২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল ময়মনসিংহে

প্রকাশিতঃ 4:55 pm | August 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল ময়মনসিংহে। বারুদ, রক্তমাখা বীভৎস এমন হত্যাযজ্ঞ সেদিন মেনে নিতে পারেনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের উর্বর ভূমি ময়মনসিংহ। প্রতিবাদ আর দ্রোহের আগুনে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল নগরী।

ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সেই আন্দোলনে সাধারণ মানুষও ছিল উদ্দীপ্ত। নারকীয় সেই গ্রেনেড হামলার রাতেই নগরীর শিববাড়ি রোডস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছিল। পুলিশি অ্যাকশনও সেদিন রুখতে পারেনি প্রতিবাদী মানুষের গর্জন।

মৃত্যুপুরীর সেই ঘটনার প্রতিবাদে বড় আকারে এই ময়মনসিংহেই প্রথম ঢাকা বিভাগীয় বিশাল মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগস্টের শেষের দিকে। কার্যত সেই সমাবেশ শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল জনসভায়। নগরীর সার্কিট হাউজ জিমনেশিয়ামের সেই খোলা মাঠও সেদিন যেন আবেগ উদ্দীপ্ত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।

‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরীর হুংকার আর মৃত্যুর সঙ্গে প্রায় ৫৮ ঘণ্টা লড়াই করে হেরে যাওয়া আইভী রহমানের স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিল্লুর রহমানের আবেগঘন সত্য-সাহসী উচ্চারণ ছিল সেই জনসভার ফোকাস পয়েন্ট।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ঘাতক-হায়েনার দল গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তবন্যা বইয়ে দেওয়ার পর ময়মনসিংহের সংগ্রামমুখর ইতিকথা নিয়ে এমন সব তথ্য উপস্থাপন করেছেন ওই সময়কার সরকারের দমন-পীড়নে জর্জরিত বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের নেতারা।

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ওই সময়কার সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির হিমেল বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে অসংখ্য দলীয় নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে নগরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জেলা ছাত্রলীগ।

‘নগরীর শিববাড়ি রোডস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নানা প্রান্ত ঘুরে চরপাড়া মেডিক্যাল কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়েছিল। সেই ঘটনার জের ধরে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে গণগ্রেফতার চালিয়েছিল। আমার মতো অনেকেই সেদিন পুলিশি অ্যাকশনের মুখে পড়েছিলেন। মিথ্যা মামলায় আসামি হয়েছিলেন।’

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় হত্যাযজ্ঞের খবর ময়মনসিংহে ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা ধ্বংস করতেই নারকীয় হামলা চালিয়েছিল ঘাতকের দল। আমরা এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ময়মনসিংহে জনসভা করেছিলাম। সেখানে প্রয়াত জিল্লুর রহমানের আবেগঘন বক্তব্য সবার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এ হামলার প্রতিবাদে প্রথম বড় আকারের সমাবেশের আয়োজক ছিল ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ। আগস্টের শেষের দিকে আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহকে এ জনসভার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠের জিমনেশিয়ামের সামনে হয়েছিল স্মরণকালের সেই জনসভা।

সেই জনসভার সঞ্চালক ছিলেন তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার। সেইদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সেই জনসভায় দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরও ঢল নেমেছিল। এ জনসভার ঢল থামাতে তৎকালীণ এসপি কোহিনুর গণগ্রেফতার চালিয়েছিলেন। কিন্তু জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার তিনি ঠেকাতে পারেননি।

‘সেদিন ঘাতকদের প্রধান টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। সেদিন নেত্রীর গাড়িতে ঘাতকরা বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়েছিল। আল্লাহর রহমতে পরিকল্পিত সে হামলায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। নেত্রী ওইদিন প্রাণে রক্ষা পেলেও শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল,’ বলছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

কালের আলো/বিএ/এমআরএ