চোখে পড়ে না সেইসব গ্রামীণ খেলা

প্রকাশিতঃ 1:25 pm | March 08, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:

শৈশবে ডাংগুলি খেলেননি এমন মানুষ নেহায়েতই কম। এখনকার শহুরে শৈশব জীবনের সঙ্গে একেবারেই অপরিচিত গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এ খেলা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এ খেলা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার দাপটে এ খেলার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।

গ্রাম-গঞ্জে খুব একটা চোখে পড়ে না গ্রামীণ জীবনে শৈশব মাতানো এ লোকজ খেলা। বাঙালির স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই সরকারিভাবেই ডাংগুলির মতো হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।

শুধু এ খেলায় নয়, ষড়ঋতুর প্রভাবে এদেশে রয়েছে ঋতু ভিত্তিক খেলাধুলার প্রচলনও। যেমন- বর্ষাকালে নৌকা বাইচ, গ্রীষ্মকালে ঘোড়দৌড়, গরুর গাড়ির দৌড়, শীতকালে গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার জমজমাট আড্ডা।

এছাড়া প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত খেলাগুলির মধ্যে রয়েছে- হাডুডু, বৌ-চি, দড়িলাফ, পাঁচগুটি, কানামাছি, এক্কাদোক্কা, সাতচাড়াষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, লুডু, মার্বেল, টোক্কাটুক্কি, হাড়িভাঙ্গা, কাঠিছোঁয়া, চোর ডাকাত, দড়ি টানাটানি, চেয়ার সিটিং, রুমাল চুরি, তৈলাক্ত বাঁশেউঠা, গুলতিছোড়া, ইচিংবিচিং, মাংসচোর, ওপেন্টি বাইস্কোপ, বস্তাদৌড়, বলিখেলা, বালিশ যুদ্ধ, কুতকুত, লাটিম খেলা ইত্যাদি। এ খেলাগুলি দেশের স্থানভেদে ও ঋতুভেদে চর্চা হয়ে থাকত নিয়মিত।

গ্রামীণ ক্রীড়া সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এসব খেলাসমূহ একদা গ্রামবাংলার ডানপিঠে, দুরন্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছিল জনপ্রিয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব খেলা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

অবশ্য প্রজন্মের মাঝে এ বিষয়টি ধরে রাখতে বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সংরক্ষণ, অনুশীলন, গবেষণা ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করতেই এগিয়ে এসেছে কান্ট্রি গেমস অ্যাসোসিয়েশন।

গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরসহ দেশের সকল অঞ্চলের জনগোষ্ঠির মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যগত ও লোকজ খেলাধুলাকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে এই সংগঠনটি। দু’বছর আগে বাংলাদেশ রুরাল গেমস ফেডারেশন নামে একটি ব্যানারের মাধ্যমে গ্রামীন খেলাধূলা রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বেশক’জন সংগঠক। তবে তা পূর্ণতা পায়নি। এবার সেই কাজটিই শুরু করেছে নতুন এই ক্রীড়া সংগঠনটি।

সংগঠনটির লক্ষ্য দেশের প্রতিটি বিদ্যাপিঠে লোকজ খেলাধূলাকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত করা। কারিগরি জটিলতা খুবই কম বিধায় গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে তারা। দেশীয় লোকজ ক্রীড়া চর্চার মাধ্যমে অন্য যে কোন আধুনিক খেলাধুলার ক্রীড়াবিদ সৃষ্টিতে অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ।

তার কথা, ‘হা-ডু-ডু খেলার পারদর্শীদের যেমন কাবাডি খেলায় সহজভাবে বাছাই করা যায়। তেমনি ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবলের ওয়ার্ম আপ গেম হিসেবে গোল্লাছুটকে কাজে লাগানো যেতে পারে। দাঁড়িয়াবাধা, শারীরিক ফিটনেস তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের মনে হয়, গ্রামীণ খেলাধুলা দেশের সকল আধুনিক খেলার পূর্বশর্ত হতে পারে।’

বাংলাদেশ রুর‌্যাল গেমস্ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষক ও রেফারি কোর্স আয়োজনসহ লোকজ খেলার বিকাশে দেশের ৩৩ জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করানো হয়েছিল। এবার ঐতিহ্যবাহী বাংলা লোকজ সংস্কৃতির খেলাধুলাকে সংগঠিত করে নিয়মিত অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা, গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বমানের ক্রীড়াশৈলী ও নিয়মনীতি তৈরী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস্ অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়েছে।

দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে দু’বছরের মধ্যে ২০০ প্রশিক্ষক ও ১০০ জন রেফারিকে প্রশিক্ষণ দেবে এই সংগঠনটি। এছাড়া নিয়মিতভাবে প্রতিটি জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে ১টি প্রতিযোগিতা আয়োজন, জাতীয় ক্রীড়া জাগরণের লক্ষ্যে পাঁচদিনের একটি লোকজ ক্রীড়া উৎসবের উদ্যোগ, প্রতি বছর বাংলার ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ লোকজ ক্রীড়া উৎসব আয়োজন, দু’টি সেমিনার ও ওয়াকর্শপ আয়োজন এবং পাঁচশ’জন দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি করবে তারা।

 

কালের আলো/ওএইচ