উন্নয়নশীল হয়েছি, উন্নত দেশের কাতারে নিতে হবে: শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 10:35 pm | May 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, গ্রাম থেকে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ যেনো উন্নত জীবন পায় আমরা সেটাই কামনা করি। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের সকলকে সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করি এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

মঙ্গলবার (২১ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘মাহে রমজান মাসে কোনো দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়। আমরা আপনাদের এইটুকু বলব, বাংলাদেশে সবসময় শান্তি- শৃঙ্খলা বজায় থাকে, বাংলাদেশের যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে তা যেন আমরা অব্যাহত রাখতে পারি। বাংলাদেশের একেবারে গ্রামের মানুষও যেন সুন্দর ও উন্নত-সুস্থ জীবন পায়, সেটিই কামনা করি। সে প্রচেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।’

স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র সাড়ে তিনবছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই সময়ে তিনি অসাধ্যকে সাধ্য করেছিলেন। যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের সেই উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে। আমরা আমাদের পিতাকে হারালেও জাতি হারিয়েছিল তাদের জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবনাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য জাতির পিতা সারাটাজীবন সংগ্রাম করেছিলেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন সেই স্বাধীনতার সুফলটা যাতে এদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পায়, শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায় উন্নত জীবন পায়, ধ্বংসের মাঝে যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন বাংলাদেশ গড়ে ওঠে সে প্রচেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। সেই আস্থা বিশ্বাস রয়েছে। সাধারণ মানুষ আমাদের ওপর যে, আস্থা বিশ্বাস রেখেছে সেটা যেন সবসময় অব্যাহত থাকে। একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জারি পিতার স্বাপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি।’

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা পুলিশ, র‌্যাব এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করতে সফল হয়েছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তি ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে গড়ে ওঠুক সেটিই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য সব চেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি। যেন বাংলাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থেকে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে।’

ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অতিথিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রচণ্ড গরমেও আপনারা গণভবনে এসেছেন। গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে আপনাদের পদার্পণে। সে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দোয়া করবেন যেন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলদেশ হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে পারি। এরইমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের মানুষ সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, সেই কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক তোয়াব খান, কৃষিবিদ ড. মির্জা আবদুল জলিল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ফুডবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন ছিলেন।

এছাড়াও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন প্রবীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল বাছেত মজুমদার, অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী আবদুস সবুর, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত,, বর্তমান উপচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, উপ-উপচার্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. মীজানুর রহমান, নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, মামুনুর রশিদ, পীযুষ বন্দোপ্যাাধ্যায়, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সনাল, স্বাচিপ নেতা অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ এমপি, ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরীসহ অনেকে।

এর আগে, বিকেল ৪টা থেকে অতিথিদের গণভবনে প্রবেশের সুযোগ পান। গণভবনের সবুজ লনে বিশাল প্যান্ডেলে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও প্রেস উইংয়ের সদস্যরা আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে ইফতার ভেন্যুতে আসেন।

কালের আলো/এমএম/এমএইচএ