রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আন্দোলন চালিয়ে যা’
প্রকাশিতঃ 11:07 am | August 15, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তখন কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই খবরে ওই সময়কার তরুণ ছাত্রনেতা আব্দুল হামিদ ৪ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি’
ওই সময় ট্রেন থামতেই সেখানে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছেছিলেন বর্তমান এ রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধু তাকে ‘হামিদ’ বলে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু কমপক্ষে ১২ মিনিট বক্তব্য রেখেছিলেন এবং যাওয়ার সময় পিঠ চাপড়ে তখনকার এ ছাত্রনেতাকে বলেছিলেন ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’
ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের স্মৃতিচারণধর্মী একটি লেখায় এমন তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন টানা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আব্দুল হামিদ।
আরও পড়ুন: জাতির স্বপ্নপুরুষকে নৃশংসতম হত্যার অশ্রুঝরা দিন
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে বলা হয় ‘ভাটির শার্দুল।’ কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি স্পিকার হিসেবেও তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আব্দুল আব্দুল হামিদ জাতির সংকটকালে হয়ে উঠেন সকলের আস্থার প্রতীক।
১৯৬৮তে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেন, ৭০এর নির্বাচনের গনপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন, ৭১সালে যোগ দেন গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ থেকে ৮৬, ৯১, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ এর প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিপুলভোটে বিজয়ী হন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে
জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন সবার কাছে। ২০১৩ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও বাবার ছেড়ে দেওয়া কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
অবিকল যেন বাবার মতোই হাওরের কাঁদামাটিতে চলতে চলতে বড় হয়েছেন, উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনে এগিয়েছেন এমপি তৌফিক। রাজধানী ঢাকার আয়েশী জীবন ছেড়ের মাসের কমপক্ষে ২০ দিনই তিনি হাওরের কোলে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সময় কাটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ শিক্ষা যে তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি বাবার কাছ থেকেই।
আরও পড়ুন: সেদিন কারা বহন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর লাশ?
বছর খানেক আগে একটি জাতীয় দৈনিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ লিখেছিলেন- এইটুকু সময়ের দেখায় বঙ্গবন্ধু আমাকে মনে রাখতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয়বার যখন দেখা হলো, দেখামাত্রই আমাকে চিনতে পারলেন তিনি এবং নাম ধরে ডেকে জড়িয়ে ধরলেন। অথচ সময়টা ছিল প্রতিকূল। তিনি ছিলেন বন্দি এবং রাতের বেলা আমরা ট্রেন থামিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সম্ভবত ১৯৬৭ সালের প্রথম দিকের কথা এটি, সিলেটে গিয়ে গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। খবর পেলাম, পুলিশ তাঁকে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে সিলেট থেকে ময়মনসিংহে নিয়ে যাবে। ততদিনে বঙ্গবন্ধু বাংলার অন্য সব নেতাকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছেন। এর আগের বছর ৭ জুন জীবনবাজি রেখে ছয় দফা ঘোষণা করে শাসকদের কাছে যেমন নিন্দিত হয়েছিলেন, তেমনি আপামর মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন বাংলার অধিকার আদায়ের প্রতিভূতে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর বুকে ছিল ২৪ টি বুলেটের ছিদ্র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এবং তিনিও দাবির পক্ষে জনমত গঠনের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো সিলেট গিয়েছিলেন।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে পাকিস্তানের পরিস্থিতি ছিল সংকটাপন্ন। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে আহূত বিরোধীদলীয় সভায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দেয়। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র নিয়ে সেখানে বিভিন্ন দলের নেতারা আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: শোকাবহ দু:সহ সেই স্মৃতি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা
আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ফেডারেল পদ্ধতির সংসদীয় সরকার এবং আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে এসেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সাবজেক্ট কমিটির বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবিনামা উপস্থাপন করেন। ওই দাবিনামা তখনও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভায় গৃহীত সুপারিশ ছিল না। ওই দাবি উত্থাপনের পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা তো বটেই, তাদের পূর্ব বাংলার তাঁবেদাররা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। তারা মুহূর্ত দেরি না করে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে চিহ্নিত করা শুরু করেন।
মহামান্য সেদিন লিখেন- ‘দলের সাধারণ সম্পাদক হলেও বঙ্গবন্ধু ছয় দফা উপস্থাপন করেছিলেন তার ব্যক্তিগত সুপারিশ হিসেবে। কয়েক সপ্তাহ পরই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ছয় দফাকে অনুমোদন করিয়ে নেন। ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল- প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: শোকাবহ দু:সহ সেই স্মৃতি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা
তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ছয় দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে। ছয় দফা ঘোষণার পর কারান্তরীণ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন এবং মোট সাড়ে ১১ বছর জেলে কাটিয়েছেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দু’বার। শুনেছি ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য।’
এরপর মহামান্য উল্লেখ করেন- ‘আমরা দারুণ উদ্বুদ্ধ ছিলাম তখন। সিলেট থেকে বঙ্গবন্ধুকে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হবে কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে- এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা চার-পাঁচ হাজার ছাত্র জড়ো হয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করে ফেললাম। সন্ধ্যা থেকেই আমরা স্টেশনে জড়ো হচ্ছিলাম।
রাত ১২টায় যখন ট্রেনটি এলো, তখন স্টেশনে তিলধারণের জায়গা নেই। আমরা তো মুজিব ভাইকে না দেখে, তার বক্তৃতা না শুনে ট্রেন যেতে দেব না। তাকে রাখা হয়েছিল ফার্স্ট ক্লাসের একটি কামরায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা কয়েকজন সেখানে গেলাম। ‘হামিদ’ বলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
বুঝলাম, একবারের দেখাতেই নেতা আমার নামটি মনে রেখেছেন। আমরা একটি হ্যান্ড মাইকেরও ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। সেই মাইক হাতে ট্রেনের বগির দরজায় দাঁড়িয়ে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি ১০-১২ মিনিট বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’
সত্তরের নির্বাচনে জয় আমাদের হয়েছে। ওই নির্বাচনের সময় মুজিব ভাই গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটি বুঝতে পারলাম। সত্তরের জানুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জে একটা জনসভা করেছিলাম আমরা। ততদিনে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে বিদায় নিয়েছি। লোকজনকে বলি আওয়ামী লীগ করি, কিন্তু কোনো কমিটিতে আমার জায়গা হয়নি। সভাপতির পদে না থাকলেও ছাত্রসংগঠন পুরোটাই আমি নিয়ন্ত্রণ করি।
ওই জনসভার আগে কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগ একটা মিটিং ডাকল। জনসভার জন্য অভ্যর্থনা কমিটি করা হলো। আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম আবদুস সাত্তার অ্যাডভোকেটকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হলো। আমাকে করা হলো সদস্য সচিব। জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে সেই প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হলো আমার। বঙ্গবন্ধুর মতো বাগ্মীর সামনে বক্তৃতা দেওয়া একটা দুঃসাহসের কাজ।
বঙ্গবন্ধু শুনলেন এবং পছন্দও করলেন। বোধ হয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে, সাধারণের ভাষায় যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টাকেই পছন্দ করেছিলেন তিনি। তাই সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছিলেন’ বলছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
তিনি আরো লিখেন- ‘সত্তরে আমিই ছিলাম আওয়ামী লীগের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী। বঙ্গবন্ধু অবশ্য প্রথমে আমাকে এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেমব্লি) নির্বাচন করতে বলেছিলেন। আমি ভাবলাম, ইলেকশন যদি করিই তাহলে এমপিএ কেন, এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি) ইলেকশনই করব। বঙ্গবন্ধুকে আমার এ ইচ্ছার কথা জানাতেই তিনি বললেন, মেসবাহ উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক জজকে আমার নির্বাচনী এলাকা (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) থেকে এমএনএ নির্বাচনের জন্য মনোনীত করে রেখেছেন।
মেসবাহ উদ্দিন সাহেবের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে পরে আমাকে সত্তরের নির্বাচনে প্রার্থী করা হয় এবং বয়স বিবেচনায় তৎকালীন পাকিস্তানে আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ প্রার্থী।
কিশোরগঞ্জে সত্তরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জনসভার পর এপ্রিল মাসে ঢাকায় এসেছিলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। এবার আমাকে দেখেই তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। সেই হাসি যেন থামেই না। ভাবলাম, আমার কাপড়-চোপড়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। তিনি যত হাসতে থাকলেন, আমার অস্বস্তিও তত বাড়তে থাকল। হাসতে হাসতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুর জজ মারা গেছে। আমি কি আর তোর কথা না রাইখা পারি। তুই তো আমার দাদা।’ বঙ্গবন্ধুর দাদার নাম যে শেখ আবদুল হামিদ সেটা তখনও আমার জানাই ছিল না।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আরো লিখেন- ‘জজ সাহেব নেই, তাই বঙ্গবন্ধু যে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন, এই খবর আব্বাকে জানালে তিনি খুবই অবাক ও যুগপৎ খুশি হয়েছিলেন। আমার আব্বা হাজী মো. তায়েবউদ্দিন সর্বদাই চাইতেন তার ছেলেরা সমাজের নেতৃত্ব দিক। আমার বড় ভাই মো. আবদুল গণি ছিলেন আমাদের ইউনিয়নের বিডি সিস্টেমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আব্বার পক্ষপাত ছিল আমার প্রতি। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তার ছেলে হামিদ, মিঠামইনের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধেও তিনি সূক্ষ্ণভাবে আমার পক্ষই নিতেন।
১৯৬৪ সালে বুনিয়াদি গণতন্ত্রের আদলে মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমে আইয়ুব খান বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং ফাতেমা জিন্নাহ পরাজিত হন। সেই সময় আইয়ুব খানের নির্বাচনী প্রতীক ছিল গোলাপ ফুল এবং ফাতেমা জিন্নাহর হারিকেন। আমার বড় ভাই গোলাপ ফুলের নির্বাচন করছেন, আমি হারিকেন। একই দিনে দুই ভাই ভোটারদের নিমন্ত্রণ করলাম।
এখন ভাই তো আমাকে ছাড় দেবেন না। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের লড়াইয়ে আব্বা মধ্যস্থতা করে বললেন, গণির যেহেতু আয়-রোজগার আছে, সে তার মেহমানদের অন্য কোনোখানে খানাদানা করাক, হামিদ বাড়িতেই আয়োজন করবে। মাছ-ভাত দিয়ে আমি ৭-৮ শত লোকের মেহমানদারি সেরেছিলাম সেদিন এবং আব্বা নীরবে আমাকে সমর্থন করেছিলেন।
সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পাওয়ার পর আব্বারও সমর্থন পেলাম। বঙ্গবন্ধু আব্বাকে আমার নির্বাচনী খরচ দেওয়ার জন্য বলে দিলেন। আব্বা আমাকে দুই কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তাছাড়া প্রায় ছয় মাস নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় পঞ্চাশ-ষাটজন লোকের, কোনো কোনো সময় একশ’-দেড়শ’ লোকের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হতো। আমি বঙ্গবন্ধুকে ধরেছিলাম আরও কিছু টাকা দেওয়ার জন্য বলে দিতে।
বঙ্গবন্ধু আমাকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, নির্বাচনের জন্য এত টাকা লাগে না। তবে বঙ্গবন্ধু ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীর জনসভায় আমার জন্য ভোট চাইতে গিয়েছিলেন। কোনো কোনো জায়গায় নৌকা থেকেও বক্তৃতা করলেন এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলাম। নির্বাচিত হলেও স্বাধীনতার আগে সংসদে যাওয়ার সুযোগ হয়নি আমাদের।
তবে সত্তরের ওই নির্বাচন আমাকে বঙ্গবন্ধুর মতো এক মহান নেতার আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিল এবং তার কাছ থেকে শিখলাম, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা। মানুষও আমাকে প্রতিদান দিয়েছে, আমার মতো প্রান্তবর্গীয় একজন সাধারণ মানুষ তাই দু’বার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিরল সুযোগ পেয়েছে।’
কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে