‘ঘাতকদের ত্রাতা’ কার্লাইলকে খালেদার আইনজীবী করায় সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিতঃ 12:48 pm | March 23, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কট্টর সমালোচক লর্ড আলেকজান্ডার চার্লস কার্লাইলকে দুর্নীতির দায়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার আইনী পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে।

এমনকি বিএনপি’র শীর্ষ সারির আইনজীবীদের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই দলটির হাইকমান্ড হুট করেই মানবতাবিরোধী অপরাধী ‘ঘাতকদের ত্রাতা’ হিসেবে পরিচিত কার্লাইলকে চেয়ারপার্সনের আইনজীবী নিয়োগ করায় ভেতরে ভেতরে অনেকেই অনেকেই ক্ষুব্ধ।

এ বিষয়ে বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ও খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া স্বীকার করেন লর্ড কার্লাইলের নিয়োগের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা হয়নি। দলটির সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মামলটি এমন নয় যে বিদেশি পরামর্শক প্রয়োজন হতে পারে।’

মূলত হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষজনের কাছে আবারো একদফা বিতর্কিত হয়ে পড়লো দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এ রাজনৈতিক দলটি। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেই এজন্য দোষছেন অনেকেই। এমন কান্ড ঘটানোর মধ্যে দিয়ে দলটি আবারো ‘জামায়াতী ছকে’ পরিচালিত হচ্ছে কীনা এমন প্রশ্নও ওঠেছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে।

অবশ্য এ নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লর্ড কার্লাইল খালেদা জিয়ার ৩৬ টি মামলাতেই আইনজীবি হিসেবে পরামর্শ দেবেন। ব্রিটিশ লর্ড সভার এই সদস্যকে আইনজীবী নিয়োগের পেছনে প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলাটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় নেওয়ার উদ্দেশ্যও রয়েছে প্রয়োজন পড়লে তিনি বাংলাদেশে আসবেন।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বিচার ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন জামায়াতের অর্থে পরিচালিত লর্ড কার্লাইল। তাকে ধরা হয় একাত্তুরের নর ঘাতকদের ত্রাতা হিসেবে।

২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন কার্লাইল। জামায়াতের ওয়েবসাইটে ওই সময় সেটি গুরুত্ব দিয়ে পোস্ট করা হয়। তিনি মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া কসাই কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানদের বিকল্প নির্ধারণেরও সুপারিশ করেছিলেন। দফায় দফায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের জন্য লবিইং করেন।

পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসিত এ ইহুদি আইনজীবী প্রতারণা ও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের স্বার্থরক্ষায় দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডের জন্য কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও বিতর্কিত সাংবাদিক সালাউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীরও পৃষ্ঠপোষক। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী এবং বিএনপির পেইড লবিস্ট রিচার্ড বেনিনের ঘনিষ্ঠ।

দলটির একটি সূত্র দাবি করেছে, বিএনপি’র সিনিয়র আইনজীবীদের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মূলত এ কারণেই তিনি বিদেশী বিতর্কিত এ আইনজীবীকে নিয়েছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির পক্ষে লবিস্ট হিসেবেই তাকে কাজ করানো হবে।

তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে আরো জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে এই লর্ড কার্লাইল একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন। মূলত ওই সময় মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতেই ব্যর্থ ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের এই সদস্য সেমিনারের নামে ওই সময়কার নির্বাচনকে টার্গেট রেখে মূলত জামায়াতের অর্থায়নেই এক মঞ্চে বসাতে চেয়েছিলেন পরস্পর বিপরীতমুখী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতকে। আর এটি বুঝতে পেরে ওই সময় অনুষ্ঠান বর্জন করে আওয়ামী লীগ।

চরম সমালোচিত লর্ড কার্লাইলকে খালেদার আইনজীবি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ঘটনাকে জামায়াতকে বিএনপি’র আঁকড়ে ধরার কৌশল বলেই মনে করেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

এক সমাবেশে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘নিজের আইনজীবীর প্রতি কোনো বিশ্বাস নাই বলে খালেদা আজকে একজন বিদেশি আইনজীবীকে নিয়োগ করেছেন। সেই আইনজীবী একাত্তরের ঘাতক মীর কাসেম আলীর আইনজীবী ছিলেন। এটি প্রমাণ করে খালেদা জিয়া এখনো জামায়াতকে ছাড়ে ছাড়েনি, একাত্তুরের ঘাতকদের ছাড়েনি।’

একই ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, বিএনপি আবারও প্রমাণ করল, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের সময় তাদের অবস্থান যা ছিল, এখনও এক ও অভিন্ন। জামায়াত ও বিএনপির অবস্থান এক-অভিন্ন।

কালের আলো/এসএম/টিএ