বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ সেই স্মৃতিচিত্র : সেনাপ্রধানের উপহারে নস্টালজিক প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 9:55 am | July 22, 2019

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :

একটি ফ্রেম। একটি ছবি। একটি ক্যানভাস। একটি ইতিহাস। একটি স্মারক উপহার। যেখানে রয়েছে কতিপয় বিষয় ও বস্তুর চিত্র। ছবিটি দেখলেই যে কারো মন বলবে, ছবি যেন শুধু ছবি নয়! অথবা মনে হবে- ছবির মতো ছবি। ভারী ফ্রেমের চশমা, কলম, টেলিফোন। দু’টি খাতা। উপরের খাতার পাতা দু’টি খোলা। যার বাম পাশে কিছু লেখা।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত সেই স্মৃতির সামনে অপলক প্রধানমন্ত্রী, আবেগ উদ্দীপ্ত সেনাপ্রধান

হাতের লেখাটি মন্তব্য। নীচে স্বাক্ষর। চোখ জুড়িয়ে যায়। বাঙালি দেখামাত্র বুঝেন- এই চশমা, এই কলম, এই টেলিফোন, সেই হস্তাক্ষর, সেই স্বাক্ষর চেনা-জানা এবং পরিচিত। এগুলো কোন সাধারণ ছবি নয়। বঙ্গবন্ধুর চশমা-বাঙালির চেনা। সেই মোটা কালো ফ্রেম, পাওয়ারি কাঁচ। যা বঙ্গবন্ধুর চশমা নামে এখন পরিচিত।

ক্যানভাসে সবার সামনে ভাঁজ করা সেই চশমা-সাধারণ কোন চশমা নয়। তেজোদীপ্ত বঙ্গবন্ধু এটি ব্যবহার করতেন। জাতির জনকের ব্যবহার করা সেই চশমা, পরিদর্শন বহিতে মন্তব্য লিখে শেখ মুজিবুর রহমান নিজ নামস্বাক্ষর, তারিখ লিখেছিলেন যে কলম দিয়ে সেই কলমটি ছিল ছবিতে। আর ল্যান্ড টেলিফোন। বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধু কথা বলতেন বলেই সেই ফোন সেটটির জায়গা হয়েছিল- সেই দুর্লভ স্মৃতিচিত্রে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ‘বিরল’ সেই ছবিতে বিমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন সেনাপ্রধানের

বাঙালির মুক্তির জন্য জেল-জুলুমের তোয়াক্কা না করে সারা বাংলা ঘুরে ঘুরে মুক্তির কথা বলে মানুষকে জাগিয়ে তোলা লম্বা সুপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আলাদা ছবি নেই সৃষ্টিশীল এ আলোকচিত্রে। তবে পরম মুগ্ধতায় পিতা মুজিবের ছবি স্থান হয়েছে দৈনিক ইত্তেফাকের ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ ও ‘বাঙালী থেমে থাকিবে না’ দু’টি ঐতিহাসিক শিরোনামের ডান পাশে।

একটি শিরোনাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে নেওয়া। কারাগারের রোজনাচায়ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ইত্তেফাকের উদাহরণ টেনেছেন। নিউজের শিরোনামের পাশাপাশি পত্রিকার পাতায় স্থান পাওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের তর্জনি উঁচানোর বিখ্যাত ছবিটি নজর কেড়েছে। এ ছবিই বলছে জাতির জনক দৃপ্ত শপথ করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার। বাঙালি জাতিকে তিনি দেখিয়েছিলেন মহামুক্তির দূর-দিগন্ত।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিত দৃশ্যকাব্যের এই পেইন্টিং প্রকারান্তরে যেন এক সংগ্রহশালাই বটে! খন্ডখন্ড একাধিক বিষয় নিয়ে এক অপূর্ব বিষয়বস্তু। যেখানে ধরা পড়েছে সময়। বিধৃত হয়েছে স্মৃতিকথা। নষ্টালজিয়া। যা বাঙালি ও বাংলাদেশের গর্ব ও গৌরবগাঁথা ইতিহাসের অমূল্য দলিল।

বঙ্গবন্ধুময় প্রামাণ্য এই দলিলটি দেশের চিত্রকলার এক অনন্য সংযোজন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। অবশ্য এই পেইন্টিংটিকে বাঙালির রক্ষাকবচ, বীরোচিত নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থক কান্ডারি, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারক উপহার হিসেবে দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনবাাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। যার হৃদয়জুড়ে কেবলই ইতিহাসের মহানায়ক। ফলে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত উপকরণগুলো মহামূল্যবান।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির পোর্টেটটির পেছনে রয়েছে দেশের একমাত্র চারতারকা জেনারেলের ভালোবাসার নির্যাস। সেই শৈশব থেকেই যার মনের গহিনে পরম মুগ্ধতায় স্থান পেয়েছেন জাতির আরাধ্য পুরুষ, যা আজো অম্লান। চলতি বছরের ১৬ জুন (রোববার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই স্মারক উপহার হিসেবে তুলে দেন সেনাপ্রধান।

ঢাকাস্থ সেনানিবাসে সেনাসদর কনফারেন্স হল হেলমেট এ সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০১৯ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীপ্ত মুখ, শরতের শিউলি ফুলের মতো অমলিন হাসিতে এ উপহার গ্রহণ করেন বঙ্গকন্যা। উপহারের এমন ক্ষণে হয়তো স্নেহময় বাবার কতশত স্মৃতি তাঁকে নস্টালজিক করেছে।

উজ্জ্বল হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাঙালির শ্বাশত দর্শনের এ প্রাণভোমরার চোখে পরক্ষণেই যেন কথা বলে উঠলো বায়ান্ন, ছেষট্টি, ঊনসত্তর আর একাত্তরের অহঙ্কারের সংগ্রাম। বাবার মতো তিনিও যে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক।

বঙ্গবন্ধুর বিরল কোন ছবি তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের প্রথম দৃষ্টান্ত নয়। এর আগেও তিনি আরো দু’টি বিরল ছবির পোর্টেট উন্নয়নের স্বার্থক রূপকার, হ্যাট্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলেন। গোটা বাহিনীতে তিনি বঙ্গবন্ধুর বিরল ছবি উপহারেরও প্রবক্তা।

রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্ট’র ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে যে ছবিটি উপহার দেওয়া হয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি বিরল ছবি। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মা সায়রা খাতুনের সেই ছবিটি অসাধারণ। এক পারিবারিক ছবি। মা ও ছেলের ছবিটি বিরল ভালোবাসার। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর মায়ের স্নেহময় চুম্বনের সেই ছবিটি পোর্টেট করে দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আত্নত্যাগ ও অবদানের গৌরবগাঁথা অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সর্বাত্নক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

ওই সময় মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় আত্নপ্রকাশ করে মুজিব ব্যাটারি। প্রথম আর্টিলারি ইউনিট। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ ইউনিট গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই মুজিব ব্যাটারিই এখন প্রথম ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সেই ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি পরিদর্শন করেন। সেই পরিদর্শন খাতার সেই মন্তব্য, বঙ্গবন্ধুর সেই স্বাক্ষর, জাতির অমূল্য স্মৃতি, গৌরব। যা সংরক্ষণ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের এসব স্মারক উপহার দর্শক, চিত্র বিশ্লেষক ও সময় বলে দেয় ছবিগুলোর তাৎপর্য কত গভীর এবং এর মূল্য কী অপরিসীম! বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর মা সায়রা খাতুনের ছবিটি চিরদিনের আবেদনময়।

এ ছবিটি প্রবাদপ্রতিম একটি উক্তিকে মনে করে দেয়। ‘গিভ মি এ গুড মাদার….’। মহিয়সী এ গুড মাদার পরম মমতায় তাঁর ছেলেকে চুমু দিচ্ছেন, যে ছেলে একটি দেশ স্বাধীন করেছে, একটি জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় এ নিদর্শনগুলো জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ। সেই সম্পদই আবিস্কার করে তা জাতির সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

যিনি মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় ভাস্বর বলেই মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতার প্রতি তাঁর আবেগ অফুরান। জাতির চিত্রকলায় প্রকারান্তরে তিনি ফ্রেম বন্দি করে যাচ্ছেন অনন্য সাধারণ দলিল। যেন এক বিমূর্ত জাদুঘর, বঙ্গবন্ধুর কথা বলছে, তাঁর স্মৃতিকে চিরজাগরূক করে রাখছে।

ইতিহাস হয়েই এসেছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে উন্নতশিরে দাঁড়াবার সম্মান এনে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতায় তাঁর সংগ্রামী জীবনের ইতিকথা লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে অনন্ত সময়জুড়ে।

ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর ফ্রেমবন্দি এসব ক্যানভাসও ঐতিহাসিক স্মৃতি হয়েই থাকবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর এসব চিত্রকল্প বিশ্বের নিপীড়িত মানুষকেই প্রেরণা জুগিয়ে যাবে চিরকাল। স্বাধীনতার অমর বাণী শুনিয়ে দিবে নতুন প্রজন্মকে। ইতিহাসের স্মরণচিহ্ন হয়েই কথা বলবে জেনারেল আজিজ আহমেদের উপহার দেওয়া এসব ছবি।

কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে