সিন্ডিকেটের মাথায় হাত, সোহাগ-জাকিরের রইলো বাকী এক মাস!
প্রকাশিতঃ 11:20 am | April 01, 2018
পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :
আর শেষ রক্ষা হলো না কথিত সেই সিন্ডিকেটের। তাঁরা পেছাতে পারেনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন। মাসখানেকের মধ্যেই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস.এম.জাকির হোসাইনকে।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি’র দু’শীর্ষ নেতাকে আরো কিছুটা সময় স্বপদে বহাল রাখতে প্রথম দফায় সিন্ডিকেট সফলতার পরিচয় দিলেও এবার রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে তাদের। আর এমনটি হয়েছে মূলত কর্মী বান্ধব, ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের প্রাণের দাবি আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেয়ায়।
আগামী মে মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে উপমহাদেশের সব থেকে প্রাচীন এ ছাত্র সংগঠনটির দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সম্মেলন। শনিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন করতে এমন নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় ছাত্রলীগের আগামী সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১১ মে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এস.এম.জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ হবে দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে সংসদের কার্যকারিতা থাকবে না।
কিন্তু সোহাগ ও জাকিরের নেতৃত্বে কমিটি পেরিয়ে যায় দুই বছর আট মাস। এর আগেই গঠনতন্ত্র মেনে সম্মেলন না হওয়ায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভের তুবড়ি ফুটান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ। তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ হন। সম্মেলন দাবিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতার মাসে সম্মেলন করতে নেত্রীর ইচ্ছার কথা জানান। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। এতে করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। সূত্র বলছে, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কথিত ওই সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে সম্মেলন পেছাতে। তাঁরা প্রথম দফায় সফলও হয়। দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন হয়নি। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেট’র যুক্তি ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুনদের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে বিপদজনক।
এরপর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম.সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন থেকে শুরু করে তাদের অনুসারী-অনুগামীরাও প্রচার দিতে থাকে ‘যথাসময়ে’ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তাদের এ ‘যথাসময়’ তত্ত্বের মূল ভাষ্যই ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন।
সূত্র মতে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাবেক কেন্দ্রীয় এক ছাত্রলীগ নেতা এসব ক্ষেত্রে আগাগোড়া বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই নেতার ‘খায়েশ’ অপূর্ণই থেকে গেলো। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলনের ‘ডেটলাইন’ নির্দিষ্ট হওয়ায় না কী বেশ হতাশই হয়েছেন এক সময়কার দাপুটে ওই নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের দু’টি বলয় থেকে সোহাগ ও জাকির সংগঠনটির শীর্ষ দু’পদে এলেও কমিটি গঠনের পর পরই তাদের সম্পর্কে অপ্রকাশ্য ভাঙন তৈরি হয়। সম্প্রতি সম্মেলন ইস্যুতে দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কের বৈরীভাব কেটে যায়। একাধিকবার তাঁরা এবং তাদের অনুসারীরা দু’জনের হাস্যেজ্জ্বল ফ্রেমবন্দি ছবি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে নিজেদের সম্পর্কোন্নতির কথা জানান দেন।
তারা তো বটেই তাদের ভক্ত-অনুরক্তরাও নিশ্চিত ছিলেন নেতৃত্বে বহাল থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তারা নির্বিঘ্নে পাড়ি দিবেন। কিন্তু তাদের ইচ্ছাও পূরণ হলো না। এ নিয়ে হতাশার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা, এমন আলাপচারিতা চলছে সবখানে।
সূত্র মতে, শনিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান সভায় ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন না হলে বয়সের কারণে অনেকেই ছিটকে পড়বেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই সঙ্গে আব্দুর রহমান এও বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন হলে সংগঠন গতিশীল হয়। নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। তাই ছাত্রলীগের সম্মেলন যথা সময়ে হওয়া উচিত।’
সূত্রের দাবি, আব্দুর রহমানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দলীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্মেলন মে মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই যেন করা হয়।’ এ সময় মে মাসের ১১ তারিখে ছাত্রলীগের সম্মেলন করা যায় কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করা ও রমজানের আগেই এ সম্মেলন করারও নির্দেশনা দেন দলীয় সভানেত্রী।
কালের আলো/এসএস/এএ