বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা লাল-সবুজের পতাকার সুনামের স্মারক, বললেন সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 10:57 am | May 23, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
নিজের মেধা, কর্মযজ্ঞ এবং সৃজনশীলতার কারণে অসামান্য ও অদ্বিতীয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অসাধারণ মমত্ববোধেরও যেন প্রতিচ্ছবি তিনি।
বিশ্বের ৪০ টি দেশে ৫৪ টি পিস কিপিং মিশনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সফলতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
আরো পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে শান্তিরক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনালেন সেনাপ্রধান
গত ৩০ বছর যাবত বাংলাদেশ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করছে। বিস্তৃত এসব কর্মতৎপরতা লাল-সবুজ পতাকার সুনামেরও স্মারক বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যৌন নিগ্রহ ও এর অপব্যবহার রোধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিও উদাহরণ তৈরি করেছে, জানান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডার জেনারেল রবার্ট বি ব্রাউন’র আমন্ত্রণে হাওয়াই সফররত সেনাবাহিনী প্রধান মঙ্গলবার (২১ মে) মার্কিন অঙ্গরাজ্যের সবুজ দ্বীপ হাওয়াইয়ের রাজধানী হুনুলুলুতে অনুষ্ঠিত ‘ল্যান্ড ফোর্সেস অফ দ্যা প্যাসিফিক সিম্পাসিয়াম এবং এক্সপজিশন (লেনপেক) এ অংশগ্রহণ করেন।
আরো পড়ুন: হাওয়াইতে সিম্পোজিয়ামে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন কালের আলোতে
আইএসপিআর জানিয়েছে, এ সিম্পোজিয়ামে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত প্যানেল ডিসকাশনে প্রধান বক্তা হিসেবে ‘ল্যান্ড ফোর্সেস ইনক্রিজড ইন্টারোপেরাবিলিটি উইথ এলাইজ এন্ড পার্টনারস’ বিষয়বস্তুর ওপরও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।
প্রশাস্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জের নাম হাওয়াই। বলা হয়, এখন থেকে এক মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিরে জন্ম হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গরাজ্যের।
আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ‘বিরল’ সেই ছবিতে বিমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন সেনাপ্রধানের
আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি, পর্বত উপত্যকার জন্য হাওয়াই খ্যাত হলেও মূল আকর্ষণ সবুজাভ রেইন ফরেস্ট। এজন্য হাওয়াইকে সবুজ দ্বীপও বলা হয়। এর রাজধানীর নাম হুনুলুলু। আর এখানেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজ বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান ব্রতের বিষয়টিও বহুমাত্রিকতা, লাবণ্য ও প্রখরতায় মনোরম উপস্থাপনে তুলে ধরেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম অংশগ্রহণ করে ১৯৯০ সালে। এর মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে জনবলের হিসাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এতে করে প্রতিটি মিশন এলাকায় অনেক ভিনদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিকেই শান্তি অভিযানে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন সেনাপ্রধান
প্রতিটি মিশন এলাকায় উড়ছে অনেক রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের পতাকা। গর্বের প্রতীক এ শান্তিরক্ষীদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সেইসব দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, ‘ল্যান্ড ফোর্সেস ইনক্রিজড ইন্টারোপেরাবিলিটি উইথ এলাইজ এন্ড পার্টনারস’ বিষয় বস্তুর ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বলছিলেন সেনা প্রধান।
তিনি বলেন, শুধু শান্তি-শৃঙ্খলাই নয়; বঙ্গীয় ব-দ্বীপের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবোধেরও সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে শান্তিরক্ষীরা। বিশ্বের নানা প্রান্তের নাগরিকরা পরিচিত হচ্ছে এক ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান বাঙালি জাতির সঙ্গে।
বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের আন্তক্রিয়া বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলোকে বিস্তৃতভাবে উপস্থাপন করে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, এক সময় তিনি সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরো পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ ও সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযানের সূচনার ইতিকথা জানালেন সেনাপ্রধান
ওই সময় একটি ফিল্ড মিশনে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরণের উচ্চস্তরের জটিলতা সম্পর্কে জানার সুযোগ লাভ করেন তিনি।
দেশে ফিরে যখন তিনি আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন ওই সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে আনেন নিজের জবানীতে। অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এ সেনাপ্রধান জানান, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) এর উদ্যোগে বহুজাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাধে।
আরো পড়ুন: ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডারের আমন্ত্রণে হাওয়াই যাচ্ছেন সেনাপ্রধান
এর মূল লক্ষ্য ছিল মিশন এলাকায় সামরিক সদস্যদের পাঠানোর আগে তাদের দক্ষতা ও সংসক্তিপ্রবণতার উন্নতিকরণ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেই বিষয়বস্তুর ওপর বক্তব্যে জানান, কুয়েত পুনর্গঠনে গত ২৮ বছর যাবত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আরো পড়ুন: শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্য-অন্তরায়ের কারণ বললেন সেনাপ্রধান
এরপর থেকে বাংলাদেশ ও কুয়েত সরকারের মধ্যে ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন’ নামের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। একই সঙ্গে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও জানান সেনাপ্রধান।
তিনি জানান, সৌদি ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মাইন অপসারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দু’টি ব্যাটালিয়নে সেনা সদস্য মাইন অপসারণ কাজে নিয়োজিত হবে।
ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডারের সাথে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
হাওয়াই সফররত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডার জেনারেল রবার্ট বি ব্রাউন এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার (২২ মে) হুনুলুলুতে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে শান্তিরক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনালেন সেনাপ্রধান
সাক্ষাৎকালে তাঁরা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ড এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক বিভিন্ন বিষয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়া, সেনাপ্রধান রয়েল ব্রুনেই ল্যান্ড ফোর্স কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দাতো সেরি পাহল্ওয়ান আওয়াং খায়রুল হামেদ বিন আওয়াং হাজী ল্যামপোহ্ এর সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
কালের আলো/এইকেআ/এএএমকে