এক ফ্রেমে বাঙালির আবহমান ইতিহাস, পিজিআর’র অনন্য আলোকচিত্রে ‘অভিভূত’ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 10:27 pm | July 17, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অগ্নিঝরা ১৯৫২। বাঙালি জাতির অভ্যুদয়ের স্ফূলিঙ্গ। দাবি, প্রতিবাদ আর দ্রোহের আগুনে উত্তপ্ত দেশ। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশ্বে প্রথম রক্তদানের ইতিহাসের রচনা করলো বাঙালি জাতি। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শহীদ হলেন রফিক-সালাম-বরকত-জব্বার-শফিউররা।

আরো পড়ুনঃ সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বমানের করতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবাদী বাঙালি জাতির মানস জগতে ঘটলো অমর বিপ্লব। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সূচিত হলো বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করলো বাংলাদেশকে।

স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা। প্রতিটি আন্দোলনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সফল নেতৃত্ব দিলেন জাতির আরাধ্য এক পুরুষ। তাঁর কারাভোগের ইতিহাস কারো অজানা নয়। বাঙালির দুর্দিনে, দু:সময়ে বরাবরই তিনি আবির্ভূত হয়েছেন ত্রাণকর্তা হিসেবে। মাতৃভাষাপ্রেমী এ মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় ভূমিকা উদ্দীপ্ত করে বাঙালি জাতিকে।

ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতির আগে ১৯৪৮ সালে রাজপথে সোচ্চার আন্দোলন অত:পর কারাবরণ, পরে আইনসভার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকার কথাই বলে ইতিহাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসের অনন্য দলিল।

বীরের জাতি বাঙালি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষকে হারিয়ে নির্বাক-স্তব্ধ সময় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁর রক্তের উত্তরাধিকার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। শত ষড়যন্ত্র, বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন জাতির জনকের সোনার বাংলাকে।

বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত বাঙালি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) নিজেদের দেশপ্রেম, একাগ্রতা, শৃঙ্খলাবোধ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি সচেতন থেকে রাত-দিন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে নিজেদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

১৯৫২ থেকে ১৯৭১ অর্থাৎ ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশরত্ন শেখ হাসিনার অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও সুযোগ্য নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশের ছুটে চলা, শৃঙ্খলা ও একনিষ্ঠতার মধ্যে দিয়ে দেশ ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়ে নিজেদের সুসংহত অগ্রযাত্রার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) এসব প্রতীকি চিত্রই ফুটে উঠেছে একটি আলোকচিত্রে।

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে পিজিআর’র ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা সেনানিবাস্থ পিজিআর সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঙালি জাতির অনিন্দ্য সুন্দর ইতিহাসের ফ্রেমে বাঁধাই করা দুর্লভ আলোকচিত্র তুলে দেন পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.জাহাঙ্গীর আলম।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ আলোকচিত্রীর পরিকল্পনার বিষয়ে পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.জাহাঙ্গীর আলম কালের আলোকে বলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন সবক্ষেত্রেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা এবং পিজিআর’র ক্রমাগত উন্নতি ও অগ্রযাত্রা এ আলোকচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে এ আলোকচিত্রের থিম পিজিআর’র সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল নাকিব আহমেদ চৌধুরী, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি’র। পিজিআর’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে তিনিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এমন উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদরদপ্তরে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী পিজিআর’র সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী পিজিআর’র বীর সদস্যদের পরিবারবর্গের মাঝে অনুদান এবং উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ারমার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম-উজ- জামান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার), উচ্চ পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কথা বলে সেইসব ছবি
দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনে মুন্সীয়ানার পরিচয় দেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সর্বপ্রথম চলতি বছরের ২৪ মার্চ যুগস্রষ্টা মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী পরিদর্শনে গিয়ে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করার ৪৭ বছর আগের অমূল্য স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন।

এরপর রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্টের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে জাতির জনকের গালে স্নেহের চুম্বন এঁকে আদর করা মহিয়সী মাতা সায়রা খাতুনের ফ্রেমেবন্দি বিরল পেইন্টিং উপহার দেন বঙ্গবন্ধু অন্ত:প্রাণ সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

চলতি বছরের ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসএসএফ অফিসার্স মেসে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি নান্দনিক স্মৃতিময় পেইন্টিং উপহার দেন এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান। সেই ছবিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী আদরের ছোট বোন শেখ রেহানার গালে আদর করছেন। মাথার ওপর বাঙালি জাতির মুক্তির নিয়ন্তা বঙ্গবন্ধু।

কালের আলো/এসটিএম/এমএএএমকে