সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্বের প্রশংসায় প্রেসিডেন্ট ফাস্টিন

প্রকাশিতঃ 6:10 am | June 28, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বিশ্বের অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় দেশগুলোতে শান্তি স্থাপনে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। নিজেদের পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তে লাল-সবুজের পতাকার সম্মান আরো উজ্জ্বল করার পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের সফলতারও স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।

আরও পড়ুন: আন্ত:অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রস্তাব সেনাপ্রধানের

এরই ধারাবাহিকতায় নিজেদের জীবনবাজি রেখে মধ্য আফ্রিকার মহামুল্যবান খনিজ সমৃদ্ধ দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকেও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভয়-শঙ্কা ও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে জাতিগত বিরোধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পিছিয়ে পড়া এ দেশটির সাধারণ মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা।

ফলে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মানুষের জন্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসায় মেতেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফাস্টিন আর্চেঞ্জ তোয়াদেরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর বাঙ্গিতে নিজ সদর দপ্তরে দেশটিতে সফরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এমন প্রশংসা করেন।

সাক্ষাতকালে পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়েও তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নানা কৌশলে ও পেশাদারিত্বকে কাজে লাগিয়ে সেখানকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। এতে তাঁরা বেশ সাফল্যও পেয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ দরিদ্র দেশে সন্ত্রাসীদের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যমদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও সেখানকার জনসাধারণের কাছে তাঁরা আস্থার শেষ ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। দেশটির স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা শান্তিরক্ষীদের অনন্য অবদানের কথাই কৃতজ্ঞচিত্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে আলাপে উপস্থাপন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফাস্টিন আর্চেঞ্জ তোয়াদেরা।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র কালের আলোকে জানিয়েছে, সাক্ষাতকালে প্রথমেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।

সাক্ষাতে নিজ দেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফাস্টিন আর্চেঞ্জ তোয়াদেরা। তিনি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবানে সাড়া দিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য পাঠিয়ে শান্তিরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্যও বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

পাশাপাশি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট দেশটির অবকাঠামো, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান। তিনি তাঁর দেশের মানুষের জন্য বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন।

একই সূত্র আরো জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং’র মতো আরও ইউনিট সেখানে পাঠাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট দূর দেশ থেকে এসে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জনগণের জন্য জীবন উৎসর্গ করা বাংলাদেশী সৈনিকদের অবদানের কথাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে নিশ্চিত করেন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুস্কা) মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ও দীর্ঘ মেয়াদী সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফাস্টিন আর্চেঞ্জ তোয়াদেরাকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন।

এর আগে সেনাবাহিনী প্রধান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে পৌঁছালে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। তিনি মিনুস্কার এসআরএসজি ও ফোর্স কমান্ডারের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

গত বুধবার (২৬ জুন) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন (মিনুস্কা) এলাকা পরিদর্শন করতে তিনদিনের সরকারি সফরে ঢাকা ত্যাগ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। গুরুত্বপুর্ণ এ সফর শেষে আগামী ২৯ জুন তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে