অপরপাশে ৫৫০ টাকা দেখতে পেয়ে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন। এ সময় জরিমানাও করা হয়।

পরিদর্শনকালে টাউনহল বাজারের পেছনে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

একদিনের এ তৎপরতায় বসে নেই মেয়র আতিকুল ইসলাম। রোববার (১২ মে) বেরিয়ে পড়েন মহাখালীর কাঁচাবাজার পরিদর্শনে। এখানেও মেয়র কয়েকটি মুদি দোকানে মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে রাখা আছে কী না এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কী না যাচাই করেন। নির্ধারিত দামেই মাংস বিক্রি হওয়াতেও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মেয়র এদিন জোর দিয়ে বলেন, আমি বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য কাজ করছি। আমি এসেছি কয়েক মাস হলো। আমি সবকিছু বোঝার চেষ্টা করছি। মার্কেটের প্রতিনিধি যারা আছেন তাদেরকে আমি মনিটরিং করার চেষ্টা করবো। ৫ টি বাজার মনিটরিং টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

মেয়র আতিকুল ইসলাম সোজাসাপ্টা কথা বলেন। তদারকির অভাবে কাজের গতি শ্লথ এমন প্রবণতার বিরুদ্ধে তিনি পথ চলছেন। ডিএনসিসিকে তিনি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাচ্ছেন। ঘুষ, দুর্নীতি এবং লাল ফিতার দৌরাত্ন্য কমাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

সংস্থাটির প্রতি জনআস্থা তৈরিতেও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর অনেকেই ভেবেছিলেন, চিরতরেই যেন থেমে গেলো সমাধানযাত্রা। উত্তর ঢাকার অলিগলিজুড়ে শুন্যতা। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় এ মেয়রের মাঝেও আনিসুল হকেরই প্রতিচ্ছবি বলছিলেন, নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক।

তিনি বলেন, অভিভাবকের মতোই কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখে চলেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাঁর কথাতেও আছে ভিন্ন মেজাজ, বৈচিত্র্য এবং নতুনত্ব। স্বল্প সময়েই তাঁর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শীতায় মুগ্ধ হয়েছি। কর্মচঞ্চল, উদার ও সদা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটিই পারবেন সত্যিকারের নিরাপদ ও আধুনিক ঢাকা উপহার দিতে।’

কালের আলো/এএ