৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 5:13 am | May 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো : 

১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রায় ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে দিনটি ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। 

সেদিন শেখ হাসিনা লাখো মানুষের ভালোবাসার সংবর্ধনায় বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থানের কারণে তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। 

জাতির ইতিহাসের এ বিষাদময় ঘটনার সময় স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে স্বামী ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে  জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। 

পরে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ভারত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। 

দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি। 

একই সঙ্গে জনগণের গণতান্ত্রিক এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিরাম সংগ্রাম শুরু করেন। তারই উদ্যোগে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। দেশবাসীও উজ্জীবিত হয় নতুন প্রেরণায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বেই দলটি দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখলে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। 

মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকবার গৃহবন্দি হয়েছেন শেখ হাসিনা। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১১ মাস বিশেষ কারাগারে কারাবন্দিও ছিলেন তিনি। 

তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চারবার ক্ষমতাসীন হয়েছে। প্রথমবার ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন সরকার গঠন করে তারা। 

দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিশাল জয় পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিশাল বিজয় নিয়ে ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাট্টিক করেন শেখ হাসিনা। 

আবারো ক্ষমতায় আসীন করেন নিজ দল আওয়ামী লীগকে। টানা ৩৮ বছর সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী, উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে।

কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অনেক চড়াই-উৎড়াই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে এখনকার শক্ত অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।

সেদিন কী বলেছিলেন শেখ হাসিনা? 
১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়। 

সেদিন শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

‘পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। 

আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

এরপর থেকেই শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন করে সংগ্রামী পথ চলা। তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। 

তার নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। চার বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনবার ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। 

সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্বগুণ, মানবিকতা, বিচক্ষণতায় নিজেকে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন। তিনি এখন বিশ্বনেতা। 

কালের আলো/এমএইচএ/এএ