আমলা হতে চেয়েছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির খালেদ মহিউদ্দিন
প্রকাশিতঃ 12:29 am | December 24, 2017
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
তিনি এখন দেশের নামি সাংবাদিক। নিজের হাতে গড়ছেন অনেক গণমাধ্যম কর্মী। চমৎকার উপস্থাপনা, ভাষা শৈলী আর বিচক্ষণতার প্রয়োগ ঘটিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২৪ ঘন্টার সংবাদভিত্তিক নিউজ চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিকে।
ছাত্র জীবনে অসম্ভব মেধাবী খালেদ মহিউদ্দিন এক সময় স্বপ্ন দেখবেন আমলা হবেন। ২০ তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। সময়টা ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে। কিন্তু চান্স পেয়েও নিজেকে অতদূর আর নিয়ে গেলেন না। থেকে গেলেন গণমাধ্যমের সঙ্গেই।
নিজের জীবনের সেই স্বর্ণালি দিনের কথা তুলে ধরেছেন ফেসবুকের ওয়ালে। শিরোনাম ‘আমার আমলা জীবন।’ ধারাবাহিক পর্বে ছোট ছোট বাক্যে স্মৃতির সাম্রাজ্য থেকে ছেঁকে এনেছেন হারানো দিনগুলোর কথা। দেশের অন্যতম সেরা এ সাংবাদিক লিখেছেন, ‘২০০০ সালের দ্বিতীয় ভাগ।এসাইনমেন্ট জমা হয়ে গেছে। অকারণ ঘুরাঘুরি করছি নিউজরুমে। লাবলু ভাই ডেকে একতাড়া কাগজ ধরিয়ে দিলেন। ২০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে, একটা রিপোর্ট বানিয়ে দেন। দুই এর পাতা মার্কও করে দিলেন নগর সম্পাদক।’
আমি কাগজগুলো নিয়ে দূরতম কোনায় গিয়ে বসি। ভয়ে ভয়ে পাতা উল্টাই। রোলনম্বর ছোট করে লিখে রেখেছিলাম মানিব্যাগের এক কোণায়। প্রশাসন ক্যাডারের ১৭ নম্বর ক্রমে রোলটি দেখতে পাই। উচ্ছ্বাস গোপন করে লুকিয়ে ফোন করি মা এবং প্রেমিকারে। স্বাভাবিকমুখে নিউজ বানিয়ে লাবলু ভাইয়ের কাছে দেই। বাসার পথ ধরি।
ফেরার পথে নিজেকে পিঠ চাপড়ে দেই। নিজের নামের পরে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট পদটি খুব ভালো মানিয়েছে বলে মনে হয় আমার। সাংবাদিকতার জন্য বিশেষ করে প্রথম আলোর জন্য আরও বিশেষ করে মতিভাইয়ের জন্য খারাপ লাগে আমার। ভালো লাগে কোনো একদিন জেলা প্রশাসক হবো সচিব হবো ভেবে।….’
এতটুকু লিখে প্রথম পর্ব শেষ করার দ্বিতীয় পর্বে স্মৃতিচারণ করেছেন বিসিএস’র প্রস্তুতি, কীভাবে গণমাধ্যমে এলেন, সাংবাদিকতার শিক্ষকদের নম্বর দেয়ার ব্যাপারে কৃপণতা, নির্ভুল আরবী বুঝতে ও লিখতে পারাটাই যে ছিল তার বিসিএসে এতো ভালো করার অন্যতম কারণ, সেই কথাও উচ্চারণ করেছেন অকপটে।
প্রখ্যাত এ সংবাদিক লিখেছেন, আমলা জীবনের কথা বলার আগে বিসিএস প্রস্তুতির কথা একটু বলা দরকার। আমরা মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছিলাম প্রায় বছর জুড়ে। সেরকম কোনো একটা সময়েই বিসিএসে বসার জন্য ফরম ফিল আপ করি। প্রিমিলিনারি নিয়ে আমার বেশি একটা চিন্তা ছিল না।
সত্যিকারের সমস্যায় পড়ি লিখিত পরীক্ষা নিয়ে। সেসময় নিয়ম ছিল বাংলা, ইংরেজি, গণিত-বিজ্ঞান, বাংলাদেশ এফেয়ার্স আর ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স এই পাঁচটি বিষয় নিতেই হবে। এছাড়া পছন্দ করতে হবে আরো তিনটি বিষয়।
আমি জানতাম আবশ্যিক পাঁচটি বিষয় নিয়ে আমারে ভাবতে হবে না। মাধ্যমিক পর্যায়ের গণিত-বিজ্ঞান আমি ভালো পারি, সাংবাদিকতায় পড়ার কারণে ভাষা আর দেশি-বিদেশি ইতিহাস-রাজনীতি-অর্থনীতি-কূটনীতি আমারে ক্লাসরুমে পড়তে হয়েছে।
সাংবাদিকতা আমাকে নিতেই হবে নইলে প্রশ্ন উঠতে পারে স্নাতকোত্তর করে কী শিখলাম? মুশকিল হলো সাংবাদিকতায় শিক্ষকেরা নম্বর দেন না। আমার বিজ্ঞান পড়া বন্ধুরা গণিত পদার্থ বা প্রকৌশলে ৯০-১০০ পাবেন আর আমি পাবো বড়জোর ৬৫। প্রথমেই পিছিয়ে পড়বো অন্ততঃ ৩০ নম্বর। তাই বেশি নম্বর তুলতে হবে টিকে থাকতে হলে।
সমস্যা হলো গণিত পদার্থ বা রসায়ন নেওয়া সম্ভব না, কারণ অনার্স স্ট্যান্ডার্ড এ সেগুলো পারার প্রশ্নই আসে না।অনেক ভেবে পরিসংখ্যান নিলাম। বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্য। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে বিসিএসে বসে নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে গিয়েছিলো।
আর নিলাম ইসলামিক স্টাডিজ-আরবী লিখতে পড়তে পারি এই ভরসায়। পরীক্ষায় বসতে গিয়ে কোরান-হাদীস পাঠের বিশাল সিলেবাস দেখে ভড়কে গেলাম। আমি অবশ্য নিশ্চিত গণিত-বিজ্ঞানের পর সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলাম ইসলামিক স্টাডিজে। সত্য বলতে নির্ভুল আরবী বুঝতে ও লিখতে পারাই আমার বিসিএসে এতো ভালো করার অন্যতম কারণ।
কালের আলো/ওএইচ