বিবাহিত সোহানী তিথি ও আঞ্জুমান অনু কীভাবে ছাত্রলীগের কমিটিতে?

প্রকাশিতঃ 5:08 am | May 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

সত্যিই তাঁরা সৌভাগ্যবান। বিয়ে করছেন, ঘর সংসার সামলাচ্ছেন। এরপরও তাঁরা অদৃশ্য শক্তির জোরে জায়গা করে নিয়েছেন ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

তারা স্বয়ং বিপাকেই ফেলে দিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে। বিতর্ক তুঙ্গে থাকা এই দুই নারী নেত্রী হলেন- সোহানী তিথি ও আঞ্জুমান আরা অনু। তাঁরা দু’জনই ঘোষিত কমিটিতে সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন।

আরো পড়ুন: ছাত্রলীগের হামলার নেতৃত্বে ৫ নেতা, নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে শ্রাবণী শায়লাকে!

তাদের মতোই একই কায়দায় পদ হাতিয়ে নিয়েছেন নতুন কমিটিতে সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদ পাওয়া আফরিন সুলতানা লাবণী, সহ-সম্পাদক পদ পাওয়া সামিহা সরকার সুইটি। তাঁরা যেমন বিবাহিত তেমনি কমিটির আরেক সহ-সভাপতি ইশাত কাসফিয়া ইরাও বিবাহিত বলেও অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিয়াকৈরের সফিপুর এলাকার আবদুস সবুর সরকারের মেয়ে সামিহা সরকার সুইটি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর থেকেই তিনি ওই কমিটিতে নিজের জায়গা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন।

সর্বশেষ পূণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদ পাওয়ায় কালিয়াকৈর ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দেখা গেছে, বিবাহিত এসব নারী নেত্রীদের বিয়ের ছবি এখন ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিবাহিত হওয়ার পরেও মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিতর্কের পারদে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিলেন আফরিন সুলতানা লাবণী।

আরো পড়ুন: ‘ব্যর্থ’ শোভন-রাব্বানী, পদবঞ্চিত নারী নেত্রীদের ওপর ‘মধ্যযুগীয়’ হামলার নেপথ্যে কী?

আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার সাক্ষাত চান আহত ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীরা

ওই সময় তাঁর বিয়ের কাবিননামাও প্রকাশ্যে আসে। এরপরও শোভন-রাব্বানীদের হুঁশ না হওয়ায় নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনা হজম করতে হচ্ছে তাদের।

জানা গেছে, লাবণী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন লাবণী।

বিবাহিত হয়েও তিনি ২০১৮ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রথমে বিষয়টি অজানা থাকায় তিনি সেরা দশে জায়গা করে ‘বিহেভিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন।

গ্র্যান্ড ফাইনালে ‘তিনটি উইশ’ নিয়ে বিচারক ইমির প্রশ্নের হাস্যকর উত্তর দিয়েছিলেন লাবণী। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক ট্রল হয়।

অভিযোগ উঠেছে, নতুন কমিটির সহ-সম্পাদক আঞ্জুমান আরা অনু প্রশ্নফাঁসের সঙ্গেও জড়িত। গত বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইডেন কলেজ পরীক্ষার অন্যতম একটি কেন্দ্র হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর ওই সময়ে হলে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

অনু ইডেন কলেজের গণিত বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের ছাত্রী ছিলেন। ২০১৬ সালে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়। তারপরেও ওই বছরের ১ নভেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ পেয়েছিলেন।

আরো পড়ুন: শোভন-রাব্বানীর ‘গোমর ফাঁস’করলেন ছাত্রলীগ নেত্রী জেরিন দিয়া

২০১৭ সাল থেকেই এ ছাত্রলীগ নেত্রী সংসার জীবন শুরু করলেও এবার তিনি অদৃশ্য ক্ষমতার জোর দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে এসেছেন। বিবাহিত ও অছাত্র হওয়ার পরও ইডেন কলেজের রাজিয়া হলের ২০৪, ২০৬, খোদেজা হলের ৩১৪, ৩১৫, বঙ্গমাতা হলের ৩০৪, ৩১৫, ৭০৫, ৮১৯ ও ৮২১ নাম্বার হল দখল করে নিজের অনুগতদের সেখানে স্থান দিয়েছেন।

অবশ্য ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। এসবের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক যোগ্য মেয়ে থাকা সত্ত্বেও কেবল ইডেন কলেজ থেকেই সোহানী তিথি ও অনুসহ ৬ নারী নেত্রী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।

আরো পড়ুন: হামলায় আহতদের পাশে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত, বিচার চান হামলাকারীদের

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখি নামের একজন শোভন-রাব্বানীর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢুকেছেন। তিনি হয়েছেন সহ-সম্পাদক। মাত্র মাস কয়েক রাজনীতি করে সামিয়া সরকার নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তাঁর বাবা বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরও তিন বিয়ে হয়েছে বলে গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

কালের আলো/এএ