আ.লীগের তৃণমূলে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ কেন্দ্রীয় নেতাদের

প্রকাশিতঃ 11:10 pm | July 16, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দলটির তৃণমূলে নেতায় নেতায় বিরোধ তৈরি হয়েছে। দলের ভেতর সৃষ্ট এ অনৈক্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা দলটির তৃণমূলে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য জেলা ও উপজেলার নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ‘ভোটের রাজা’ মির্জা আজম!

পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং তাদেরকে মদদ দেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দৃঢ়তার সঙ্গেই জানান কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

আরও পড়ুন: দীপু মনির নেতৃত্বের ক্যারিশমা

আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় হাততালিতে সফলতা নয় বরং সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, সাংগঠনিক কর্মসূচি সঠিকভাবে নিরূপণ করতে কাজ করতে হবে। আজকে নিয়ম মাফিক চিরাচরিত দিবস পালন করার মধ্যে দলের সাংগঠনিক কাঠামো সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না।

জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণকে নতুনভাবে সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। তাঁর জন্য যে কাজগুলো প্রয়োজন সেই কাজগুলো আপনাদের করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সংবিধান, উদ্দেশ্য এবং আদর্শ মেনে দল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, যখন যা মনে হলো আর ফ্রি স্টাইল খেললাম এ খেলা দিয়ে আর যাই হোক গোল দেওয়া যাবে না।

এটা অন্যের বেলায় সত্য হলে আমার বেলায়ও সত্য হতে পারে। এ কথাটা এ পরিণতির কথা মনে রেখেই যেন আমরা খেলি এবং দল করি। আর একই সাথে বলতে চাই, অনেক দিন লাঠির বাড়ি খাই না তো, অনেক দিন দৌড় দেই না কাজেই কিছু আমাদের স্লথতা হয়তো এসেছে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ আবার সময়ে গর্জে উঠতে পারে এবং লড়াইও করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এ আস্থা এবং বিশ্বাস আমরা সবাই অন্তরে ধারণ করি।

আওয়ামী লীগে অভিজ্ঞতার কোন অভাব নেই মন্তব্য করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, এখানে পাঁকা চুল আছে, কাঁচা-পাকা চুল আছে আবার কাঁচা চুলও আছে। কাজেই কয়েকটি জেনারেশন আমাদের সামনে বসা। আমরা যদি সমন্বয় ঘটিয়ে অর্থাৎ নবীনদের গতি, ক্ষিপ্রতা এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতা, স্থিতি আর পাকা চুলের বর্ণাঢ্য জীবনের যে উপদেশ এ তিনটির সমন্বয় করে যদি সামনের দিকে এগুতে পারি তাহলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আগামী বছর যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং তারপর ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর যে উদ্যোগ নিয়েছেন ইনশাল্লাহ সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে পালন করবো। আমরা নিজেদের সংশোধন করবো।

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক প্রতিনিধি সভায় অনুভব করেন একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের। তিনি বলেন, এ মুহুর্তে গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী, গঠনমূলক, একটি অসাম্প্রদায়িক বিরোধী দল। যে দলটি এখন বিরোধী দল আমি বলবো তাঁরা অবশ্যই বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। আরেকটি জামায়াত। জামায়াত প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা বিরোধী। এখনো তাঁরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।

এ নেতা বলেন, জামায়াত এখনো জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। বিএনপি জামাায়াতের লালন-পালনকারী বিরোধী দল। আজকে যে দলটি বিরোধী দল সেই বিরোধী দলটি আমাদের নয় বাংলাদেশ ও জনগণের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু।

সভাপতির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি এমপি আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ করার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, যাতে কোনভাবে কোন বিএনপি-জামায়াত, কোন স্বাধীনতা বিরোধী কেউ বা যুদ্ধাপরাধীদের কেউ যেন দলে প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

দলে ঐক্যের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ময়মনসিংহের তিনটি উপজেলায় দলের কমিটি নেই। পাগলায় কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেইনি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে হয়তো নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেখানেও আমরা শক্ত কোন অবস্থান নেইনি।

কিন্তু আগে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতা ছিল অনেক বেশি। এবং সেই প্রবণতায় যারা নিজেরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শুধুমাত্র তারা নন দায়িত্বশীল পদধারীরা এমনকি মন্ত্রী-এমপিরা অনেকেই বিদ্রোহীদেরকে প্রকাশ্যে মদদ দিয়েছেন। এটি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের বড় উদাহরণ। আমাদের দলীয় আদর্শ এবং নিয়ম-কানুন আছে গঠনতন্ত্র আছে। সেগুলো মেনেই আমাদের চলতে হবে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলটির প্রভাবশালী এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের গত কার্যকরী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁরা দলীয় পদে থাকলে তাদের সাসপেন্ড করা হবে। যারা প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন তারা এমপি মন্ত্রী হলেও তাদেরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষিমন্ত্রী ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি।

সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম এমপি, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেং। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ।

সভায় ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন। সভায় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কালের আলো/ওএইচএম/এএ