ডিএমপি কমিশনারের কথার সঙ্গে কাজের মিল
প্রকাশিতঃ 10:29 pm | September 30, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
থানার ওসিদের আচরণগত সমস্যার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই থানায় গিয়ে যথাযথ সেবা পায়না। সপ্তাহ দুয়েক আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে যারপরেনাই গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম।
নিজের প্রথম প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, আমাদের থানায় যারা কাজ করছেন তাদের আচরণে যদি কাঙ্খিত পরিবর্তন না হয় তাহলে আমাদের সিনিয়র অফিসাররা থানায় গিয়ে বসা শুরু করবে। আমি নিজেও থানায় গিয়ে ওসি-গিরি করব। আমরা আমাদের ডিসিদের থানায় বসিয়ে দেব এবং অন্য যে অফিসাররা আছেন তারা সপ্তাহে একদিন থানায় উপস্থিত থাকবেন।
এরপর কেটে গেছে ১৫ দিন। ৫০টি থানা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিটের অবস্থা কী? ডিএমপি কমিশনার যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথার বাস্তব প্রতিফলন কতটুকু- এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজ-খবর নিয়েছে কালের আলো।
দেখা গেছে, নতুন ডিএমপি কমিশনারের কথার সঙ্গে কাজের মিল রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এখন থানাতে নিয়মিত হয়েছেন ডিএমপির ৮টি ক্রাইম বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিরা। এতে করে থানায় সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানতে চাইলে রমনা বিভাগের ধানমন্ডি থানার পুলিশ পরিদর্শক কামরুন্নাহার কালের আলো.কমকে বলেন, আমি বেশির ভাগ সময় থানাতে ডিউটি অফিসার হিসেবে বসি। আমার জোনের এসি-এডিসি স্যারসহ নতুন যোগদান করা ডিসি স্যারও নিয়মিত আসেন। এমনকি তারা এসে ডিউটি অফিসারের রুমেও বসেন।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, স্যাররা নিয়মিত আসলে আমাদের মধ্যেও ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে থানায় যারা আসেন তারা সঠিক সেবা পান।
তেজগাঁও বিভাগের শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক লিটন মাতব্বর বলেন, থানাতে মাসে ২/৪ বার ডিসি স্যার আসেন। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনার পর স্যাররা আরও নিয়মিত হয়েছেন।
মতিঝিল বিভাগের পল্টন থানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থানাতে আগত সাধারণ মানুষেরা সঠিকভাবেই সেবা পাচ্ছেন।
এ থানায় জিডি করতে আসা একজন কালের আলো’কে বলেন, তিনি একটি সমস্যায় পড়ে এসেছিলেন। এসআই যিনি ছিলেন তিনি বিষয়টি বুঝতে না পেরে সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) কাছে নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার সহযোগিতায় আমার কাজটা সম্পন্ন হয়।
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, আমরা সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত থানায় বসছি। থানায় যারা আসছেন তাদের সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ যেন থানাতে এসে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করি।
সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে আইন অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে ডিসিদের- এমন নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে জানতে চাইলে লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুনতাসির ইসলাম বলেন, ডিএমপি কমিশনার স্যার আমাদের যে ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন সেটা আমরা মেনে চলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে দিনে একাধিক থানায় বসছি। আগেও বসতাম, তবে নির্দেশনা আসার পর সেটা আরও বেগবান হয়েছে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে আমরা প্রত্যেক অফিসারই, ডিসি, এডিসি, এসি স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন থানায় যাচ্ছি। আমরা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলছি। এমনকি তারাও যখন আমাদের অফিসে আসছে তখন আমরা তাদের সময় দিচ্ছি এবং কোনভাবেই যাতে তাদেরকে হয়রানি না করা হয় তা দেখছি।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আগে দেখা যেত কোন মামলা বা জিডি হলে অফিসাররা কাজের চাপে এটাতে তাৎক্ষণিক একটা এটেনশন দিতো না। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন কোন মামলা বা জিডি হলে যখন তা অফিসারকে এনড্রোস করা হচ্ছে সাথে সাথেই সে যাতে বাদীর সাথে কথা বলে, ঘটনাস্থল অবশ্যই যাতে ভিজিট করে। কারন বাদীর সাথে কথা বললে বাদি আশ্বস্ত হয়।
কালের আলো/এনএল/এমএইচএ