ধান লাগানোর পর কাস্তে দিয়ে নিজেই পাকা ধান কাটলেন এসপি

প্রকাশিতঃ 10:32 am | May 16, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক, নড়াইল:

বোরো মৌসুমে প্রায় ৩ মাস আগে জেলা পুলিশ লাইন্সের ২০ শতাংশ পতিত জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন পেশাগত কাজে সুনাম ও দক্ষতার পরিচয় দেয়া নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন পিপিএম। পেশাগত কাজের বাইরে এবার একজন সফল কৃষক হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করলেন এই পুলিশ কর্মকতা।

ধান লাগানোর পর এটি নিয়মিত পরিচর্যাও অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। সেই বোরো ধান পেকে সোনালী রূপ ধারণ করেছে।

এবার সোনালী ফসল ঘরে তোলার পালা, তাইতো কাস্তে হাতে নিয়ে পাকা ধান কাটতে শুরু করেছিলেন মঙ্গলবার (১৪ মে)। ধান কেটে নিজ হাতেই মাড়াইও করেছেন তিনি।

এ সময় পুলিশ সুপারের সঙ্গে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন, পুলিশ সুপারের ছেলে যশোর ইংলিশ স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজুম সালেহীন সামির ও মেয়ে নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিহা মুবাশ্বিরা রোজ, পুলিশ লাইন্স স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ।

পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ লাইন্সের অনাবাদি ২০শতাংশ জমিতে বোরো ধান রোপন করি। এ জমি গত ৩০ বছর যাবত অনাবাদি পড়ে ছিল। পুলিশ লাইন্সের কোনও জমি যাতে অনাবাদি ও পতিত অবস্থায় পড়ে না থাকে সে লক্ষ্যে জমিতে ধান চাষাবাদ করেছি। কৃষিকাজে আন্তরিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে অংশগ্রহণ করানো হয়।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, কোনও কাজ অবহেলা বা অবজ্ঞার নয়। এর আগে পতিত জমিতে শাক সবজির চাষাবাদ ও বৃক্ষরোপণ করেছি।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ চিন্ময় রায় বলেন, কৃষি বান্ধব পুলিশ সুপারের এ ধরনের কাজকে স্বাগত জানাই। তার এ কাজ অন্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।

জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি লাঙ্গলের গুটি হাতে, গরু দিয়ে ২০ শতক জমি চাষ করে ধান রোপণ করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। সেই সময় পুলিশ সদস্যদের তোলা হালচাষের ছবিগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের আলোচনায় উঠে আসে ‘কৃষিবান্ধব পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন’ এর কথা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শহরের দক্ষিণ নড়াইলে পুলিশ লাইন্সে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের পর প্রায় আট বিঘা জমি পতিত ছিল। জঙ্গল ও আগাছায় পূর্ণ ছিল বেশির ভাগ পতিত জমি। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার হিসেবে নড়াইলে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে পেঁপে, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও মরিচসহ শাক-সবজি লাগিয়েছেন তিনি।

এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০ আম গাছ লাগিয়েছেন। এ বছর গাছগুলোতে থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে আম। এছাড়া পুলিশ লাইন্স পুকুর, ট্রাফিক অফিস পুকুর ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পুকুরে গত বর্ষা মওসুমে রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৩ হাজার মাছের পোনা অবমুক্ত করেন তিনি। এসব মাছ পুলিশ লাইন্স মেসের পুলিশ সদস্যরা বিনামূল্যে খেয়ে থাকেন। এতে খাবার খরচ কম হচ্ছে মেসে খাওয়া পুলিশের সদস্যদের।

এছাড়া পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে ৩০ বছরের নর্দমা পরিষ্কার করে ‘পুলিশ মৎস্য অ্যাকুরিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এখানে দেশি প্রজাতির বিলের মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর চারিদিকে পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। শোভা পাচ্ছে হরেক রকম ফুল।

এদিকে পেশাগত কাজেও সুনাম ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ইতোমধ্যে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা, চরদৌলতপুর, পারমল্লিকপুর, সরুশুনা, বাড়িভাঙ্গা খাল, লাহুড়িয়া, কোটাকোল, কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া, যাদবপুর, রঘুনাথপুর, সদরের তারাশি, শড়াতলা, চৌগাছা, হোগলাডাঙ্গার বিরোধ মীমাংসাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫৩টি বিরোধ মীমাংসা করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় বা পুলিশের রেঞ্জ পর্যায়ে নড়াইলকে প্রথম মাদকমুক্ত জেলা ঘোষণার লক্ষ্যে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দ্বিতীয়বারের মতো ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’-সেবা (পিপিএম) পেয়েছেন তিনি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে এ পদক তুলে দেন।

কালের আলো/এএ