বিলুপ্ত ছিটমহল ও চরাঞ্চলের ৩৫ হাজার পরিবার পাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি
প্রকাশিতঃ 12:41 pm | August 05, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে প্রায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৮৬টি বিলুপ্ত ছিটমহল ও ৪০ উপজেলায় নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত ছিটমহল এবং নদীবিধৌত চরাঞ্চলের ৩৫ হাজার ২৮৮ পরিবারকে বিনামূল্যে দেয়া হবে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা দেশ জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ‘বিলুপ্ত ছিটমহল ও নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি তাদের কার্যালয়ে এসেছে।
তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি শুধু বিতরণ করলেই চলবে না, তার জন্য তদারকিও করতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত ফিল্ড ফ্যাসিলেটর নিয়োগ দিতে হবে।
জানাগেছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবারের কাছে আধুনিক প্রযুক্তিতে মুরগি, হাঁস, ছাগল, পাঁঠা, ভেড়া, বকনা গরু, কবুতর, কোয়েল ও টার্কি পালনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। বিনামূল্যে এসব গবাদি পশু-পাখি বিতরণও করা হবে। এছাড়া গরুসহ গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে উন্নত জাতের ঘাস চাষ, সাইলেজ প্রস্তুতকরণ এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনেও উৎসাহ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রাণিসম্পদ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩৫ হাজার ২৮৮ পরিবারকে ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে এসব পশু বিতরণ করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্থানীয় বাজার থেকে এসব পশু-পাখি কিনে নিয়ে বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারণ এতে প্রকৃত বাজারদর থেকে অনেক বেশি দামে গবাদিপশু কেনার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই বিতরণের জন্য সরকারি খামারগুলো থেকে বাজারদরে পশু-পাখি কিনতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা আরও জানান, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রংপুর বিভাগের ৪ জেলার ৯ উপজেলায় ৮৬টি বিলুপ্ত ছিটমহল এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীর ৯টি জেলার ৪০টি উপজেলাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সাল নাগাদ এর বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ‘প্রকল্পটিতে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবাদিপশু পালনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া হবে। এতে প্রকল্প এলাকার পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নে বড় ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলো সংশোধন করে পুনরায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি এলে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হবে।’
পিইসি সভায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য একটি সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রম নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়া প্রকল্পে শুধু গবাদিপশু বিতরণ করলেই হবে না। তাদের জন্য খ-কালীন ফিল্ড ফ্যাসিলেটর নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এজন্য তাদের মাসিক ৫ হাজার টাকা ভিত্তিতে ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে কমিশন।
ডিপিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতে মোট ১৬২টি ছিটমহল ছিল। ২০১১ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের ছিটমহলে বসবাসরত লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলে বসবাসকারী লোকসংখ্যা ১৪ হাজার। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতে এবং ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের অংশ বলে চূড়ান্ত হয়। অন্যদিকে নদীবিধৌত এলাকাগুলো হলো দেশের ৯টি জেলার ৪০টি উপজেলার ১০০৪টি চর।
কালের আলো/এআর/এমএম