জঙ্গিবাদ রুখে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় মহান স্বাধীনতা দিবসে

প্রকাশিতঃ 7:33 pm | March 26, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জাতি পালন করেছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। সোমবার (২৬ মার্চ) দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার দিনটি পালন করে গোটা জাতি।

এদিন সূর্যের আলো ফুটার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাধীনতার বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে দেশবাসী। মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প উৎপাটনের দৃপ্ত শপথ নিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় পুরো জাতি মহান এ দিবসটি পালন করে।

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সকাল ৬ টায় সেখানে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁরা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

পরে সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন শরীরচর্চা প্রদর্শন করে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর কারও কাছে হাত পাতবে না। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। এসময় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু এটাই চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যেই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি আর আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে যাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় এসে অসমাপ্ত কাজে হাত দিই। আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমরাই আগামীতে দেশ চালাবে। তোমাদের মধ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী হবে। এজন্য তোমরা দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসবে। আমরা যেখানে রেখে যাবো সেখান থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ছিল মানুষের ঢল। ভোরের আলো ফুটার সঙ্গে সঙ্গেই একাত্তুরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে জড়ো হন লাখে মানুষ। এদিন দুপুর পর্যন্ত সেখানে ছিল জনারণ্য। এ সময় সেখানে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। স্মৃতির বেদী ভরে যায় পরম শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে।

 

কালের আলো/আরএম/এসএস