মেয়র হিসেবে আতিকের প্রথম ঈদ, বললেন অনেক অজানা কথাই
প্রকাশিতঃ 9:12 am | June 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে প্রথম ঈদ উদযাপন করলেন আতিকুল ইসলাম। স্বভাবতই এ ঈদুল ফিতর তাঁর কাছে বড় এক অভিজ্ঞতার।
একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উৎসবের এ দিনটি তিনি কীভাবে কাটান, অন্যান্যবারের সঙ্গে এবারের ঈদ কতটুকু পৃথক এসব বিষয়েই তিনি জানিয়েছেন চমক জাগানিয়া সব তথ্য।
আরো পড়ুন: অতি উৎসাহী সেই কর্মকর্তার জন্যই বিব্রতকর অবস্থায় মেয়র আতিক!
আবার নগর পিতা যে ঈদের দিনে ঘুমোতেই পছন্দ করেন, স্ত্রী-কন্যার বারণ সত্ত্বেও অকপটে স্বীকার করেছেন সেই কথাও। সেদিন না কী তাঁর চোখজুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে!
আবার গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ঈদ করায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ মিস হওয়াও আক্ষেপ ঝরেছে সফল ব্যবসায়ী থেকে সাহসী এ নগর সেবকের।
আরো পড়ুন: ফোক গানেও পারদর্শী মেয়র আতিকুল ইসলাম!
আবার একজন মেয়রকে যখন ঝাঁড়ু হাতে রাস্তায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে দেখা যায়, তখন অনেকের ভেতরই প্রশ্ন উঠে এ অভিজ্ঞতাও তাঁর নতুন কীনা? উত্তরের জননন্দিত নগর পিতা জানালেন, রাস্তায় ঝাঁড়ু হাতে নামার আগে বাসাতেই ঝাঁড়ু কিনে প্র্যাকটিস করেছেন।
আরো পড়ুনঃ উন্নয়ন কাজে কেন ভোগান্তি, প্রশ্ন মেয়র আতিকুল ইসলামের
একজন মেয়র আতিকুল ইসলামের না জানা অনেক বিষয়াদিই উঠে এসেছে ডিবিসি নিউজের ঈদের বিশেষ ‘সংবাদ সম্প্রসারণ’ অনুষ্ঠানের। ‘এক শো-তে দুই মেয়র’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন শারমিন চৌধুরী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনও ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি’র জনপ্রিয় মেয়র আতিকুল ইসলামের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো কালের আলো’র পাঠকদের জন্য।

ঈদের দিনে ঘুমোতেই পছন্দ
মেয়রের ঈদ কেমন কাটে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মেয়র হিসেবে অনেক এক্সাইটেড আমি। আমার আরো বেশি জ্ঞান লাগবে ঈদুল আযহা যখন হবে তখন। আমি দেখেছি আগের মেয়ররা কীভাবে কাজ করেছেন, সাঈদ খোকন কীভাবে কাজ করেছেন।
কিন্তু আমি মনে করি ঈদুল ফিতরের সময় হৈচৈ করবো। গান বাজনা করবো। আমি ঈদের সময় ঘুমাই, এটা আমার স্ত্রী ও মেয়ে পছন্দ করে না। মেয়ে বলে বাবা তুমি ঈদের সময় ঘুমাও কেন। কেন জানি এ সময় আমার রাজ্যের ঘুম আসে। সকালবেলাটা খুবই রিলাক্স ঘুমোতে পারি।
এবারের ঈদ আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতার। মেয়র হিসেবে প্রথম ঈদ করছি। অনেক বন্ধু স্বজনেরা আসবে। অতীতে শুধুমাত্র ঈদের সময় আমার ফ্যাক্টরির অনেক স্টাফ আছে তাদের সাথে যোগাযোগ হতো।
এখন বিজিএমইর কলিগদের ফোন করি, পলিটিক্যালি নেতাদের ফোন করি, এবার মেয়র হিসেবে আরো বড় পরিসরে ঈদ পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য আক্ষেপ
ডিএনসিসি’র মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এবার তো প্রধানমন্ত্রী দেশে ঈদ করবেন না। এটা খুব মিস করবো। আমি যতগুলো ঈদ করেছি, প্রতিবার ঈদে বিগত দশ বছর ধরে বড় আপার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে যেতাম। এটা খুব মিস করব, এটা ফাঁকা, ফাঁকা লাগবে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঈদ করতে পারছি না।

ঝাঁড়ু দেওয়ার প্র্যাকটিস বাসা থেকেই
সঞ্চালকের একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গেই বাসায় ঝাঁড়ু দেওয়ার অনুশীলনের কথা উচ্চারণ করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেয়রের জায়গায় এসেছি। বাসায় আমি মাঝে মাঝে ঝাঁড়ু দেওয়ার প্র্যাকটিস করেছি কয়দিন আগে।
উপস্থাপক এবার জানতে চান এভাবে- ‘আমি কিন্তু এই প্রশ্নটা জানতে চাচ্ছিলাম আপনাদেরকে দেখি রাস্তায় ঝাঁড়ু দেওয়ার কাজ করছেন, মশা মারার কাজ করছেন। এটা কি মেয়র হওয়ার পর প্র্যাকটিস করেছেন নাকি আগেও করতেন?
এর উত্তরে মেয়র আতিকুল ইসলামের সোজাসাপ্টা উত্তর- ‘যখন নমিনেশন পেলাম, তখন ফুলের ঝাঁড়ু কিনলাম। শলার ঝাঁড়ু কিনলাম।
পরিবর্তন করতে হবে মানসিকতার
মেয়র আতিকুল ইসলাম মনে করেন, মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে প্রত্যেককেই নিজেদের জায়গাটা নিজেকেই পরিস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের ঘরটা যেভাবে পরিস্কার করি, সেভাবে যদি নিজের আঙিনাটা পরিস্কার করি। তাহলে কিন্তু কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এখন আমরাই বাসার সামনে ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলে দিলাম যে, সিটি করপোরেশনের লোক এসে পরিস্কার করবে। কিন্তু কেন? আমার ঘরটা যেমন পরিস্কার আঙিনাটা তেমন রাখলেই পারি। আমরা বাস থেকে বোতল ফেলে দিচ্ছি, বাসা থেকে ময়লা ফেলে দিচ্ছি আবার সেইম লোকই বিদেশে গিয়ে কিন্তু সেভাবে ময়লা ফেলছি না।
জোর দিয়ে এ নগর পিতা বলেন, ‘এই যে আমাদের পারসেপশনটা চ্যাঞ্জ করতে হবে। আমাদের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব কী? আমরা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হবো, রেড লাইট জ্বললে থামবো। রেডলাইট আছে ট্রাফিকও আছে তারপরেও কিন্তু আমরা ক্রস করে চলে যাচ্ছি। এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
শহরটা অটোমেটিক্যালি অনেক সুন্দর হয়ে যাবে যদি..
অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কিন্তু বারবার বলি, আমার ইলেকশন ক্যাম্পেইনেও বলেছি, আমাদের দেশটা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আমরা বাইরে গেলে ময়লা ফেলিনা। কিন্তু যে দেশ মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন করেছেন। যে দেশে জাতির জনক শুয়ে আছেন সেই দেশে আমরা কিভাবে ময়লা ফেলছি?
উদাহরণ টেনে বলেন, রাস্তায় ফুটওভার ব্রিজ আছে, কিন্তু আমরা যাবো না সেখান দিয়ে। এই মানসিকতাটা যদি পরিবর্তন করা হয়, মানুষ যদি একটু সচেতন হয় তাহলে কি হয়, আমরা সবাই কিন্তু সেইফ থাকতে পারি। শহরটা কিন্তু অটোমেটিক্যালি অনেক সুন্দর হয়ে যায়।’
কালের আলো/এমআর/এএএমকে