নামেই ‘পূর্ণাঙ্গ’ হালুয়াঘাট স্থলবন্দর!
প্রকাশিতঃ 8:46 am | March 12, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
৫ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে উন্নীত হয়েছিল ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট স্থলবন্দর। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী। কিন্তু বছরের পর বছর পেরুলেও এ বন্দরের অবকাঠামো কোন উন্নয়ন হয়নি। ফলে নামমাত্র পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা হওয়ায় পুরোপুরি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না এ বন্দর। এ নিয়ে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। কিন্তু এ ঘোষণার বাস্তব কোন প্রতিফলন ঘটেনি। এখনো এ বন্দর কেবল কয়লা আমদানির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বন্দরের শ্রমিকরা জানায়, ডিসেম্বর থেকে জুন। এ ৬ মাস সচল থাকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। বছরের বাকীটা সময় বন্দরে থাকে না শ্রমিক-মজুরদের চিরচেনা হাঁকডাক। বর্ষার কারণে পুরোপুরি বন্ধ থাকে ভারত থেকে কয়লা আমদানি। এ সময়টাতে তাদের থাকতে হয় বেকার। ফলে নিদারুণ কষ্টে চলে শ্রমিকদের জীবন।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানায়, কয়লা, পাথর ও মসলাসহ ১৭ টি পণ্য আমদানি করার লক্ষে ১৯৭৯ সালে কড়ইতলী স্থলবন্দর ও ঠিক ১৮ বছর পর গোবরাকুড়া স্থলবন্দর যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ দু’বন্দরে শুধুমাত্র ভারতীয় কয়লা আমদানি শুরু হয়। দু’টি বন্দরে প্রায় এক হাজার আমদানিকারক ব্যবসা করেন।
এ দু’বন্দরে ভারত থেকে প্রতি বছর গাছুয়াপাড়া-কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া সীমান্ত পথে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক কয়লা বিকিকিনি হয়। এখানকার বন্দরের শ্রমিকরা ৬ মাস কর্মচঞ্চল আর ৬ মাস কর্মহীন থাকেন। ওই সময় পেটে টান পড়ায় কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশায় নাম লেখান। আবার ধান দেনা করে চলে কারো কারো সংসার।
ভুটানসহ ভারতের সেভেন সিস্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যেই পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল, ভুটান-ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়লা, পাথর, মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁশ, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি করা। কিন্তু এখনও এ বন্দরের কার্যক্রম শুধু কয়লা আমদানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
হালুয়াঘাট কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের (সিএনএফএ) সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম পাপ্পু জানান, এ বন্দর দিয়ে কেবল কয়লা আমদানি হয়। কয়লা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় এক হাজার আমদানিকারক এ বন্দর ব্যবহার করেন। বছরের মাত্র ৫ মাস কয়লা আমদানি কার্যক্রম চলে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ধর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার ধর জানান, পূর্ণাঙ্গ বন্দরের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে সারাবছর বন্দর চালু থাকবে। তখন আমদানি-রপ্তানি দু’টোই করা যাবে।
ভারত থেকে মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁশসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা যাবে। আবার আমাদের দেশ থেকে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি করা যাবে।
হালুয়াঘাট আমদানি-রফতানিকারক সমিতির মহাসচিব আলী আজগর জানান, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে এ বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সময় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এ বন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: খলিলুর রহমান জানান, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে উন্নীতের অগ্রগতির বিষয়টি আমার জানা নেই। অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিতে হবে।
কালের আলো/ওএইচ