গৌরবের ২৬শে মার্চ আজ
প্রকাশিতঃ 1:09 am | March 26, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আজ গৌরবের ২৬শে মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনেই স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে রক্তাক্ত পথচলা শুরু বাংলাদেশের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের যোগ্যতা অর্জনকারী বাংলাদেশে আজ ৪৭তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে মন্ত্রমুগ্ধ বাঙালি এই দিনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির যুদ্ধে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষ। রাইফেল হাতে ছুটেছিল দামাল ছেলে। ৯ মাসের গণযুদ্ধের পর এসেছিল বিজয়। উড়েছিল বিজয় নিশান। ১৬ই ডিসেম্বর সূচিত বিজয়ের আগে এই উত্তাল মার্চই হয়ে উঠেছিল প্রেরণার উৎস, অভিযাত্রার শুরু।
গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন হয়েছে দেশজুড়ে। আজ লাল-সবুজ পতাকা হাতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অভিবাদন জানাচ্ছে জাতি। আজ এগিয়ে চলার প্রত্যয় নেবে দেশের মানুষ। জাতি আজ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য প্রাণোৎসর্গকারী বীর সন্তান, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, গণহত্যায় প্রাণ দেওয়া লাখো সাধারণ মানুষ ও ইজ্জত হারানো মা-বোনদের। আজ সরকারি ছুটি।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের সময় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।
সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারা দেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময় শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এর আগে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙিন পতাকায়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ভূখণ্ডের সমন্বয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র লড়াই শুরু হয়েছিল এই দিনে। আর এরই ধারাবাহিকতায় অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য আজও দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে যাত্রা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন তাও আজ বিনষ্ট করে গণতন্ত্রের নামে কর্তৃত্ববাদী অপশাসন চালু করা হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট বের করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আছে আজ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। আগামীকাল বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে।
কালের আলো/এমএ