মাঝারি উড়োজাহাজে নাইজার হয়ে বামাকোতে (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 4:00 pm | September 05, 2019

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো, বামাকো (মালি) থেকে :

সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কটেজ বাড়ি। বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও ব্যস্ততম ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের ঠিক পাশের এমন দৃশ্য অপরূপ। এ শহরেই কীনা ঐতিহ্য আর আধুনিকতার নয়নাভিরাম উপস্থাপনায় দৃষ্টি আটকে থাকে হরদম। চোখ আর চেতনার সম্মিলন। সুলতান সুলেমানের এক সময়কার রাজত্বের কেন্দ্রস্থল বলে কথা!

আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে আকাশযাত্রায় বিশ্বের সবুজ বিমানবন্দর ইস্তাম্বুলে

ইস্তাম্বুলের সঙ্গে বাংলাদেশের সময় পার্থক্য তিন ঘন্টা। দীর্ঘ ৬ ঘন্টার ট্রানজিট শেষে সোমবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ইস্তাম্বুলের সময় বিকেল ৫ টা ৫৫ মিনিটের দিকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের মাঝারি আকারের উড়োজাহাজটি উড়ার কথা থাকলেও রানওয়েতেই সময় নিলো প্রায় আধা ঘন্টা।

সেখানে কয়েক দফা চক্কর শেষে আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের মরুময় নাইজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা। যাত্রাপথে আসনের সামনের স্ক্রিণে দেখানো হচ্ছে সুবিশাল আকারের ইস্তাম্বুল বিমান বন্দর থেকে নাইজারের রাজধানী নিয়ামির বিমানবন্দরের দূরত্ব ৪ হাজার ২২ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন: বামাকো শহরে সড়কে নেই বিশৃঙ্খলা, রাজত্ব ছোট যানের

উড়োজাহাজটির পুরোটা জুড়েই আফ্রিকানদের আধিক্য। ঘোষণা দেওয়া হলো প্রায় ১০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ছে এ এয়ারক্রাফট। প্রতি ঘন্টায় গতি ৮৫৫ কিলোমিটার। রাত ১০ টা ২ মিনিটে নিয়ামির দিয়োরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্পর্শ করলো উড়োজাহাজের চাকা। তখন বাংলাদেশের সময় রাত ৩ টা। মনিটরের স্ক্রিণে ভাসছে তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন: দালালে প্রতারিত হয়ে বামাকোতে, সফলতার উদাহরণ সেই সালাহ উদ্দিন

টার্কিশ এয়ারলাইন্সের এ ফ্লাইটটি এ বিমানবন্দরে অবতরণের আগে ৪০৬ ফুট উঁচু থেকে রাতের আকাশে সেখানকার সড়কের যানবাহনগুলোকে টিমটিম সন্ধ্যা তারার বাতির মতো দেখাচ্ছিল। আবারো এখানে প্রায় ঘন্টাখানেকের ট্রানজিট। প্রতি মুহুর্তের আপডেট দিচ্ছে মনিটর।

প্রায় ১২ লাখ ৬৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের নাইজারের পশ্চিমে বুরকিনা ফাসো ও মালি। এরপর মাত্র দেড় ঘন্টায় বিশ্বের ২২তম বৃহত্তম দেশ নাইজারের এ বিমানবন্দর থেকে মালির রাজধানী বামাকোতে উড়ে এলো টার্কিশ এয়ারলাইন্স।

আরও পড়ুন: বামাকোতে মিঠেকড়া রোদের পর তুচ্ছাতিতুচ্ছ বৃষ্টি!

বিমানবন্দরে আগে থেকেই খবর ছিল মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন পরিদর্শনে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের আসার বিষয়টি। এরপর প্রতিনিধি দলটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঘেঁটে স্বল্প সময়েই ভিসা দেওয়া হলো।

বিমানবন্দরেই আমাদের স্বাগত জানালেন মালির প্রভাবশালী ডেপুটি স্পিকার মামাদো সিমপারা। তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে আমরা ছুটলাম বামাকোতে আমাদের গন্তব্যে। প্রায় ২৪ ঘন্টার যাত্রায় সবাই ক্লান্ত। কিন্তু তাৎক্ষণিক লাগেজ না মেলার বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হলো।

টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আয়েশি এ উড়োজাহাজটিতে সহজেই লাগেজ না পাওয়ার কথা সবার মুখেই শোনা যায়। তবে আগে থেকেই হ্যান্ড ব্যাগে প্রয়োজনীয় পোশাক থাকায় খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হলো না। মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১ টার দিকে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়লো একজন।

‘আপনাদের লাগেজ এসেছে। দেখে বুঝে নিন।’ ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার মতো আনন্দে আমাদের সহকর্মীদের বিছানা ছেড়ে পড়িমড়ি করে দরজায় ছুটে যাওয়া। স্বভাবতই লাগেজ মেলার খুশিতে উবে গেলো ২৪ ঘন্টার সেই যাতনা! টেনশনবিহীন এক ঘুমের মহোৎসব। সাত সকালেই ফুরফুরে মেজাজে পুনরায় কাজে নেমে পড়ার মন্ত্রই যেন সফর সঙ্গীদের মনে!

কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে