অর্থনৈতিক অগ্রগতি চাইলে গ্যাসের মূল্য মেনে নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:04 pm | July 08, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা ও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে গ্যাসের বর্ধিত মূল্য মেনে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকে আওয়াজ তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, প্রথমত আমাদের বলতে হবে গ্যাসের প্রয়োজন আছে কিনা। এটিতো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য, শিল্পায়নের জন্য গ্যাস এবং জ্বালানি লাগবে। যদি অর্থনৈতিক অগ্রগতি না চান তাহলে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেব! অর্থনৈতিক অগ্রগতি চাইলে গ্যাসের মূল্য মেনে নিতে হবে।

সোমবার (৮ জুলাই) চীন সফর শেষে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চীন, জাপান বিনিয়োগ করেছিল। ভারত সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম। আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। সেই গ্যাসটা যদি পেতাম তাহলে এলএনজি আমদানি করতে হতো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। বিদেশে সব দেশে এটা করা হয়, তারা মেনে নেয়। এত বড় সমস্যায় আমাদের পড়তে হতো না। আমাদের কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত, বিক্রি করতে পারব কি না। প্রতি ঘনমিটার আমাদানি খরচ হয় ৬১.১ টাকা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থান ভেদে দাম ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। বাংলাদেশ দাম ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে গ্যাসের দাম ১০ দশমিক ৭০ টাকা, ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।’

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আন্দোলনের সময় বলছে ভারত কমিয়েছে, ভারতে দুইবার দাম বাড়ায়। এটা তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল এবং অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম অ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্যটা বাড়ায়। এলএনজি নিয়ে এসে আমরা ৬১ দশমিক ১২ টাকা, সেটি দিচ্ছি ৯ টাকায়। তারপরও আন্দোলন। একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব। আমাদের গ্যাস লাগবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়ানোর পরেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্দোলন যখন করছে তখন এক কাজ করি। যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করি। ৯টার গ্যাস ৬১ টাকা নিই। তাহলে আর ভতুর্কি দিতে হবে না।’

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনের আশ্বাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তারা দেখবেন। রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা সেটি তারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যতটুকু করার সেটা তারা আশ্বাস দিয়েছেন।’

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত ১ জুলাই বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে গত শনিবার (৬ জুলাই) তিনি দেশে ফেরেন।

চীন প্রথম সফরে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডালিয়ানে সামার ডাভোস নামে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং বৈঠক করেন ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে। এরপর ডালিয়ান থেকে বেইজিং পৌঁছান তিনি।

বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও তোপধ্বনির মাধ্যমে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।

চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা ও একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জে সই করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেওয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। এরপর বিকেলে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার ( ৫ জুলাই) দুপুরের পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিয়েন আন মেন স্কয়ারে চীনের জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝাংসুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে বেইজিংয়ের দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শি চিনপিংয়ের দেয়া নৈশভোজেও অংশ নেন তিনি।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এআর/এমএম