অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডার ছিল যুবলীগের রাজীবের, বন্ধু মিশুই ‘নাটের গুরু’!

প্রকাশিতঃ 8:22 am | October 22, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ছিলেন পান-সিগারেট বিক্রেতা। বাবা-চাচা ছিলেন রাজমিস্ত্রী। সাকুল্যে ৩৬ হাজার টাকা বেতনের একজন কাউন্সিলর ছিলেন। অথচ কী রাজকীয় জীবন যাপন তাঁর! প্রাসাদম বাড়ি বা হাল সময়কার বিএমডাব্লিউ ও পাজারোসহ বিলাসী অনেক গাড়ি।

আরও পড়ুন: কাউন্সিলর রাজীবের অস্ত্রবাজ সেই ক্যাডাররা কোথায়?

কী ছিল না তাঁর ভুবনে? ঠাঁটবাট বুঝাতে নাম বদলও করেছেন বহুবার। কখনও টিজেড রাজীব। আবার কখনও নিজেকে পরিচিত করেছেন ‘লায়ন টিজেড রাজীব’ নামে।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীবের বেলায় এসব খবর এখন পুরনোই বটে! চাঞ্চল্যকর খবর হচ্ছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য ধরে রাখতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছিলেন সরকার দলীয় সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর এ ‘পালক পুত্র’।

ইতোমধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ার সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও তিন রাউন্ড গুলি।

অস্ত্রের পেছনে রাজীব মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করায় তাঁর বাহিনীর কব্জায় আছে আরও ভয়ঙ্কর সব অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্রের ভয় দেখিয়েই জমি দখল, ফুটপাত, সিএনজি স্ট্যান্ড ও কাঁচাবাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতো তাঁর ক্যাডাররা। রাজীব নিজেও বাসা থেকে বের হলেই কোমরে বহন করতেন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র!

শাহ আলম জীবন ছিলেন রাজীবের ‘ডান হাত’। থাকতেন রাজীবের সব অপকীর্তির আগে। এখন তিনি নিরুদ্দেশ।

আরও পড়ুন: ‘জনতার কমিশনারের’ সম্পদের পাহাড়, গায়েব লেনদেনের আলামত!

মোহাম্মদপুর এলাকায় বড় মাদকের চালান আনার সময়ও কীনা বাহিনীর সদস্যরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করতো। ভীতি-আতঙ্ক ছড়াতো। কাউন্সিলর রাজীব চার দেয়ালের বাসিন্দা হওয়ার পর তাঁর সংরক্ষণে থাকা এসব অস্ত্র আন্ডারওয়ার্ল্ড বা পাতাল জগতের বাসিন্দাদের হাতে চলে যেতে পারে বলেও ধারণা করছেন অনেকেই।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশুকে নিয়ে কৌতূহল
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার চার নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তারেকুজ্জামান রাজীব। ৯ তলা বাড়ির সপ্তম তলা ভাড়া নিয়েছিলেন রাজীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশু হাসান। র‌্যাব জানিয়েছে, অভিযানের সময়ই মিশু হাসান দেশের বাইরে ছিলেন।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরের ‘যুবরাজ’ গ্রেফতারে শুদ্ধি অভিযানে গতি, দুশ্চিন্তার ভাঁজ নেতার কপালে

সূত্র মতে, মিশু আর রাজীব হরিহর আত্মা ছিলেন। একে অন্যকে ছাড়া চলতেন না। ফলে বন্ধুর বিপদে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আশ্রয় দিয়েছেন নিজের বাসায়। মূলত রাজীবকে এ বাসাতে রেখেই নিজে বাইরে থেকে প্রভাবশালী মহলে কড়া নেড়েছেন।

কিন্তু এবার আর সুবিধা করতে পারেননি এ ‘নাটের গুরু’। রিমান্ডে থাকা রাজীবের এ বন্ধুকে ঘিরেই এখন জনমনে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে।

পেছনে রাজীব। সামনে রাস্তা ক্লিয়ার করছেন শাহ আলম জীবন ওরফে কালা জীবন।

আরও পড়ুন: রাজমিস্ত্রির ছেলে কাউন্সিলর রাজীবের রূপকথার রাজত্ব!

বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রটি আরও বলছে, এ মিশু হাসান ছিলেন রাজীবের সব অপকীর্তির সাক্ষী এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক মন্ত্রীর ছেলে ও দেশের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সন্তানের সঙ্গে গভীর সখ্য ছিল তাঁর।

রাজীবের হয়ে রথী-মহারথীদের সঙ্গে যোগাযোগ যেমন রক্ষা করতেন, তেমনি রাজীবকে নামিদামি ব্র্যান্ডের সব গাড়িও সরবরাহ করতেন।

ফলে রাজীবের ধুরন্ধর স্বভাবের এ বন্ধুকে গ্রেফতারেরও জোর দাবি উঠেছে। তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেই রাজীবকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে এমনটিও মনে করছে একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুনঃ রাজীবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ : র‌্যাব

তবে রাজীবকে গ্রেফতারের অভিযানের রাতেই র‌্যাব জানিয়েছিল, গ্রেফতার এড়াতে রাজীব ১৩ অক্টোবর থেকে ওই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

নবম তলা বাড়ির সপ্তম তলার ওই বাসাটি রাজীবের আমেরিকা প্রবাসী বন্ধু মিশু হাসান ভাড়া নিয়েছিলেন। তবে অভিযানের সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। মিশু হাসান বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন।

মোহাম্মদপুর ও বছিলায় রাজীব বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজি
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ ব্যবহার করে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বঘোষিত জনতার কমিশনার’ তারেকুজ্জামান রাজীব। এসব এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা ও ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজীব।

আরও পড়ুন: কাউন্সিলর রাজীবের ‘দিনবদলের দখলবাজি’, দীর্ঘশ্বাসই যেন ‘নিয়তি’ সরফরাজ-ফারুকদের!

গুরু রাজীবকে সাঙ্গপাঙ্গরা নাম দিয়েছিলেন ‘জনতার কমিশনার’। কম যাননি শিষ্য শাহ আলম জীবনও। পোস্টার বা প্যানাফ্ল্যাক্সে নিজেকে প্রচার করতেন ‘জনতার নেতা’ হিসেবে।

এলাকার ফুটপাত, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা ভবন এমন কোন কিছু বাদ নেই যেখান থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতো না রাজীবের ক্যাডাররা। অভিযোগ রয়েছে, অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে নিত্যদিন প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা যেতো কাউন্সিলর রাজীবের পকেটে। রাজীব হাউজিং ও বছিলায় মাদক বাণিজ্যের মূল হোতাও ছিলেন এ রাজীব।

একই সূত্রের অভিযোগ, রাজীবের ‘ডান হাত’ শাহ আলম জীবন, ইয়াবা ব্যবসায়ী সিএনজি কামাল ও অভি ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিমাসে কেবলমাত্র স্ট্যান্ড থেকেই প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা তোলা হতো। ঈদুল আজহার সময় মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড় থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কে বসানো হয় হতো কোরবানির পশুর হাট।

এ হাট থেকে প্রতি বছর ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন রাজীব। গত ৫ বছর যাবত এ হাটটি ছিল রাজীব বাহিনীর কব্জায়।

আরও পড়ুন: বন্ধুর বাড়িতে আত্নগোপনে ছিলেন রাজীব, অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

ময়লার ভ্যানের আড়ালে চাঁদাবাজি
মোহাম্মদপুর এলাকার ফুটপাত, সিএনজি স্ট্যান্ড ও কাঁচাবাজার থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজির পর আরেকটি চাঁদাবাজির খাত তৈরি করেন কাউন্সিলর রাজীব। অবশ্য এজন্য একটি কৌশল প্রয়োগ করেন তিনি। নিজে কাউন্সিলর হওয়ায় বাসার ময়লা থেকে চাঁদাবাজিও করতো তাঁর পোষ্য ক্যাডাররা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে ময়লার ভ্যান পাঠানো হতো। সেখান থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা তোলা হতো। ডিশ ব্যবসার মতোই লাভজনক এ খাত থেকেও নিত্যদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা নিতো রাজীবের সাঙ্গপাঙ্গরা।

মোহাম্মদপুর থেকে বছিলায় প্রতি ঈদুল আজহায় বিশাল গরুর হাট থেকে ৩ কোটি টাকা চাঁদা নিতো রাজীব বাহিনীর ক্যাডাররা।

রাজীবের অবৈধ অস্ত্রগুলো কার হাতে?
কাউন্সিলর রাজীবের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা ও ডিশ ব্যবসাসহ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে সর্বাগ্রে উচ্চারিত হচ্ছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জীবনের নাম।

‘গুরু’ যেমন স্বঘোষিত ‘জনতার কমিশনার’ তেমনি এ গুণধর শিষ্যও নিজেকে পরিচিত করে তুলেন ‘জনতার নেতা’ হিসেবে। থাকতেন প্রতিটি অপকীর্তির আগেভাগে। রাজীবের নির্দেশে যখন তখন যে কাউকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করতেও করিৎকর্মা ছিলেন শাহ আলম।

রাজীবের নানা অপকর্মের আরও সঙ্গী ছিলেন সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, চাচা ইয়াসিন, ফারুক ও রাজীবের শ্যালক ইমতিহান হোসেন ইমতি ও একরামুল। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইস্রাফিল লাবু, সায়েম, বাদল, মিতুল ও রুহুল বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাত মসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

রাজীব গ্রেফতার পর পর ইস্রাফিল সরাসরি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের আশ্রয়ে চলে গেছেন। ওই নেতার পক্ষে সাফাই গেয়ে ফেসবুকে প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানায়, রাজীবের বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডারের খোঁজ জানেন শাহ আলম জীবন, চাচা ইয়াসিন, ইস্রাফিল লাবু, ইমতিহান হোসেন ইমতি ও একরামুলের নেতৃত্বাধীন শক্ত সিন্ডিকেট।

বেশভূষায় রাজীব হয়ে উঠেছিলেন ‘মোহাম্মদপুরের সুলতান।’ সামনে-পেছনে ক্যাডার বহর ছাড়া চলতেন না। কায়দা করে নিতেন মন্ত্রীর মতো ভিআইপি প্রটোকল। এসব শোডাউনের মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতেন। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতেন স্থানীয় পথচারী ও বাসিন্দারা।

তাদের মাধ্যমেই সীমান্তের চোরাকারবারিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কিনতেন রাজীব। ভাড়াও দিতেন তাদের মাধ্যমেই, এমন কথাবার্তাও স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে।

অত্যাধুনিক এসব আগ্নেয়াস্ত্র পাড়া মহল্লার উঠতি মাস্তানদেরও সরবরাহ করে ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করতেন। নিজেদের প্রয়োজনে আতঙ্ক ছড়াতেই তাঁরা প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করতো।

চতুর রাজীব গ্রেফতার হওয়ার আগেই যেমন লেনদেনের আলামত ঘায়েব করেছেন তেমনি অবৈধ অস্ত্রগুলোও নিজের এসব সহযোগীদের কব্জাতেই রেখে গেছেন। একটি অস্ত্র নিজের সাথে থাকায় লাইসেন্সহীন সেই অস্ত্র ও গুলি জব্ধ করেছে র‌্যাব।

স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, রাজীব গ্রেফতার আতঙ্কে আত্নগোপনের পরপরই তাঁর সিন্ডিকেটের এসব সদস্যরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলেই অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডারের খোঁজ মিলবে বলে স্থানীয় সূত্রটি এমন দাবি করেছে।

কী বলছে এলাকার বাসিন্দারা
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার নব্য ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ কাউন্সিলর রাজীব গ্রেফতার হওয়ার পর স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন স্থানীয় মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা। এতোদিন যারা তাঁর ক্যাডারদের অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেননি এখন তাঁরা প্রকাশ্যে রাজীব ও তাঁর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

এ যেন কথিত ‘জনতার কমিশনারের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার স্বত:স্ফূর্ত গণজাগরণ!

ইস্রাফিল লাবু রাজীবের অপকর্মের আরেক সঙ্গী। লাবু-জীবনের সিন্ডিকেট কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। নিজেরাও বনে গেছেন বিত্তবৈভবের মালিক।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে কালের আলো। স্থানীয়রা জানায়, গত রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজীবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে নির্যাতিত-নিপীড়িত স্থানীয় লোকজন।

এ সময় তাঁরা রাজীবের নামে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। অভিনন্দন জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে।

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান ইউনিট আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক তসিরকে হত্যা করে রাজীবের লোকজন। এরপর থানায় মামলা হলেও সুবিচার পাননি তাঁর হতভাগ্য পরিবার।

নিহত তসিরের মা আম্বিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল রাজীবের লোকজন। আমার ছেলে হত্যার দায়ে আমি রাজীবের ফাঁসি চাই।’

ফারুক নামের স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘রাজীবের চলাফেরার স্টাইল ছিল রাজা-বাদশা’র মতো। ‘জনতার কমিশনার’ টাইটেল নিয়ে এলাকার মানুষজনকে শোষণ করতেন। চাঁদাবাজি আর জমি দখল করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছেন। খুপড়ি ঘর থেকে প্রাসাদ বানিয়েছিলেন।’

এ যেন বিক্ষুব্ধ জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা কাউন্সিলর রাজীব রিমান্ডে। তাঁর শাস্তির দাবিতেই মোহাম্মদপুরে বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণেরও অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে। মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বলেন, ‘কাঁচাবাজার পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজীব। প্রতি ব্যবসায়ীকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। অনেক ব্যবসায়ীকে আরও বাড়তি অর্থ গুণতে হতো।’

এ হাউজিং সোসাইটির কাঁচাবাজার সমিতির বৈধ সভাপতি আবুল হোসেন কালের আলোকে জানান, ‘আমাকে বেআইনিভাবে সরিয়ে মহিউদ্দিন আহম্মেদ খোকাকে সভাপতি করেন রাজীব। তিনি কর অঞ্চল-১০-এর প্রধান সহকারী। এরপর তাঁর মাধ্যমে গত কয়েক বছরে চাঁদা বাবদ এখান থেকেই প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজীব।

কালের আলো/এএ/এসআর