ময়মনসিংহে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় দৃশ্যমান উন্নতি, রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড

প্রকাশিতঃ 8:27 pm | June 29, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ময়মনসিংহে ট্রাফিক শৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গৃহীত ব্যবস্থাপনা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উন্নততর হয়েছে। ট্রাফিক জরিমানা ও যথাযথ আইনি কার্যক্রমের সুবাদে ট্রাফিক ব্যবস্থা গতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

শুধু মোটরসাইকেল নয়, আইন ভঙ্গকারী সবধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশ হার্ডলাইনে রয়েছে। ফলে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের সাফল্যের সুফল পাচ্ছেন নাগরিকরা।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও জেলা সদরে ট্রাফিক ব্যবস্থা সময়োপযোগী ও গতিশীল রাখতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ময়মনসিংহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এখন দৃশ্যমান। যানবাহনের নৈরাজ্য ও ট্রাফিকের চাঁদাবাজির অভিযোগ এখন খুব একটা শোনা যায় না। বিগত ঈদের আগে ময়মনসিংহ শহর ও বাইপাস সড়ক ছিল যানজটমুক্ত, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি রেকর্ড।

অন্যদিকে, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। অতীতে উঠা চাঁদাবাজি বা অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কেও কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানপূর্বক বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো আপস করছে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রশ্নে ট্রাফিক বিভাগে আগে প্রচলিত টোকেন প্রথা বা উৎকোচ এবং চাঁদাবাজি এখন শূন্যের কোঠায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রাফিকের চাঁদা আদায় বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে ট্রাফিকে ইদানিং তদবির কোনো কাজে দিচ্ছে না। সম্প্রতি প্রভাবশালী মহল, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক নামধারীদের তদবিরের জবাবে ট্রাফিক আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মহল ট্রাফিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও সচেতন নাগরিকরা ট্রাফিকের পরিবর্তন ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দৃষ্টান্তগুলোকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ময়মনসিংহে যানজট নিরসনে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন থেকে বিপুল পরিমাণ জরিমানাসহ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এসময়ে মোট ৬ হাজার ২৯৫ মামলায় জরিমানা আদায় হয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৪ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ১১ টাকা।

একই সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৯ মাসে ৪ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১১ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে গত ৪ বছরে ৩২ হাজার ২৭১টি মামলা হয়। সেক্ষেত্রে গত ৯ মাসেই ৩২ হাজার ২৭১টি মামলা হয়।

গত ৪ বছরে ট্রাফিক বিভাগ মোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করে। গত ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৪ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার ১১ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরের আদায় করা রাজস্ব থেকে আরো ২ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে জেলা পুলিশ দাবি করেছে, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য নয়, ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে। জরিমানার পরিমাণ বেড়েছে। ট্রাফিকে চাঁদাবাজি নয় বরং আইনি পদক্ষেপ জোরদার হয়েছে।

শহরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৯ সালে অটো, মাহেন্দ্রসহ ৭৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে।

জরিমানার টাকা সোনালী ব্যাংকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজে পরিশোধ করেন। বর্তমানে শহরে কোনো অবৈধ পার্কিং নেই। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করায় জনমনে প্রশংসিত হয়েছে।

যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গৃহীত ব্যবস্থা তুলে ধরে জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আসাদুজ্জামান বলেন, নগরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ৬ মে থেকে শহর এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকা ও মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। ইজিবাইকের চালকের ডান পাশের খোলা অংশ বন্ধ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নতি হয়েছে।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন বলেন, আইন ভঙ্গকারী সব যানবাহনের বিরুদ্ধেই জেলা পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখানে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।

কালের আলো/এআর/এমএম