ঘরের ছেলে ডিএমপি কমিশনার, চুয়াডাঙ্গায় আনন্দের ফল্গুধারা
প্রকাশিতঃ 9:08 am | August 29, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
নিজেদের ঘরের ছেলে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রধান ‘অধিকর্তা’। ফলে স্বভাবতই মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম কমান্ড গঠনের জেলা চুয়াডাঙ্গায় অবারিত আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে। নিজের পরিবার থেকে শুরু করে পাড়ার বাসিন্দা, উপজেলা, জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আনন্দ উচ্ছ্বাস যেন চোখে পড়ার মতোই।
আরও পড়ুন: সন্তান ডিএমপি কমিশনার, সুসংবাদ শুনে মা বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’
কেউ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন উচ্ছ্বাস ভরা হাসিতে, একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে। অভিনন্দন বার্তার ছড়াছড়ি চলছে ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে। সৎ, পরিচ্ছন্ন, পেশাদার, দক্ষ এবং যোগ্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ২৬ তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় ভীষণ খুশি।
তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, নিজের পেশাদারিত্ব ও যোগ্যতা দিয়েই ঢাকাকে নিরাপদ রাখার মিশনে অবশ্যই সফলতা অর্জন করবেন শফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: জ্যেষ্ঠ বন্ধুর জবানীতে নতুন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম
বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার নওদাবন্ড বিল দোয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
‘ডিএমপিকে বলা হয় পুলিশের আয়না। ঢাকা মহানগরীতে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশের প্রধান আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান। ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে পারবেন এবং বলিষ্ঠতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন একজনকেই এমন গুরুদায়িত্ব দেওয়ায় গোটা জেলায় উৎসব আনন্দ বিরাজ করছে’ বলছিলেন একাত্তুরের রণাঙ্গণের বীর সেনানী চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দিনগত রাত সোয়া ১১ টার দিকে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে নিজের জেলার বাসিন্দাদের এমন উচ্ছ্বাসের কথাই জানান তিনি। আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা লালনকারী, চৌকস ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে ডিএমপি কমিশনার করায় আমরা চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী গর্বিত। এ আনন্দ সীমাহীন।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচার বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর অষ্টম বিসিএস’র মাধ্যমে ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
ছাত্রজীবনে তিনি সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। চাকরিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলেও একজন সাবেক ছাত্রলীগার হিসেবেই তাকে খেসারত গুণতে হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে। দেশের দুর্গম এলাকায় তাকে ‘শাস্তিমূলক’ বদলি দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও দায়িত্ব পালনে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।
দীর্ঘ চাকরি জীবনে শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান এবং পরবর্তীতে সিআইডি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগুন সন্ত্রাসের উত্তাল সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বন্দরনগরীতে রাজনৈতিক সহিংসতা দমনে প্রশংসা কুড়ান।
ডিএমপি’র বর্তমান কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিদায়ের আগেভাগেই ডিএমপি’র সম্ভাব্য কমিশনার হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল তাঁর অগ্রভাগেই ছিলেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। পেশাদারিত্ব, মেধা, যোগ্যতা ও আদর্শিক কারণেই তাঁর নাম ঘোষণা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় সরকারের ‘গুডবুকে’ আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই স্থান করে নেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ডালিম কালের আলোকে বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান শফিকুল ইসলাম রাজধানী ঢাকা মহানগরী পুলিশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নিভৃতচারী এ মানুষটির চাকরি জীবনে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি পরশ পাথরের মতোন।’
‘আবার সামাজিক ও মানবিক কাজেও তাঁর অংশগ্রহণ রয়েছে। তিনি এলাকার গবির মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশুনার খরচ বহন করেন। দু:স্থ মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন’ যোগ করেন আরিফুল ইসলাম।
কালের আলো/এসআর/এএ