কেন ‘অনুপস্থিত’ সোহাগ-জাকির?

প্রকাশিতঃ 12:09 pm | April 06, 2018

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো:

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আমন্ত্রণপত্রে বিশেষ অতিথি হিসেবে নাম ছিলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনের।

নির্ধারিত সময়ে বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে বুটেক্স অডিটোরিয়ামে সম্মেলনের প্রধান অতিথি বর্ষীয়াণ আওয়ামী লীগ নেতা মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল উপস্থিত হলেও অনুষ্ঠানে আসেননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দু’শীর্ষ নেতা। শেষ পর্যন্ত তাদের ছাড়াই শেষ করতে হয়েছে সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করার এ কর্মসূচি।

ফলে দলের কর্মী থেকে শুরু করে নেতা পর্যন্ত সবার মাঝেই প্রশ্ন ওঠেছে, বেশ ঘটা করে মাত্র ক’দিন আগে যে কর্মসূচির সূচনা করলেন ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সেই তারাই এখন কেন ‘অনুপস্থিত’? বুকভরা অভিমান, হতাশা না কী অন্য কোন কারণে তাঁরা এ কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে রাখলেন।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নানা নাটকীয়তা শেষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের দিন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছাত্রলীগ প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১১ ও ১২ মে এ সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা জানান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন।

সূত্র মতে, মূলত এ সম্মেলনের মধ্যে দিয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ‘দাঁড়ি’ টানতে হচ্ছে সংগঠনের এ দু’শীর্ষ নেতাকে। সংগঠন ও নেতৃত্বের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকায় স্বভাবতই এ নিয়ে তাদের মাঝে ‘অভিমান’ থাকতেই পারে। এমন কষ্ট থেকেই হয়তো এদিন বুটেক্স শাখার পূর্ব নির্ধারিত সেই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন সোহাগ ও জাকির।

তবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘শুনেছি জাকির ভাই সম্মেলনে আসতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু ছাত্রলীগের কাউন্সিলের সংবাদ সম্মেলন শেষ করার পর পরই সোহাগ ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কথা দিয়েও সম্মেলনে আসা হয়নি সাধারণ সম্পাদক জাকির ভাইয়ের। তাদের ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়েছে আমাদের।’

আবার সংগঠনের ভেতর থেকেই কোন কোন সূত্র বলছে, দলীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার পরও ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়নি। বিশেষ মহলের কারসাজিতে ওই সময় সম্মেলন পেছানোর ‘সিগন্যাল’ পাওয়ার পর পরই মূলত সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাঝে দীর্ঘদিনের অপ্রকাশ্য বিরোধের ‘রাতারাতি’ অবসান ঘটেছিল। তারা ধরেই নিয়েছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরবর্তী সম্মেলন হচ্ছে না।

ওই সময়ে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাতকারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছিলেন, ‘সম্মেলন নিয়ে আমরা এই মুহুর্তে ভাবছি না। আমাদের সামনে অনেক কাজ। প্রাথমিক সদস্য নেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার কাজ করতে হবে।’

একই সূত্র জানায়, মূলত এ হিসাবটা সামনে রেখেই ওই সময় এ নতুন মিশন শুরু করেছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন। মার্চের শেষ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচিতে তাঁরা হাত দিয়েছিলেন।

নিজেরা ২০ টাকা মূল্যের ফরম সংগ্রহ ও পূরণ করে প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়নের পাশাপাশি এ অভিযানেরও শুভ সূচনা করেছিলেন। কিন্তু এ সূচনা সময়ের মাত্র দু’সপ্তাহ যেতে না যেতেই এদিকটাতে হয়তো ‘মন’ ওঠে গেছে ছাত্রলীগের বর্তমান দু’কান্ডারীর!

সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করার পর মানসিকভাবেও হয়তো তারা বড় একটি ‘ধাক্কা’ খেয়েছেন। আর এ ধাক্কা সামলাতে না পেরেই তারা বুটেক্স শাখার সম্মেলনে ‘অনুপস্থিত’ থাকার কৌশলকেই বেছে নিয়েছেন। এমন কথাবার্তাও চাউর হয়ে ওঠেছে দলীয় পরিমন্ডলে।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

কাজে আসেনি সিন্ডিকেটের ‘ফর্মুলা’
একাধিক সূত্র বলাবলি করছে, ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের ‘ছক’ কী হবে এ নিয়ে বেশ সন্দিহান দীর্ঘদিন সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণে রাখা কথিত একটি সিন্ডিকেট। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার ফলে তাদের কোন ‘ফর্মুলা’ বা ‘থেরাপি’ কাজে আসেনি।

দেশে থাকা সংগঠনটির এক সময়কার সাবেক সভাপতি ও বিদেশে অবস্থানরত সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক অনেক হিসাব-নিকাশ করেও নতুন কোন ‘ফর্মুলা’ আবিস্কার করতে না কী ব্যর্থ হয়েছেন। এবার তাদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট সম্মেলনে রীতিমতো ধরাশায়ী হতে পারেন। তাদের কব্জা থেকে ফসকে যেতে পারে সংগঠনটি, এমন জোর গুঞ্জণও ভেসে বেড়াচ্ছে।

বিশেষ করে দল ক্ষমতায় আসীন থাকলেও কেন এবং কী কারণে নিজের অবস্থান পুরোপুরি হারিয়ে এখন বিদেশে নির্বাসনের মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে সাবেক এক প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতার এ নিয়েও শোরগোল তৈরি হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা।

এ সম্মেলনে সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, কমিটেড, দক্ষ, ত্যাগী, আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের হাতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের ‘ভার’ তুলে দেবেন এমন প্রত্যাশা দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

 

কালের আলো/এসএস/এএ