সেই প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 6:00 pm | July 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মিথ্যা, মনগড়া ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ করে আলোচনায় আসা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আরও পড়ুন: দেশ বিরোধী ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে প্রিয়া সাহা, পেছনে কারা নাড়ছেন কলকাঠি?

পাশাপাশি নিজের সঙ্গে প্রিয়া সাহা’র ছবি সম্পর্কে মন্ত্রী কালের আলোকে বলেছেন, ‘আমি প্রিয়া সাহাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের একটি ম্যাগাজিন দিতে ওই নারী একদিন মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন। মন্ত্রীদের কাছে তো কত মানুষই আসেন। ওই ম্যাগাজিন দিয়ে তিনি ছবি তুলেছিলেন। এবং ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণরও পাশেই ছিলেন।’

শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে কালের আলো’র সঙ্গে মোবাইল আলাপে এসব কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রিয়া সাহা নামের এক নারীর ডাহা মিথ্যাচারের পরপরই দেশের কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রিয়া সাহা’র পরিচয় আবিস্কার করার নিউজে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়। তেমনই একটি ছবিতে প্রিয়া সাহাকে দেখা গেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর পাশেও।

আরও পড়ুন: দুদকের ডিডি মলয়ের স্ত্রী প্রিয়া, বহিস্কৃত হয়েছিলেন সংগঠন থেকেও

আর এ ছবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে একাত্তুরের রণাঙ্গণের বীর সেনানী, সজ্জন ও সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কালের আলোকে বলেন, প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ গোটা বিশ্বেই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছে।

গোটা বিশ্বের জন্যই বাংলাদেশ রোল মডেল। কিন্তু প্রিয়া সাহা দেশবিরোধী ভয়ানক ষড়যন্ত্র করায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি তাঁর বিরুদ্ধে বিবেকের তাড়নায় অ্যাকশনে যাচ্ছি। তাঁর বিরুদ্ধে আমি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবো।’

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপ্ন পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা

এদিকে, প্রিয়া সাহার এ বক্তব্যকে সঠিক নয় উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তাঁর বিরুদ্ধে শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ও সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন। বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

অসত্য এ বক্তব্য খতিয়ে দেখার কথা ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। প্রিয়া সাহাকে আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে শনিবার (২০ জুলাই) জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

কী ছিল সেই মিথ্যাচার?
ভাইরাল হওয়া প্রিয়া সাহার মিথ্যাচারে ভরপুর ভিডিও মারফত জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতা বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলেন।

এতে বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এরপর তিনি বলেন, এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীলতার স্বরূপ এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। এ সময় ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’

ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সব সময়ই পায়।’

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর ইউটাহ ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও প্রকাশ করে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। তাঁর এমন মিথ্যাচারে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। তাঁরা প্রিয়া সাহা’র ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।

কালের আলো/এআর/এনএল