বঙ্গবন্ধুর ‘বিরল’ সেই ছবিতে বিমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 4:18 am | May 17, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
মা ও ছেলে। একটি ছবি। দুর্লভ সেই ছবি। পরিণত বয়সের ছেলের গালে মমতাময়ী মায়ের স্নেহের চুম্বন। মাতৃস্নেহের কাছে সময় কোন বিষয় নয়। আর হারানো দিনের ফ্রেমে বন্দি দুষ্প্রাপ্য এ ছবিতে প্রকারান্তরে কথা বলে ইতিহাস।
মা সায়রা খাতুনের আদরের খোকার এ ছবিটি জাতির জনকের জীবন থেকেই নেয়া।
ছবিটিতে সবাই যেমন একজন মায়ের প্রতিকৃতি দেখেন তেমনি খুঁজে পান মাতৃভক্ত এক সন্তানকে। এ যেন বিরল ছবিতে বিরল এক ভালোবাসা।
একান্ত পারিবারিক এ ছবিটি আবার ইতিহাসের দলিলও। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ বা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি পরিচয়ের বাইরেও মা ভক্ত বঙ্গবন্ধুরই দেখা মিলেছে এই ছবিতে।
বাঙালির গর্ব, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের গালে স্নেহের চুমু এঁকে দেওয়া মমতাময়ী মায়ের এ ছবিটি পুরনো, হারানোর দিনের। কিন্তু এর আবেদন চিরকালের।
আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত সেই স্মৃতির সামনে অপলক প্রধানমন্ত্রী, আবেগ উদ্দীপ্ত সেনাপ্রধান
এ ছবির দু’জনের কেউ আজ বেঁচে নেই। কিন্তু কী উজ্জ্বল জীবন্ত আজো তাঁরা!
সম্প্রতি রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্টের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দুর্লভ এ পেইন্টিং উপহার দেন সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ হিসেবে পরিচিত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ছবিটি থেকে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুকে তাঁর মায়ের আদর করার ফ্রেমে বন্দি পেইন্টিংয়ের মাঝে যেন পিতার স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চোখের পলকেই ছবিটি তাঁর অতীতকে যেন হাজির করে সামনে। দৃশ্যত প্রধানমন্ত্রী এ সময় ছিলেন বিমুগ্ধ।

একটি ছবি কখনো কথা বলে। কখনো ভাবায় আপনমনে। অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেয় ভীষণভাবে। মায়ের সঙ্গে জাতির আরাধ্য পুরুষের এ পেইন্টিং জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। কুড়িয়েছে প্রশংসা।
ওই সময় চিত্রগাথায় হয়তো প্রধানমন্ত্রী খুঁজে ফিরছিলেন বঙ্গবন্ধু আর দাদী’র মমতার সেই মুখ যেটি ক্ষণিকের জন্য তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল অতীতের ধুলো জমা পাতায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাস্নাত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথচলায় অনন্য ভূমিকা রাখা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের অসামান্য এ প্রয়াস ইতিহাসের মহানায়কের প্রতি তাঁর হৃদয় নি:সৃত আবেগ, শ্রদ্ধা আর নি:স্বার্থ ভালোবাসার এক অপূর্ব নিদর্শন বলেই মনে করছেন সবাই।
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ‘বিশ্বনেতা’ শেখ হাসিনা’র জন্য সেনাপ্রধানের এ উপহার যেন তাঁর প্রতি সম্মান ও অকৃত্রিম ভালোবাসারই উদাহরণ।
নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় বেদনায়-কান্নায়, দুমড়ে-মুচড়ে পড়া বাঙালির বুকের ভেতরটার মতো তাঁর হৃদয়েও সৃষ্টি হয়েছিল গভীর ক্ষত।
বিরল এ ছবিটি থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, জাতির পিতা ও তাঁর জননীর মুখচ্ছবি জুড়ে ছিল বাঙালির জীবন সংস্কৃতির এক পরম চিত্র। আর ক্যানভাসে ছিল মাতৃভূমি বাংলাদেশের সেই আবহ যেখানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সোনার মানুষের বিমূর্ত জীবনবোধ।
জাতির জনকের আদর্শের শ্বাশত হাতছানি, জীবন সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকবর্তিকা ধারণ করে পথচলা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে রেখেছে অনন্য ভূমিকা।
এর আগেও সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ এক স্মৃতিচিহ্নকে প্রথমবারের মতো আলোতে এনেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যার সামনে ৪৮ বছর আগের এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের ইতিকথার সাবলীল বর্ণনায় সেনাপ্রধান সকলের ভেতর এক অনন্য জাগরণ সৃষ্টি করেন।
১৯৭১ সালের সেই ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তখন তাতে সাড়া দেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় আত্নপ্রকাশ করে মুজিব ব্যাটারি। প্রথম আর্টিলারি ইউনিট। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ ইউনিট গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে, বলছিলেন সেনাপ্রধান।
নেত্রীকে তিনি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত মুজিব ব্যাটারী আর্টিলারী এখন ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা সেই ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী পরিদর্শনে গিয়ে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। অমূল্য এই স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে এটি সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক, সব সময় বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে তাঁর প্রথম সরকারের মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ডিফেন্স পলিসির অনুসরণে সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক ইউনিট।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম মেয়াদেও ফোর্সেস গোল ২০৩০এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে অনেক উল্লেখযোগ্য কাজের বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সরকারের তৃতীয় মেয়াদেও উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
কালের আলো/এইকেআ/এএএমকে