আন্ত:অভিযান সক্ষমতা বাড়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রস্তাব সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 2:16 pm | June 28, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিগত সংঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারি মনোভাব, কর্তব্যপরায়ণতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ঘটনা গোটা বিশ্বেই নজির স্থাপন করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশের রাস্তাঘাট, স্থাপনা নির্মাণ ও চিকিৎসাসেবাতেও তাদের ভূমিকা অনুকরণীয়। 

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্বের প্রশংসায় প্রেসিডেন্ট ফাস্টিন

বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার অংশ হিসেবে ৬ লাখ ২২ হাজার ৯৮৪ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মানুষের মনে স্থায়ী আসন পেতে বসতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। দেশটিকে ঘুরে দাঁড়াতে নিজেদের অনন্য অবদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের সুনাম বাড়ানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ভাবমূর্তিও সমুন্নত করেছে লাল-সবুজের অকুতোভয় সাহসী সৈনিকেরা।

ফলে স্বভাবতই বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুস্কা) এসআরএসজি ম্যানকিওর এনদিয়ায়েক ও ফোর্স কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাল্লা কেইটা। 

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টসমূহের সেনাসদস্যদের পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পারদর্শিতা সম্পর্কে উঁচু মনোভাবের কথা জানান। 

৫৫ শতাংশ হীরা রপ্তানিকারক এ দেশ থেকে এখনো নানা কারণেই দারিদ্র্য দূর হয়নি। জাতিগত বিরোধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখানে মৃত্যুর মিছিল নতুন কোন ঘটনা নয়। অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানান সেবা দিয়ে দেশটির মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে অদম্য সেনা সদস্যরা।  

বিশ্বের ৪৫ তম বৃহত্তম এ দেশে জাতিগত সংঘাতে রক্তপাত নিয়মিত হলেও দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে গর্বিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র কালের আলোকে জানিয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুস্কা) এসআরএসজি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। 

এ সময় ফোর্স কমান্ডার মিশনে নিয়োজিত অন্যান্য দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। সেনাবাহিনী প্রধান তাঁকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি সেনাপ্রধান অতিরিক্ত মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিট এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন এ্যান্ড ট্রেনিং (বিপসট) এর অধীনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। এসআরএসজি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের তাদের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও মিশন ম্যান্ডেটে শক্তিশালী দৃঢ়তারও প্রশংসা করেন। 

পরে একই দিনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুস্কা) ফোর্স কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাল্লা কেইটার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ফোর্স কমান্ডারও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাগত আচরণ ও অভিযানিক সাফল্যের প্রশংসা করে অন্যান্য শান্তিরক্ষী দেশের সঙ্গে তাদের দক্ষতা ভাগ করার অনুরোধ জানান। 

সেনাপ্রধান অভিযানিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানা প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন এ্যান্ড ট্রেনিং (বিপসট) এর অধীনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। তিনি আন্ত-অভিযানের দক্ষতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশাল অর্জন, অবিচল চেষ্টা, উৎসর্গ, প্রণোদনা ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনের ফল হিসেবেও উল্লেখ করেন। 

এর আগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তিনদিনের সরকারি সফরে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফাস্টিন আর্চেঞ্জ তোয়াদেরার সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর বাঙ্গিতে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁর দেশের মানুষের জন্য বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন ও দীর্ঘ মেয়াদী সহযোগিতা দেবে তিনি তাকে জানান।  সেনাবাহিনী প্রধান মিনুস্কা ফোর্স সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২৬ জুন) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন (মিনুস্কা) এলাকা পরিদর্শন করতে ঢাকা ত্যাগ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। 

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে