মন্ত্রী হয়েও নিজেকে বদলাতে চান না সাধন চন্দ্র মজুমদার?
প্রকাশিতঃ 6:29 am | June 29, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
নীতিবান, নিষ্ঠাবান বা আদর্শবান শব্দগুলো যেন তাঁর সঙ্গে বেশ মানায়। ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতার মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন। মন্ত্রী হয়েও নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করেন না। ভাবেন অতি সাধারণ একজন। আবার বদলাতেও চান না একটুকুও।
আরও পড়ুন: ‘ক্লান্তিহীন’ খাদ্যমন্ত্রী, তাড়া নেই ঘুমোনোর!
তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন বলেই হয়তো নিজেকে এভাবে ‘নির্মোহ’ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সমকালীন রাজনীতিতে একেবারেই ব্যতিক্রম এমনই এক রাজনীতিক সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সরকারের এ খাদ্যমন্ত্রী মাসখানেক আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, মন্ত্রী হয়েও তিনি নিজেকে বদলাতে চান না। জনগণের জন্য কাজ করে তাদের বদলাতে চান। সফলতার সঙ্গেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে চান।
মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বদলে যান অনেকেই। মানুষের জীবন যাত্রার মান বদলে দেওয়ার জন্য তাকে মন্ত্রী করা হলেও নিজেই বদলে যান। এক্ষেত্রে আপনি কী বদলে যাবেন না কী বদলে দিবেন, দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ‘মন্ত্রী সাহেব’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবেই নিজেকে না বদলানোর অঙ্গীকার করেন খাদ্য বিভাগকে দুর্নীতির কলঙ্কমুক্ত করার মিশনে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া এ মন্ত্রী।
সেই অনুষ্ঠানের পর কালের আলোকেও মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘আমি নিজেকে মন্ত্রী মনে করি না। এলাকায় গেলে অনেকেই বলেন কোন সিকিউরিটি না নিয়ে জনগণের মধ্যে ঢুকে যান। আমি বলি এটা আমার আগের অভ্যাস। শুধু এমপি থাকাকালীন সময়ে এলাকায় যত বেশি যেতাম এখন মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ততবেশি যাওয়া হয় না।
তবে আমার রাজধানীর বাসায় ১২ থেকে ১ টা পর্যন্ত মানুষজনের ভিড় থাকে। নওগাঁয় গেলে অনেক এলাকা ঘুরার পরেও রাত ২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত মানুষজনকে সার্ভিস দিতে হয়। আমি এ অভ্যাস থেকে সরে আসিনি।’
অক্লান্ত পরিশ্রম, দৃঢ়চিত্ততা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নওগাঁর ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, তিনবারের সংসদ সদস্য ও বর্তমানে মন্ত্রী হয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ১৯৬৭ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে নেতৃত্বের অগ্রসারিতে ছিলেন।
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনের তিনবারের এ সংসদ সদস্য ক্ষমতার উচ্চাসনে বসেও বিলাসী জীবন যাপনের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেননি। নওগাঁয় ক’দিন আগে আওয়ামী লীগের ৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষেও রিকশায় করে নিজ এলাকার সমস্যাগুলো সনাক্ত করেন এবং তা সমাধানের পথ বের করেন।
তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে অতীতে ভ্যানে বা মোটর বাইকে চড়ে বহুবার পথ চলেছেন। মন্ত্রী হয়েও এখনো সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছেন কৃষি পরিবারের এ মানুষ।
ওই টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি ৫ বছরে ভালো কিছু করে যেতে চাই। আমি আমার সততা ঠিক রাখতে চাই। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। ৬৭ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমার মেয়েরাও প্রতিষ্ঠিত। আমি দেশের জন্য দেশের জনগণের জন্য ভালো কিছু করে যেতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।’
খাদ্যমন্ত্রী কেবল সারপ্রাইজ ভিজিটেই বাজারে যান না। নিজের পরিবারের জন্য বাজার করতে গিয়েও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। এমন তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি নওগাঁয় নিজেই বাজারে যাই। মন্ত্রী হওয়ার পর টাউন হলে তিনবার বাজার করেছি।’
স্থানীয় রাজনীতিতেও সফল সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে টানা জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য থেকে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সুব্যবস্থা, বনায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছেন তিনি। তিনটি উপজেলায় নিজের ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছেন।
মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কালের আলোকে বলেন, শুধু নির্বাচনের সময়ে নয় সব সময়ই স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। জনগণ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে। তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃত একজন রাজনৈতিক নেতার আচরণ সর্বদাই হবে জনবান্ধব।
কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে