কার্লাইলকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা
প্রকাশিতঃ 9:19 pm | March 23, 2018
কালের আলো রিপোর্ট:
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ এনে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড এলেক্স কার্লাইলকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে গৌরব ’৭১ নামে একটি সংগঠন।
শুক্রবার শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে কার্লাইলকে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে এক মানববন্ধনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
গত ২০ মার্চ কার্লাইলকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেযার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এরপরই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কার্লাইলের অবস্থান সামনে আসে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
তিনি এই বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে নানা সভা, সেমিনার এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালির চেষ্টা করেছেন।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার’ জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি জানান লর্ড কার্লাইল। জেনেভাস্থ ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস-এর হাই কমিশনার নাভী পিল্লাই বরাবর লিখিত এক চিঠিতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চেয়েছিলেন লর্ড কার্লাইল।
আলবদর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করার দাবিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও লিখেছিলেন ব্রিটিশ এই আইনজীবী।
২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে ‘গ্রহণযোগ্য’ সরকার গঠনে উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুরোধ করেছিলেন লর্ড কার্লাইল।
কার্লাইল জামায়াতের লবিস্ট ছিলেন অভিযোগ করে তাকে নিয়োগ দেয়ায় বিএনপির সমালোচনা করেছেন স্বা্স্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে তবে কার্লাইল এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, তিনি জামায়াতের লবিস্ট ছিলেন না। এরপরও এই ধরনের কথা বলে গেলে আইনি ব্যবস্থা না নেয়া ছাড়া তার বিকল্প থাকবে না।
গৌরব ৭১ নামে সংগঠনের মানববন্ধনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ কার্লাইলকে আইনি পরামর্শক নিয়োগ দেয়ায় বিএনপির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এত বড় বড় আইনজীবী থাকতে লর্ড কার্লাইলকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্য দেশের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।’
‘তিনি সারা পৃথিবীতে প্রচার করবেন বাংলাদেশে আইনের শাসন নাই, বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই।’
‘তিনি বলবেন, এগুলো সাজানো মামলা। মীর কাসেম আলীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বন্ধ করার জন্য এই মানুষটা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ লড়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’
‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাকে আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেব না।’
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপি পৃথিবীর যে কোনো আইনজীবীকে নিয়োগ দিক, সেটা নিয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই। এটা তার মৌলিক অধিকার, তিনি এটা পারেন। আমাদের আপত্তি হল সারা পৃথিবীতে এত আইনজীবী থাকতে আপনারা কেন খুঁজে খুঁজে জামায়াতে ইসলাম যাকে নিয়োগ দিয়েছে তাকেই আইনজীবী নিয়োগ করতে হলো?’।
কবি ও লেখক অসীম সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে কোনো অবস্থাতেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি লর্ড কার্লাইলকে আসতে দেবে না।’
‘একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের আইনজীবী যে ব্যক্তি সমস্তভাবে আমাদের বিরুদ্বে দাঁড়িয়েছেন, পরীক্ষিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তাকে আমরা কী করে বাংলাদেশে ঢুকতে দেব? এটা আমরা কখনও হতে দিতে পারি না।’
‘যদি এখনই এই আইনজীবীকে প্রত্যাখ্যান করা না হয়, কোনো অবস্থাতেই আমাদের কলম কিন্তু থেমে থাকবে না। আমাদের কলম কিন্তু তাহলে অস্ত্র হয়ে উঠবে। তখন কিন্তু খালেদা বা তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাংলাদেশের মাটিতে স্থিরভাবে থাকতে পারবেন না।’
কালের আলো/এএমএ