সিনহার দাবার ঘুঁটি প্রিয়া সাহা, ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 7:35 am | July 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে চা-স্টল সব জায়গাতেই তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন দেশের মানুষজন।

আরও পড়ুন: সেই প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে প্রিয়া সাহা নিজেদের দেশের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন এমনটি বিশ্বাস করছে না কেউ। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দেশের সচেতন সবাই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে। তাঁরা বলছেন, সমালোচিত ওই নারীকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন বিতর্কিত সিনহা।

প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার উৎখাত করতেই আবারো ব্যর্থ ষড়যন্ত্র চালিয়ে রীতিমতো ‘ধরা’ খেয়েছেন সাবেক এ প্রধান বিচারপতি।

আরও পড়ুন: দেশ বিরোধী ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে প্রিয়া সাহা, পেছনে কারা নাড়ছেন কলকাঠি?

এদিকে, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি। তিনি কালের আলোকে বলেছেন, ‘দেশদ্রোহী বক্তব্য দিয়ে প্রিয়া সাহা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছেন।

বাংলাদেশের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ তাঁর এ বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছে।’

শনিবার (২০ জুলাই) রাতে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত মাওলানা আসাদ আলীর সন্তান।

আরও পড়ুন: দুদকের ডিডি মলয়ের স্ত্রী প্রিয়া, বহিস্কৃত হয়েছিলেন সংগঠন থেকেও

এর আগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে আরও ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু এখনও আছে, যারা বাঁচতে চায়, তাদের বাঁচান। এ সময় তাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেন, কারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করছে। জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, মুসলিম মৌলবাদীরা।

এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রিয়া সাহার অভিযোগ ভয়ঙ্কর মিথ্যা, সাজানো গল্প এবং এর পেছনে অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা জন্যই প্রিয়া সাহা কল্পিত ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশ তার এ বক্তব্যের কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতিঘর।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপ্ন পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে যা বলেছেন, সেটা তার নিজস্ব বক্তব্য; সংগঠনের নয়। রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, তথ্য-প্রমাণ ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে ‘জঘন্য মিথ্যাচার’ বলে মনে করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকেও প্রিয়া সাহার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এবং নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের কোনো যোগাসাজশ রয়েছে কি না? তবে একাধিক সূত্র মনে করছে, স্বাধীনতার বিপক্ষের অশুভ শক্তি বলে পরিচিতদের সঙ্গে কানেকশন নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ষড়যন্ত্রের যে ছক কষা শুরু করেছেন প্রিয়া সাহা সেই গোত্রেরই অংশীদার।

ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে গিয়ে কীভাবে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে হবে সেই থিম শিখিয়ে দিয়েছেন সিনহাই। অতীতেও সিনহা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চক্রান্তে সরব ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি কালের আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে রয়েছেন। সরকারের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে পূজাসহ অন্যান্য উৎসব পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু নিজেও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে অন্যতম বড় কারণ ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সেকিউলারিজমে বিশ্বাস করেন। কিন্তু প্রিয়া সাহা দেশ বিরোধী একটি অশুভ শক্তির ইন্ধনে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন। মূলত যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে সহ্য করতে পারছে না তাঁরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে প্রিয়া সাহাকে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

কী বলছেন পিরোজপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা?
পিরোজপুরের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রিয়া সাহা তাঁর ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমানকে হয়রানি করে আসছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাঁর ভাইয়ের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে যে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল সেটি নিয়েও রহস্য রয়েছে।

তাঁরা বলছেন, ওই ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে আসামি করে প্রিয়া সাহা হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তারা মনে করেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিকল্পিতভাবে রাতের বেলায় পরিত্যক্ত ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রিয়া সাহা আমার নির্বাচনী এলাকার মেয়ে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে নিজ দেশ, নিজের এলাকা সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেছেন। এটা চরম অন্যায় ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে।

কালের আলো/এমএইচটি/এমএএএমকে