গুজব প্রতিরোধে তারুণ্যের সচেতনতা বিকাশে আইজিপি
প্রকাশিতঃ 11:50 am | July 30, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
আইনগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গুজবের সৃষ্টি, বিকাশ ও চর্চা বন্ধ করে জনস্বার্থ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশজুড়ে সচেতনতা সপ্তাহ পালন করছে পুলিশ। নৈরাজ্য, অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বন্ধ করতে পুরো বিষয়টি নিজেই মনিটরিং করছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
আরও পড়ুন: পুলিশের সামাজিক আন্দোলনে কমেছে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক, নেই গণপিটুনির ঘটনা
অমিত দৃঢ়তা ও কঠোরতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বিকাশে তাদের দূয়ারে দূয়ারে পাঠাচ্ছেন পুলিশকে। জাতির প্রকাশ্য শত্রুদের নতুন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে নিজেকে ‘রুটিন ওয়ার্কের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এবার নিজেই ছুটেছেন তৃণমূলের শিক্ষার্থীদের কাছে; গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদের সুশাসন ও উন্নয়নের মোহনায় পৌঁছে দেওয়ার আকাঙ্খা জাগিয়ে দিতে।
আর এজন্য পুলিশ প্রধান বেছে নিয়েছেন জাতির আরাধ্য পুরুষ, মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থানের জেলা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রাবেয়া আলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজকে। ওই জেলায় নারী শিক্ষার মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ভয় দূর করা, ইতিবাচক ও আশাসঞ্চারী বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে তারুণ্য।
আরও পড়ুন: এক ক্লিকে পড়ুন আইজিপির সংবাদ সম্মেলনের ৮ প্রতিবেদন
গুজবের নাম করে নৃশংসতা ও বর্বর কায়দায় মানুষ পিটিয়ে হত্যা করার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের আকীর্ণ না রাখারও অঙ্গীকার করেন। আতঙ্কের চাদর সরিয়ে নিজেদের মুক্ত ও বিকশিত করতে অনাদিকালের ঐতিহ্যে মুখর হয়ে নতুন কেতন উড়িয়ে দিতে চায়। এসব নারী শিক্ষার্থীরা ‘কল্লাকাটা’ আতঙ্ক ও পুঞ্জিভূত আবিলতা দূর করে নিজেদের ঋদ্ধ ও শাণিত করতে চায় ঐতিহ্যের আলোকধারায় স্নাত হয়ে।
জানা যায়, শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ছড়িয়ে দিতে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুদের মাথা লাগবে’ সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মূলত দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতেই একটি মহল এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। এমনকি তাসলিমা বেগম রেণুর মতো নিরীহ ৮ মানুষের প্রাণহানি সমাজে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠে।
হটকারী এ হীন কৌশলের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে পুলিশ। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা শুরু হয়। তবে আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগেই গুজব রটনাকারীদের তৎপরতা রুখে দিয়ে অকুতোভয়ে সামনে এগিয়ে আসে জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ।
দিন ছয়েক আগে পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দুর্জয় তারুণ্য বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদেরকে লাল-সবুজের বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতু’র নির্মাণযজ্ঞ ঘুরে দেখার পরামর্শ দেন।
কাজে বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে পরিচিত ড.জাবেদ পাটোয়ারী নিজে যা অনুভব করেন, সেটি করতে দ্বিধা করেন না মোটেও। নিজের বক্তব্যের বাস্তবতা ও আন্তরিকতায় সাধারণ মানুষের মনে পুলিশের প্রতি বিশ্বাসের একটি জায়গা তৈরি করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। ব্যক্তিগত সততা আর নিষ্ঠার জায়গা থেকে তিনি নিজের বাহিনীর জন্য মজবুত পাটাতন তৈরি করেছেন। যেখানে বিশ্বাসের তুলাদন্ডে সাধারণ মানুষের আস্থার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠবে পুলিশ।
স্থানীয় রাবেয়া আলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের পদ্মা সেতু ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে, রক্ত লাগবে এমন মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তোমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং অন্যদের সচেতন করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদেরকে ভবিষ্যতে আদর্শবান দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে ওঠার আশার কথা জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইভটিজিং’র মতো অপরাধের সাথে জড়িত না হওয়ারও উপদেশ দেন।
২০১৪ সালে গোপালগঞ্জ সদরের স্থানীয় রাবেয়া আলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এ পুলিশ কর্মকর্তার বাবা ও মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটিতে ৫৩১ জন নারী পড়াশুনা করছে। মাত্র ৫ বছরেই এ জেলার নারী শিক্ষার জাগরণে পথিকৃৎ হয়ে উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে কলেজটির প্রিন্সিপাল আবু হুরায়রা কালের আলোকে বলেন, ‘গুজবের স্রােতে গা ভাসানোর মতো অগ্নিগর্ভ অন্ধকূপে বন্দি থাকতে চায় না নারী শিক্ষার্থীরা। এখনকার শিক্ষার্থীরা অগ্রসরমান, তাঁরা পশ্চাৎপদ থাকতে রাজি নয় মোটেও।
কিন্তু অবাধ তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার সময়েও একটি সেতুর জন্য ‘কল্লাকাটার’র মতো অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য গুজবের বিরুদ্ধে সামনের দিনগুলোতে তাঁরা চলার দিশা পেয়েছে স্বয়ং পুলিশ প্রধানের বাস্তবধর্মী ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে। তারুণ্য যে নিজেদের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ ও অগ্রগামিতাই প্রত্যাশা করে, আইজিপি মহোদয় সেই বিষয়টিও সুনিপুণ দক্ষতায় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।’
গুজবের বিরুদ্ধে পুলিশের সপ্তাহব্যাপী সামাজিক আন্দোলনের ফলে দেশের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে মানুষের মধ্যে একটি গতিবেগের সঞ্চার হয়েছে। অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার দৌলতে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষিত ও সচেতন হচ্ছে গুজব সম্পর্কে।
সময় গড়াতেই একটি মহল বিশেষের উদ্দেশ্যমূলক আতঙ্কের দৌলতে প্রবল সঙ্কুল পরিস্থিতি নিজের কুশলী নেতৃত্বের দূরদৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ, আনন্দময় ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ যেমন তিনি নিশ্চিত করতে চান তেমনি সুখে, শান্তিতে, নিরাপদে থাকার মানুষের ন্যায্য অধিকারও পূরণ করতে চান।
এসব কারণেই পুলিশ প্রধান সোমবার (২৯ জুলাই) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, ‘স্বার্থান্বেষীরা নিজেদের স্বার্থেই গুজবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের বিরুদ্ধে সচেতন জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
পুলিশ গুজবের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা গুজবের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করছি। দেশের প্রতিটি থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গুজব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা সচেতনতামূলক সভা করছি। বাজার, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।’
এ সময় ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো: হাবিবুর রহমান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মুহিত উদ্দিন, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে