শিক্ষকদের ‘সুদিনের নির্মাতা’ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 3:22 pm | October 23, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাজেটে এমপিও নিয়ে কোন ঘোষণা ছিল না। অনশনে বসে ছিলেন শিক্ষকরা। দাবি ছিল এমপিওভুক্তি। সরকার প্রধান আশ্বাস দিয়েছিলেন দাবি পূরণের।

আরও পড়ুন: ৯ বছর পর দীপু মনি!

এবার সেই প্রতিশ্রুতির অঙ্গিকার পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাদের স্বপ্নের স্বার্থক নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

বুধবার(২৩ অক্টোবর) ২ হাজার ৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

নিজের প্রজ্ঞা, দৃঢ়চেতা মনোবল ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিচক্ষণতায় অনন্য প্রধানমন্ত্রীকে আরেকবার দেখা গেলো। বঙ্গবন্ধু কন্যার ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বল আলোকশিখায় প্রজ্জ্বলিত হলেন এতোদিনকার দুর্বিসহ যন্ত্রণা ও দুর্দিনের ঘুর্ণিপাকে ঘুরপাক খাওয়া শিক্ষকরা।

তাদের এখন মূল বেতন দিবে সরকার। অনিশ্চিত ভবিষ্যত পাড়ি দিয়ে তারা এখন বুনবেন নতুন স্বপ্ন। সন্তুষ্টচিন্তে বাড়ি ফিরে নিতে শুরু করবেন ক্লাস। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে তুলবেন একেকটি আলোকিত মানুষ।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হওয়ায়, আক্ষরিক অর্থেই তাদের মাঝে বয়ে যাচ্ছে অবারিত আনন্দের ফল্গুধারা।

তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ শিক্ষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি কথা দিলে কথা রাখেন। প্রতিশ্রুতি দিলে অঙ্গিকার পূরন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। এর ঠিক ৯ বছরের মাথায় আরও দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমপিওভুক্তির এই সিদ্ধান্ত গত জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। নিজেদের দাবি আদায়ে থেমে থেমে আন্দোলন করে আসছিলেন এমপিওভুক্ত নয় এমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) গণভবনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে আরেকটি ইতিহাস তৈরি করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হলো তাদের এই যোগ্যতা ধরে রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নীতিমালার নির্দেশনা ও চাহিদা পূরণ করতে পারা ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, এখন না পড়ালেও টাকা পাওয়া যাবে, শিক্ষকদের এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ শিক্ষার মান ধরে রাখতে না পারলে এমপিওভুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হবে। সবাইকে সেটা মনে রাখতে হবে।’

যারা এমপিওভুক্তি হতে পারেননি, তাদের হতাশার মাঝেও আশার আলো জ্বালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘যাচাই-বাছাই করে আমরা ২ হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছি। আগামীতে যারা এমপিওভুক্ত হতে চান, তাদের অবশ্যই নীতিমালার নির্দেশনা পূরণ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোথায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ হবে, সেই পরিকল্পনা করেছি আমরা। এখন যত্রতত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

কিন্তু সবগুলোর মান ভালো নয়। স্কুলগুলো যাতে তাদের মান ঠিক রাখে, তাই আমরা নীতিমালা তৈরি করেছি। এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলনও করেছেন। আমরা বলেছিলাম সবই করবো। আমরা সব করেছিও।’

প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তি নিয়ে ফিরে যান ১৯৯৬ সালের অভিজ্ঞতায়। তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছে হলো কিংবা রেশারেশির বা রাজনৈতিক কারণে স্কুল তৈরি হয়। এমপিওভুক্ত বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির শিক্ষকদের টাকা প্রতিষ্ঠানে চলে যেত। আমরা ঠিক করলাম যার যার বেতন তার তার কাছে যাবে। পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে যাবে। এরপর মাসিকভিত্তিতে যখন টাকা পাঠালাম, তখন ৬০ হাজার শিক্ষককে আর পাওয়া গেল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি দিয়েছি। স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে আধুনিক শিক্ষা থেকে ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত না হয়। অনলাইনে অনেকে চাকরি করতে পারছে। আমরা সেভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও সনদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সনদ না থাকাতে তারা কাজ পেতো না। প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। তারাও এদেশের সন্তান, তাদের কথাও চিন্তা করতে হবে।’

তিনি বলেন, কিছু জায়গা বিশেষ করে হাওর-বাঁওড়, পাহাড়, চর ও দুর্গম এলাকার কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সেখানে নীতিমালা কিছুটা শিথিল করে দেওয়া হয়। এসব জায়গায় আমরা আবাসিক স্কুল করে দিতে চাই। যাতে সেখানে থেকে শিশুরা লেখাপড়া করতে পারে।’

কালের আলো/এমএইচও/এনএল