দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে : সেনাপ্রধান (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 6:52 pm | October 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ক্রমাগত উন্নতির সোপানে আরোহণ করে চলছে এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশগঠনমুলক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

আরও পড়ুন: কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ‘কর্নেল কমান্ড্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হলেন সেনাপ্রধান

ঐতিহ্যবাহী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্যদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রথাগত কাজের পাশাপাশি আমাদেরকে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নতিসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যখনই সুযোগ আসবে তখনই তাতে অংশগ্রহণ করে দেশের অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনাবাহিনী প্রধান’কে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ’৭ম কর্নেল কমান্ড্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত করার পর বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: জাতীয় প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে: সেনাপ্রধান (ভিডিও)

আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য ইঞ্জিনিয়ার কোরের সকল সদস্যের প্রতি আহবান জানান সেনাপ্রধান।

মহান আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায়
ঐতিহ্যবাহী কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স ‘কর্ণেল কমান্ড্যান্ট’ পদে অভিসিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ইতিহাসের সাথে নিজেকে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি, বলছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আমি এই দায়িত্ব পাওয়ায় মহান আল্লাহতায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করছি। আমার প্রতি আপনাদের এই সম্মান ও আস্থা প্রদর্শনের জন্য আপনাদের সকলকে জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।’

বক্তব্যের শুরুতে সশ্রদ্ধচিত্তে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ
সেনাপ্রধান নিজের বক্তব্যের শুরুতে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার আহবানে সাড়া দিয়ে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সদস্যরা আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদদের।

আমি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথে স্মরণ করছি যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। আমি আরও স্মরণ করছি, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১ হাজার ৫৩৩ জন শহীদ বীর সেনানীদেরকে, যারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। যার মধ্যে ৮৮ জন ছিল কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সদস্য।

আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে এবং গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এই কোরের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান, মুক্তিযুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন অভিযানে জীবন উৎসর্গ করা ১৭০ জন বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যার মধ্যে ১৯ জন ছিলেন কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সদস্য।

আমি আরও স্মরণ করছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা জীবন উৎসর্গকারী ১১৮ জন বীর শহীদদের। যার মধ্যে ০৪ জন ছিলেন স্যাপার্স এবং বিডিআর বিদ্রোহে আত্মদানকারী ৫৯ জন বীর সেনানীদের। যার মধ্যে স্যাপার্স পরিবারের
সদস্য ছিলেন ০১ জন।

এছাড়াও অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওকেপি)’তে ১৪ জন, এসটিএমকে/মেহেনী প্রজেক্টে ০৩ জন এবং অপারেশন মরু প্রান্তরে ০১ জন স্যাপার্স সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

আমি দেশ মাতৃকার জন্য শাহাদাৎ বরণকারী সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ইতিহাস ঐতিহ্যময়
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকের এই শুভ দিনে আমি স্মরণ করছি এই কোরের প্রাক্তন কর্নেল কমান্ড্যান্ট ও সেন্টার কমান্ড্যান্টসহ কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সদের যাদের নিরলস পরিশ্রম ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই কোর আজ সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ইতিহাস ঐতিহ্যময় ও বীরত্বগাঁথায় সমুজ্জ্বল। স্বাধীনতার পরে কতিপয় অফিসার এবং সৈনিক নিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মুহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের আত্মত্যাগের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের যাত্রা শুরু হয়।

স্বাধীন দেশে স্যাপার্সের কোন বিদ্যমান ইউনিট ছিল না, কোন সেন্টার বা রেকর্ড ছিল না। পাকিস্তানিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও সৈনিকদের অন্তরীণ করে রাখা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী কমান্ড কর্তৃক প্রদত্ত একটি সমনে স্যাপার্স কর্মকর্তারা ঢাকায় একত্রিত হন।

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম ১ ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই ব্যাটালিডনের ফিল্ড কোম্পানীসমূহকে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়নে রূপান্তর করা হয়। এছাড়াও সদরঘাটের এইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে ঢেলে সাজিয়ে ‘রিভার সাপোর্ট ইউনিট’ নামে পুন:র্গঠন করা হয়।’

দেশগঠনমূলক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কোর আপন মহিমা, স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যে ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছে। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ক্রমাগত উন্নতির সোপানে আরোহণ করে চলছে এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশগঠনমুলক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে এই কোরের অবদান আজ জাতীয়ভাবে স্বীকৃত। কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সৈনিক কর্তৃক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এর মাধ্যমে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।’

সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প, ঢাকা মহানগরীর মেগা প্রজেক্ট হাতিরঝিল এলাকায় সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মহানগরের যানজট নিরসনে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণসহ এয়ারপোর্ট রোডস্থ আন্ডারপাস, মিরপুর ফ্লাইওভার, রুমা ও থানচি ব্রিজ নির্মাণ, ও রামুতে বৌদ্ধ বিহারা নির্মাণ ও সংস্কার ও পদ্মা বহুমুখী সেতুর সংযোগ সড়ক ও পদ্মা সেতুর রেলওয়ে লিংক প্রজেক্ট এর মত গুরুত্বপুর্ণ জাতীয় প্রকল্পসমুহের বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়েছে।’

আর্টডকের জিওসি হিসেবে নিবিড় সম্পর্কের সূত্রপাত
সেনাপ্রধান বলেন, ‘কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এই প্রকল্পসমূহে অত্যন্ত আস্থার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। পেশাগত জীবনের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে এই কোরের সাথে আমার সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। জিওসি, আর্টডক হিসেবে আপনাদের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে।

২৫ জুন ২০১৮ তারিখে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় আপনাদের সাথে আমার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে। আজ কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে অভিসিক্ত হওয়ায় এই সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করলো। ‘কর্ণেল কমান্ড্যান্ট’ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর এটাই আপনাদের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত।’

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদের প্রস্তুত করা

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজ চৌকস প্যারেডের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার কোরের সদস্যরা আমাকে ‘কর্নেল কমান্ড্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত করলেন। কর্নেল কমান্ডান্ট হিসেবে আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হবে ‘কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ এর সকল সদস্যকে নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তত করা।

সেনাবাহিনীর প্রথাগত কাজের পাশাপাশি আমাদেরকে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নতিসহ সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যখনই সুযোগ আসবে তখনই তাতে অংশগ্রহণ করে দেশের অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

আমি এখন হতে আপনাদের যে কোন সমস্যা সমাধানে তথা কোরের কল্যাণে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। আমরা সবাই মিলে কোর অব ইঞ্জিনিয়ারস এর অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান ও আধুনিকায়নে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্তিক প্রচেষ্টায় ও সদিচ্ছায় ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স আমাদের অন্যতম প্রধান সাপোর্টিং আর্মস। তাই এ বাহিনীর উন্নয়নে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহন করব ইন্শাল্লাহ।

কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে