জনগণের পছন্দের স্টাইলেই ছুটছেন খাদ্যমন্ত্রী, এমপি ইসরাফিলের টিপ্পনিতে সমালোচনা-বিতর্ক

প্রকাশিতঃ 8:46 pm | July 06, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

তিনবারের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তাঁর অধীনে সকল সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। আর এজন্য প্রথমেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন দুর্নীতির ‘আঁতুডঘর’ হিসেবে পরিচিত দেশের খাদ্যগুদামগুলোকে। ভেঙে দিয়েছেন এখানে ঘাপটি মেরে থাকা সব সিন্ডিকেট। কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সারপ্রাইজ ভিজিট!

আরও পড়ুন: মন্ত্রী হয়েও নিজেকে বদলাতে চান না সাধন চন্দ্র মজুমদার?

কোন জনপ্রতিনিধি বা কর্মকর্তাদের না জানিয়ে খাদ্যগুদামগুলোতে হানা দিয়ে ‘ফুলেফেঁপে’ উঠা গুদাম কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করে নিয়মে চলার যে রীতি তিনি শিখিয়েছেন আর সেটাই যেন তাঁর জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে!

নিজের জামাতার স্বাভাবিক মৃত্যু থেকে শুরু করে ক্ষেতে ধান পুড়ানোর ষড়যন্ত্র সবকিছুতেই মহল বিশেষের টার্গেট হয়েছেন তৃণমূল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিরন্তর সংগ্রামের পথ ধরে উঠে আসা বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমকের মন্ত্রীসভার এ প্রবীণ সদস্য।

দেশের ফসলের মাঠের আসল নায়ক কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় এবং সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের খাদ্যগুদামগুলোতে আকস্মিক হানা দিয়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাঁর উদ্যোগ যখন সর্বত্রই প্রশংসিত হয়েছে ঠিক তখন আবারো নিজ দলীয় সংসদ সদস্যের টিপ্পনির মুখে পড়েছেন মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

আত্রাই ও রাণীনগর খাদ্যগুদাম পরিদর্শনের খবরে মন্ত্রীকে টিপ্পনি কেটে প্রকারান্তরে আঘাত করেছেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর ) আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে উদ্দেশ্য করে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাতে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক।

মন্ত্রী তাকে না জানিয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকার দু’টি খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন এজন্যই যেন ক্ষোভের অনলে পুড়ছেন তিনবারের এ সংসদ সদস্য। বিশেষ করে তাঁর স্ট্যাটাসে ‘শিষ্টাচার’ শব্দটির সঠিক প্রয়োগ হয়নি বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

কেউ কেউ বলছেন, একজন সফল সংসদ সদস্য নিজ দলের সফল মন্ত্রীকে শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবেই সমালোচনা করেছেন। মহল বিশেষ এতে উৎসাহিত হবেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের মন্ত্রীদের লক্ষ্য অর্জনের পথচলা কার্যত লক্ষ্যচ্যুত হতে পারে!

আরও পড়ুন: ‘ক্লান্তিহীন’ খাদ্যমন্ত্রী, তাড়া নেই ঘুমোনোর!

কী সেই স্ট্যাটাস
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর ) আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার (০৬ জুলাই) লিখেছেন- ‘মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার আজ আমার নির্বাচনী এলাকার আত্রাই ও রানীনগর খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে যাবেন বলে, ফেসবুক সূত্রে অবগত হয়েছি।

তিনি হয়তো রাষ্ট্রের কাজে অত্যাধিক ব্যস্ততার জন্য আমাকে জানাতে ভুলে গেছেন। যাই হোক রাষ্ট্রাচার ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষার স্বার্থে, তাঁকে যথাযথভাবে সম্মান জানানোর জন্য, সর্বস্তরের জনগণ ও দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতি সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আরো পড়ুন: ৫ খাদ্যগুদামে খাদ্যমন্ত্রীর সারপ্রাইজ ভিজিট, সতর্ক করলেন কর্মকর্তাদের!

কেন খাদ্যমন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী?
মানুষের মনের ভাষা এবং চোখের ভাষা বুঝেই দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার বিশাল বপু শ্বেতহস্তী মুক্ত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এজন্য তিনি কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠা একজন মানুষের হাতেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো ‘স্পর্শকাতর’ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। দক্ষ, প্রাজ্ঞ ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের সঙ্গে জেলার প্রবীণ আদর্শবাদী নেতা এবং তরুণদের সমন্বয় ঘটানোর এ মন্ত্রীসভা দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজ মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরকে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় এনেছেন। বদলী, নিয়োগ ও টেন্ডারে দুর্নীতির বিস্তার রোধ করেছেন। চলতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান পরিচালনায় মন্ত্রী দেশের সাধারণ মানুষের পছন্দের স্টাইলেই বিভিন্ন খাদ্যগুদামগুলোতে আকস্মিক হানা দিচ্ছেন।

ঢাকঢোল পিটিয়ে গেলে সুবিধ পাবে অসাধু চক্র
মন্ত্রী বারবারই বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার সব সময়ই কৃষকের পক্ষে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য একটিই কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা। প্রকৃত কৃষক ছাড়া কোনো দালাল, ফরিয়া বা অন্য কারও কাছ থেকেই যেন ধান কেনা না হয় সেজন্য মন্ত্রী নিজেই আকস্মিকভাবে খাদ্যগুদামগুলোতে হানা দিচ্ছেন এবং পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান পরিদর্শন করতে মন্ত্রী কোন এলাকায় ঢোল পিটিয়ে গেলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য কর্মকর্তারা সতর্ক থাকে এবং এ সংগ্রহ অভিযানে অসাধু চক্র বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সুবিধা পাবে। ফলে মন্ত্রী কাউকে কোনকিছু না জানিয়েই প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন।

মন্ত্রীর এ থিউরি দেশের কৃষকদের মন জয় করেছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এক রকম আতঙ্কের মধ্যেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর হয়েছে।

খাদ্য বিভাগকে দুর্নীতির কলঙ্কমুক্ত করতে মন্ত্রীর উদ্যোগ বা ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। দিন-রাত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে নিজের একটা অন্যন্য ইমেজ তৈরি করেছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। তবে মন্ত্রীর এ কাজের স্টাইল অনেকেই অপছন্দ করছেন।

এ বিষয়ে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার একাধিকবার কালের আলোকে বলেছেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ এখন আর মন্ত্রীদের কথায় আশ্বস্ত হতে চান না। তাঁরা কাজ দেখতে চান। কথা দিয়ে কথা রক্ষা না করা কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার যে ধারা সেই প্রথা আমি ভাঙতে চাই।

জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাই। যতক্ষণ দায়িত্বে আছি আমি বঙ্গবন্ধু কন্যার অ্যাসাইনমেন্ট শতভাগ বাস্তবায়ন করতেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবো।’

মন্ত্রী গিয়েছিলেন আত্মীয়’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে
এক আত্মীয়’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই শনিবার (০৬ জুলাই) সেখানে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেখানে তাঁর সরকারি কোন সফর ছিল না। কিন্তু মন্ত্রী যেহেতু প্রতিটি সময় বা মুহুর্তই দেশ এবং জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে চান সেজন্য নিজের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার সময়েও আশেপাশের খাদ্যগুদামগুলোতে তিনি আকস্মিক পরিদর্শন করেন।

এদিনও খাদ্যমন্ত্রী ব্যতিক্রম ছিলেন না। আগে থেকে কোন কর্মসূচি না থাকলেও দায়িত্বের টানেই আত্রাই ও রাণীনগর খাদ্যগুদামে ঝটিকা পরিদর্শন করেন। এ সময় নওগাঁর নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন অর রশিদ তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

মিডিয়ার চোখে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
গণমাধ্যমে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যখন কথা বলেন একটি শব্দও ভুল করেন না। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর ব্যবহার মানুষকে মুগ্ধ করেছে। সরকারে তাঁর এ সক্রিয় অবস্থানে দেশ ও মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তিনি মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়ার পরই যেহেতু পরিষ্কার বলেছেন, সরকারে দুর্নীতির স্থান নেই।

এমপি ইসরাফিল নিউইয়র্কে
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে টিপ্পনি কেটে নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে আরেকটি স্ট্যাটাসে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর ) আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম নিউইর্য়কে একটি অনুষ্ঠানে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। যেখানে তিনি নিজেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থাকবেন সেখানে কীভাবে মন্ত্রী তাকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন, এমন প্রশ্নও উঠেছে।

দেশের খাদ্যগুদামগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিটে নিজ সরকারের মন্ত্রীকে উৎসাহের পরিবর্তে তাঁর এমন কথার আঘাত প্রকারান্তরে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করছে।

সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেই জয় করতে হবে হৃদয়
দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যেমন নিজের স্বকীয়তা, ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক গুণাবলী দিয়ে দেশ ও মানুষের প্রতি নিজের অঙ্গীকার রক্ষা জন্য ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে গোটা দেশে ছুটে বেড়াচ্ছেন ঠিক তেমনি তিনবারের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমও নিজের অগ্রজ মন্ত্রীকে টিপ্পনি কেটে বা আঘাত করে নয় নিজের সৃষ্টিশীল নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করবেন।

সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একই আদর্শের মহিমায় জয় করবেন নিজ এলাকার পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়, এমন প্রত্যাশা নিজ দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনসাধারণের।

কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে