সেনাপ্রধানকে অনন্য সম্মান, ইন্দোনেশিয়ায় যেন এক টুকরো বাংলাদেশ!
প্রকাশিতঃ 11:05 am | August 21, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
ইন্দোনেশিয়া সেনা সদর দপ্তর। ছবির মতোই সাজানো ভবনটির সামনে সবুজ বিস্তৃত মাঠ। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম মুসলিম দেশটির সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার’ দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে নতুন দিগন্ত, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জেনারেল আজিজ-পারকাসা
বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী জেনারেল আব্দুল হারিস নাসুশনের নামাঙ্কিত ভবনটির বিশাল ইলেকট্রনিক জায়ান্ট স্ক্রিণে তখন যেন ভেসে উঠেছে এক টুকরো বাংলাদেশ!
বিশালাকৃতির এ স্ক্রিণের বাম পাশে ইন্দোনেশিয়া সেনাবাহিনী ও ডান পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোগো নিয়েছে ঠাঁই! এর ঠিক নিচেই আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্বার অগ্রযাত্রা এবং সেখানে নারীর ক্ষমতায়নের দৃশ্যকাব্য উপস্থাপিত হয়েছে। সঙ্গেই ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের সেই পতাকা।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর পরিদর্শনে সেনাপ্রধান, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা
ইলেকট্রনিক স্ক্রিণটিতে বড় করে লেখা ‘ওয়েলকাম। চীফ অব আর্মি স্টাফ অব দ্যা বাংলাদেশ আর্মি জেনারেল আজিজ আহমেদ টু ইন্দোনেশিয়ান আর্মি হেডকোয়ার্টার।’ ডান পাশেই বিশ্বশান্তি ও সংহতি জোরদারে জাতিসংঘের প্রতিটি ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়ানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের একটি উজ্জ্বল ছবি।
‘ইন্দোনেশিয়ান আর্মি হেডকোয়ার্টার’ ইংরেজি বাক্যটির ঠিক নিচে আবার জ্বলজ্বল করছিল দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত একটি ইউনিটের ছবি। যা প্রকারান্তরে এই বাহিনীর গৌরবময় অগ্রযাত্রারই পদধ্বনি।
মঙ্গলবারের (২০ আগস্ট) এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট যেন ঢাকা-জাকার্তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অসাধারণ ও অনন্য উচ্চতারই প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র চারতারকা জেনারেলকে ইন্দোনেশিয়ান সেনাবাহিনীর এমন সম্মানের আনন্দ অতুলনীয়। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে অপরিসীম এ আনন্দ চিরগৌরবেরও।
মানবজাতির জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর বলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির অবিসংবাদিত এ নেতার নেতৃত্বেই পাকিদের সম্মুখ সমরে পরাজিত করে হেঁট মস্তকে বীর বাঙালিদের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশকে আগেভাগে স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়াও একটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েও দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোপানে উন্নীত করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের চারদিনের সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান, ইন্দোনেশিয়া সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আন্দিকা পারকাসা ও ইন্দোনেশিয়া সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার এয়ার চীফ মার্শাল হাদি জাজান্তো’র সঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাত, সেনাপ্রধানকে সেই দেশের সেনাপ্রধানের উষ্ণ অভ্যর্থনা, সেখানকার সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দলের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানকালে বিরল সম্মান দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরো গতিশীল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এই অঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে পালন করবে প্রভাবকের ভূমিকা। একই সঙ্গে অবদান রাখবে বিশ্বের দুই বৃহত্তম মুসলিম দেশের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের কল্যাণে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই দেশের সেনাপ্রধানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় প্রশিক্ষণ বিনিময়, কাউন্টার টেরোরিজমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এবং অন্যান্য সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টিও।
আর ইন্দোনেশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তরে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার এয়ার চীফ মার্শাল হাদি জাজান্তোর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সাক্ষাতে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক হার্ডওয়্যার, যোগাযোগ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি কেনার সম্ভাব্যতা বিষয়ক আলোচনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (১৮ আগস্ট) ভোরে চারদিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। আগামী শুক্রবার (২৩ আগস্ট) তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে