বামাকোতে মিঠেকড়া রোদের পর তুচ্ছাতিতুচ্ছ বৃষ্টি!
প্রকাশিতঃ 9:14 am | September 17, 2019
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো, বামাকো (মালি) ঘুরে এসে :
অন্তত তাঁতানো গরম নেই বামাকোতে। এখান থেকে ১৭০০ কিলোমিটার দূরের কিদালে আগুনের হল্কার মতো গরমে শরীর ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা হলেও ঠিক যেন বিপরীত চিত্র পশ্চিম আফ্রিকার মরুর দেশ মালির এ রাজধানীর। গাঁও আর কিদাল শহরের খরতাপে টেকার জো না থাকলেও মোটেও রোদের তেজ নেই এই বামাকোতে।
আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে আকাশযাত্রায় বিশ্বের সবুজ বিমানবন্দর ইস্তাম্বুলে
মরুভূমির দেশের প্রধান নগরী হলেও আকাশছোঁয়া ধুলি ও বালির মেঘের মরুঝড় হয় না নাইজার নদীছোঁয়া এ শহরে। উল্টো বর্ষাকালে নিত্যদিন এখানকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা গিয়ে ঠেকছে ২৪ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
মরুভূমির কাঠপোড়ানো রোদের দেশের রাজধানীর এমন রোদকে অনেকেই বাংলাদেশের শীতকালের মিঠেকড়া রোদের সঙ্গেই তুলনা করলেন। আবার এমন রোদ উধাওা হয়ে যায় নিমিষেই। যেমনটি ঘটেছিল সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে।
আরও পড়ুন: মাঝারি উড়োজাহাজে নাইজার হয়ে বামাকোতে
চিকচিক করা রোদ হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে আকাশে মেঘ গুড় গুড় না করেই নেমে এলো ঝুপঝাপ বৃষ্টি।
বৃষ্টিতে ভিজলো বামাকোর নাগরিক, বাসিন্দা, পথচারী ও পিচঢালা সড়ক। মরুর দেশে বৃষ্টিতে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একটি কথা মনে পড়ে গেলো। রিমঝিম বৃষ্টিতে মনে মনে উচ্চারণ করছিলাম ‘হাজার বছরের ওপার থেকে নেমে এলো বৃষ্টি।’
আরও পড়ুন: বামাকো শহরে সড়কে নেই বিশৃঙ্খলা, রাজত্ব ছোট যানের
বামাকো নগরীতে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হুলস্থুল কোন ছুটোছুটি নজরে এলো না। বাংলাদেশে বৃষ্টির মৌসুমে বিরামহীন ভারী বৃষ্টির দাপট থাকলেও বামাকোর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে বৃষ্টি মৌসুম চললেও বৃষ্টির স্থায়ীত্ব ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আরও পড়ুন: দালালে প্রতারিত হয়ে বামাকোতে, সফলতার উদাহরণ সেই সালাহ উদ্দিন (ভিডিও)
মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন পরিদর্শনে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলেরও মন কাড়লো এ বৃষ্টি। বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল হয়ে বামাকোতে পা রাখার পরই জানতে পেরেছিলাম এখানকার বৃষ্টির মাজেজা সব থেকে অন্য রকম।
মিনিট দশেক মুষলধারে বৃষ্টির পর ক্রমশ কমে আসে তীব্রতা। মেঘের বিষন্নতার বদলে টিপটিপ বৃষ্টির মুগ্ধতার রেশের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আসা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন এ প্রতিনিধি দলটি ‘টিমওয়ার্কের’ মতোই নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ সেরে ফেলে।
তবে একপশলার মতো এমন বৃষ্টিতে বামাকোর সড়ক চষে বেড়ানো মোটরবাইক চালকরা যেন সামান্য বিড়ম্বনার মুখে পড়লেন। বৃষ্টিতে অনেকে মোটরবাইক থামিয়ে যারপরেনাই আশ্রয় নিলেন গাছের নিচে। কিন্তু নাগরিক জীবনে ছন্দপতন ঘটিয়েছে বৃষ্টি, এমনটি বলা যাবে না মোটেও।
বামাকোর স্থানীয়দের অনেকেই আবার ভিজে একাকার হয়েই বৃষ্টির ভেতরে ছুটে চলছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এমন বৃষ্টিতেই যেন অভ্যস্ত এখানকার নাগরিকরা! অবশ্য বৃষ্টি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ ছাতার ব্যবহার চোখে পড়লো না বামাকো শহরে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্যান্য মফস্বলের জেলাগুলোতে সচরাচর অনেক মোটরবাইক চালক ঘাড় আর কাঁধের মাঝখানে ছাতা নিয়ে গন্তব্যে ছুটলেও এমন চিত্র অনুপস্থিত মার্সিডিস বেঞ্জ এবং বিএমডব্লিউর ছড়াছড়ির এ শহরে।
নিম্ন আয়ের মানুষজন হলেও বামাকোর বিভিন্ন সড়কের পাশে এমন দামি ব্র্যান্ডের বিলাসী যান নজর কাড়ে।
অবশ্য মরুর দেশে আমাদের দেশের মতো রসে টইটুম্বর বর্ষায় প্রকৃত সৌন্দর্যের কোন দেখাই মিলে না। আপ্লুত করে না প্রকৃতি ও বাস্তবতায়। যদিও সামান্য বৃষ্টিতে বামাকো শহরের প্রধান সড়কে পানি না জমলেও অলিগলিতে ঠিকই পানি জমে প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে।
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে