শৈশব থেকেই জনসেবা শিখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 2:15 pm | April 01, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

লেখাপড়ার পাশাপাশি শৈশব থেকেই জনসেবা শিখে সারা জীবন তার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মানুষের পাশাপশি জীব-জন্তু আর দেশকে ভালোবেসে মমত্ববোধ নিয়ে কাজ করে যাওয়ার তাগাদাও দিয়েছেন সরকার প্রধান।

রোববার সকালে চাঁদপুরের হাইমচরে বাংলাদেশ স্কাউটের সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প-কমডেকার ষষ্ঠ আয়োজন উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্কুলে আমরা স্কাউটের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইউনিট গড়ে তোলার তাগাদা দেন। আর এই সম্প্রসারণ কাজে সব ধরনের সহযোগিতার ওয়াদাও করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলন, ‘আমি চাই প্রতিটি স্কুলে স্কাউট বা রোভার স্কাউট কর্মসূচিটা থাকুক। তাহলে আমাদের ছেলে মেয়েদের তারা যেন নিয়মানুবর্তিতা শিখতে পারবে, মানুষের সেবা করতে পারবে।’

‘লেখাপড়া আমরা করব, সেই সঙ্গে জনসেবা করা, সেটা ছোট বেলা থেকেই আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে। সেই সাছ লেখাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা থাকবে।’

বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন। বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ষষ্ঠ কমডেকার প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

এরপর শেখ হাসিনা কমডেকা স্কার্ফ, টুপি ও ব্যাচ পরিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সালাম দেয় স্কাউটের বিভিন্ন ইউনিট।

এই ষষ্ঠ কমডেকায় সারাদেশ থেকে সাড়ে সাত হাজারের মতো স্কাউট অংশ নিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দুই দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা একজন স্কাউটও এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে ১৯০৭ সালে স্কাউটের প্রথম সূচনা হয়। অবিভক্ত ভারতে এটা হয় ১৯২০ সালে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ বয়েজ স্কাউট সমিতি হয়। ১৯৭৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বয়েজ স্কাউট সমিতির নাম হয় বাংলাদেশ স্কাউটস।

বাংলাদেশে মোট স্কাউট সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৮। এদের মধ্যে দুই লাখ গার্ল স্কাউট।

স্কাউটিং বাড়াতে চান প্রধানমন্ত্রী

স্কাউটদের সংখ্যা ও তাদের কাজের পরিধি আরও বাড়াতে চান শেখ হাসিনা। জানান, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই স্কাউট শতাব্দী ভবন নির্মাণ, স্কাউটিং সম্প্রসারণের জন্য ১২২ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কাউটিং সম্প্রসারণের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

পাশাপাশি জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য ৯৫ একর বনভূমি ব্যবহারের অনুমতিও দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ও অঞ্চলে স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

স্কাউটদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিভিন্ন দুর্যোগ দুর্বিপাকে দুর্গত মানুষের পাশ দাঁড়ায় স্কাউটরা। তাদের কার্যক্রম দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগে, আমি মুগ্ধ হই। বহির্বিশ্বে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড ও ক্যাম্পে আমাদের স্কাউটদের অংশগ্রহণ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।’

‘তোমাদের সেবাধর্মী কার্যক্রম আমি চাই আরও বিস্তৃত হোক, বৃদ্ধি পাক। স্কাউটিং এর সুফল সকল পর্যায়ে পৌছাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এবং কমিউনিটি ভিত্তিক স্কাউটিং আরও সম্প্রসারণ করতে হবে।’

‘প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে অন্তত দুটি করে কাব স্কাউট, স্কাউট এবং রোভার স্কাউট ইউনিট চালু করতে ও সহশিক্ষা ও মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে গার্ল ইউনিট করতে আমি অনুরোধ করছি। এর জন্য যা যা দরকার, সব ধরনের সহায়তা আমরা দেব।’

‘স্কাউট কার্যক্রম উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা আমি দিয়ে যাব, এটা আমি ওয়াদা করছি।’

নেতৃত্বের জন্য গড়ে উঠতে হবে

শিশু কিশোরদেরকে আগামী দিনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে তৈরি হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। তোমরাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে এবং সে গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে সেদিনে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবে।’

‘আজকে যারা শিশু, কিশোর, আগামীতে তোমরাই হবে এ দেশের কর্ণধার। কাজেই তোমাদের সেইভাবেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে যেন তোমরা এই দেশ পরিচালনা করতে পার।’

‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ তোমরা যেন গড়ে তুলে ধরে রাখতে পার, সেটাই আমরা চাচ্ছি।’

‘ছেলেমেয়েরা যাতে সুশিক্ষা পায়, সুস্বাস্থের অধিকারী হয়, তাদের মন মানসিকতা যেন আরও উন্নত হয় এবং সৃষ্টিধর্মী হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা শিক্ষা দিতে চাই।’

দেশ, মানুষ জীবে প্রেম থাকতে হবে

শিশু কিশোররা দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে, এটাই চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নিজে যোগ্য করে গড়ে উঠতে হবে দেশের জন্য। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, মানুষেরকে ভালোবাসতে হবে।’

‘ইতিমধ্যেই তোমরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এই কাজটা যখন তোমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তখনও ভুলে যাবে না। তখনও যেন এই মানসিকতাটা থাক।’

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’-কবির এই বক্তব্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ এবং জীবজন্তু থেকে শুরু করে সকলের প্রতি মমত্বরোধ থাকতে হবে। আর দেশকে ভালোবাসতে হবে।’

‘দেশের প্রতি মমত্ববোধ থাকতে হবে আর দেশকে গড়ে তোলার জন্য সব সময় মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

বক্তৃতা পর্ব শেষে কমডেকা পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুনের সঙ্গে কমডেকা ফেস্টুন অবমুক্ত করেন। পরে স্মারক ডাক টিকিট উন্মোচেন করেন তিনে।

এরপর হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং উন্নয়নের চেষ্টা তুলে ধরা হয় এই আয়োজনে।

আয়োজকরা জানান, আগামী বেশ কয়েকদিন ওই এলাকায় থেকে স্কাউটরা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর পাশাপাশি কৃষিকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারসহ সামাজিক নানা কাজে স্থানীয়দেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন।

 

কালের আলো/এমএ