অনি:শেষ ‘আলোকবর্তিকা’ হাবিবা জাবেদের সেই অনন্য ‘অভিভাষণ’ (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 12:09 am | November 03, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
‘আমরা ভালো পড়াশোনা করি, বড় চাকরি করি, গাড়ি করি, বাড়ি করি। তবে শেষ লক্ষ্য কি? আমরা সুখি হতে চাই। সুতরাং, এমন কোনো কাজ যেন না করি যেটা আসলে সবই পেলাম সবই করতে পারলাম কিন্তু সুখি হলাম না। তাহলে আমার এ সমস্ত অর্জন কিন্তু বৃথা।’
আরও পড়ুন: প্রীতিলতার শহরে আলো ছড়ালেন আইজিপির পত্নী হাবিবা জাবেদ, প্রশংসায় দুই মন্ত্রী
নিজের সুগভীর প্রজ্ঞা আর দূরদৃষ্টিতে কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবনবোধ, কল্পনা ও চিন্তা শক্তির বিকাশে এমন অনবদ্য বক্তব্য পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভাপতি মিসেস হাবিবা জাবেদের।
নিজের মেধা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখা সাহসের বাতিঘর এ নারী মনে করেন, জীবনের প্রারম্ভিক সময় থেকেই লক্ষ্যবস্তুকে ফোকাস করতে হয়। আর সেই লক্ষ্য অর্জন একটি চ্যালেঞ্জও। আর সেই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়াই সুখ। জীবনের গল্পটাও যেন সেই রকম। যেখানে শুধু উত্তরণ থাকে না, থাকে পতন, চড়াই-উৎরাই এবং নানা টানাপোড়েনের চালচিত্র।
থাকে সময়, সুসময় এবং দু:সময়ও। দুঃসময়ে ধৈর্য্য ধরতে হয়। কখনও ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলেপুড়ে জীবন যন্ত্রণায় ধ্বংসস্তুপ থেকেও ফের উঠে দাঁড়াতে হয় নবজীবনের খোঁজে।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে পুলিশে কর্মরত সদস্যদের কৃতি সন্তানদের ‘মেধাবৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক এই নারী।
তাঁর দৃষ্টিতে, যাপিত জীবন প্রকারান্তরে জীবন-যাপনের পটভূমি। জীবনের প্রতি, সময়ের প্রতি মিতব্যয়ী হতে হয়। এটিই সুখী জীবনের পথনির্দেশ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর জীবন সঙ্গী, এক আদর্শ নারীর প্রতিকৃতি মিসেস হাবিবা জাবেদের বক্তব্য এবং অন্তনির্হিত মূল্যবোধ অসাধারণ।
জীবনের লক্ষ্য, সাফল্য ও অর্জন সম্পর্কে নিবিড় এক পর্যবেক্ষণ এবং প্রেরণাসঞ্চারী এ অভিভাষণ। জীবন থেকে, গভীর আত্মপ্রত্যয়ের নির্যাস থেকেই তাঁর পক্ষে এমন উচ্চারণ সম্ভব।
তাঁরা বলছেন, আধুনিক, উদার ও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী এ নারী নিজের সময়ের চেয়েও অনেক এগিয়ে।
মিসেস হাবিবা জাবেদের বক্তব্য সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নি:স্বার্থভাবে তাদের কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে উজ্জীবিত করে। সুচিন্তিত, সাবলীল সময়ের সেরা এ বক্তব্যটি অন্যরকম নতুনত্ব ও স্বকীয়তায় ভাস্বর, যা তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণা সঞ্চারী।
‘অ্যাডিকশন প্রফেশনাল ও ন্যাশনাল ট্রেইনার মিসেস হাবিবা জাবেদের বক্তব্য জীবনের জন্যও খুবই প্রয়োজনীয়’ বলছিলেন মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
তাদের মতে, ‘বহুমাত্রিক তথ্য ও যুক্তির সন্নিবেশ, চিন্তা ও জীবন দর্শনের প্রতিফলন, চলতি সময় ও জীবনধারার নির্যাস, সমাজ বিশ্লেষণ শেষে জাতীয় মূল্যবোধ এবং চেতনার বহি:প্রকাশ ঘটেছে হাবিবা জাবেদের বক্তব্যে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, ‘মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়ায় তাঁর প্রতিটি ভাষণই সময়ের সেরা বক্তব্য। নতুন প্রজন্মকে গড়ে ওঠতে যা প্রয়োজনীয়, সবই থাকে তার বক্তব্যে।
এছাড়া যুক্তিবাদী, প্রসঙ্গ-প্রাসঙ্গিকতায় বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমকালীন জীবন ও সমাজ বিশ্লেষণের প্রতিচ্ছবি তার বক্তব্য। প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৈচিত্র্যকে স্পর্শ করা হাবিবার বক্তৃতায় থাকে জীবনের সাফল্যের প্রস্তুতির সব পরামর্শ।’
অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত কেউ কেউ বলছেন, নারীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার উজ্জ্বল অর্জনের মূল্যায়ন থাকে পুনাক সভাপতির বক্তব্যে। অন্ধকারের বিরুদ্ধে এক আলোর পথযাত্রীর অনিরুদ্ধ পথচলার প্রত্যয় যেন বক্তাকে ভাসিয়েছে প্রশংসায়। প্রবল আন্তরিকতা, কৃত্রিমতা বর্জিত, স্বাভাবিক এবং স্বত:স্ফূর্ত বক্তব্য উজ্জীবিত করে সব বয়সী মানুষকে।
উজ্জ্বল, শক্তিশালী ও দেশপ্রেমের আলোকে উদ্ভাসিত বক্তব্যের শুরুতে পুনাক সভাপতি বলেন, ‘আমাদের এই ছোট্ট দেশটিতে তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আমরা প্রায়ই বলি মানুষকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। সেই সম্পদে রূপান্তরিতটা হবে কিসে?
‘সেই সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে আমাদের এ মেধার লালনের মাধ্যমে। মেধার লালনের জন্য এ ধরনের বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠান অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে তাদের প্রেষণা তৈরির জন্য। তাদের মোটিভেশনের জন্য। এটা এক ধরনের স্বীকৃতিও। স্বীকৃতি তাদের এবং স্বীকৃতি তাদের বাবা-মায়ের।’
মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যে কোনো স্বীকৃতি আনন্দের। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটা মানুষের মধ্যে অনেক বেশি অহংকারও তৈরি করে ফেলে। প্রত্যেকটা জিনিসের সঙ্গে ভালোও আসতে পারে খারাপও আসতে পারে। আমাদের যা কিছু খারাপ আসতে পারে সেটা সম্পর্কে যেন আমরা সচেতন থাকি।
সেজন্যে এই কথাগুলো বলা। আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি যারা ভালো করেছো, এটা তোমাদের কাজের স্বীকৃতি। আর স্বীকৃতি সত্যিই অনেক বেশি খুশির।’
‘আমি বিশ্বাস করি তোমাদের চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন তোমাদের বাবা-মায়েরা। কারণ আমি একাধারে ছাত্রও ছিলাম এবং একজন মা-ও। কাদের অনুভূতি কেমন আমি সেটা জানি,’ যোগ করেন এই মমতাময়ী মা।
মিসেস হাবিবা জাবেদ বলেন, ‘এই যে বাবা মায়েরা খুশি হয়েছেন। তোমরা তাদের সম্মানিত করেছো। তোমাদের কারণে আজকে তারা সম্মানিত হয়েছেন। মনে রাখবে যে, এই সম্মানটা কিন্তু সব না। এই সম্মানটাকে তোমাদের বিস্তৃত করতে হবে তোমাদের শেষ জীবন পর্যন্ত। যেন বাবা-মা তোমার কারণে নিজেকে সম্মানিত বোধ করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি তোমার এ-লেভেলের রেজাল্ট অথবা এইচএসসির রেজাল্টই যেন তাদের সম্মান দেওয়ার জন্য শেষ ধাপ হয়ে না যায়। তোমার কাজে, তোমার মননে, তোমার চরিত্রে তুমি এমনভাবে উদ্ভাসিত হবে যেন তারা দুনিয়ায় এবং দুনিয়ার পরেও সম্মানিত বোধ করেন।’
আইজিপিপত্নী বলেন, ‘তোমরা অনেক ভালো রেজাল্ট করেছো। ভালো ফল করেছো, এখন তোমাদের লক্ষ্য হবে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া। কিন্তু এটা হচ্ছে ছোট্ট ধাপ, আরো বড় ধাপ হচ্ছে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যেখানে তোমরা যেতে চাও সেই জায়গাটাকে ফোকাস করতে হবে।
‘ভাবতে হবে, আমি জীবনে কী হতে চাই। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, নেতা, ফিলোসফার, ধর্মগুরু অথবা কিছুই হতে চাই না! এটাও হতে পারে, জীবনে বহু বড় বড় মানুষ কিছুই হতে চাননি, কিন্তু তাঁরা বিখ্যাত হয়ে গেছেন। সুতরাং, আমি আসলে কী হতে চাই, সেটা আমাকে নিজের মনের সঙ্গে কথা বলে নিজেকে ঠিক করতে হবে। বাবা-মার প্রেসারে অথবা আশেপাশের চাকচিক্য দেখে আমি যেন ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক না করি।’
পুনাক সভাপতি বলেন, ‘প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে তোমরা ভর্তি হতে নাও পারো। প্রত্যেকেরই আশা থাকে যে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে বুয়েটে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। এই চাওয়া তোমাদের পূরণ নাও হতে পারে। এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে হবে। ভেঙে পড়বে না এবং যেখানেই ভর্তি হতে পারবে সেখানে মন দিয়ে পড়বে।
‘আমার তো লক্ষ্য হচ্ছে ইন্টারমেডিয়েট বা গ্র্যাজুয়েশন নয়, আমার লক্ষ্য হচ্ছে আরো বড় কিছু এবং আমি যদি ধীরে ধীরে যাই, সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে জীবনে হ্যাপি হওয়া, সুখী হওয়া। আমরা ভালো পড়াশোনা করি, বড় চাকরি করি, গাড়ি করি, বাড়ি করি, তবে শেষ লক্ষ্য কী? আমরা সুখী হতে চাই।
সুতরাং, এমন কোনো কাজ যেন না করি যেটা আসলে সবই পেলাম সবই করতে পারলাম কিন্তু সুখী হলাম না। হ্যাপি হলাম না, তাহলে আমার এ সমস্ত অর্জন কিন্তু বৃথা। আমাদের এই জায়গাটায় ফোকাস করতে হবে যে আমি আসলে চাই কী এবং সেটা কিভাবে আমি ধাপে ধাপে অর্জন করবো।’
শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বীবিত করে হাবিবা জাবেদ বলেন, ‘একবারেই তো সব মানুষ পায় না। আর মানুষের জীবনে, এখানে হয়তো তোমরা অনেকেই আছো এসএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করেছো, এইচএসসিতেও করলে এটা একটা ধারাবাহিকতা। কিন্তু শুধু আবার একটা প্লেন উড়ছে আর উড়ছে এটা কী কখনো হয়? কখনো এটা নামে, কখনো এটা স্থিতি অবস্থায় থাকে। জীবনের গল্পটাও কিন্তু সেরকমই।’
‘তুমি এখন ভালো, এসএসসিতে ভালো করেছো, এইচএসসিতে ভালো করলে, তারপরে আরো ভালো করবে। এ রকম না, তোমার কখনো কখনো পতনও হতে পারে। এই পতনগুলোর সময়ে কিন্তু ধৈর্য্যধারণ করতে হবে।’
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, ‘বাবা-মায়েদের বলবো, সেই সময়ে আপনাকে আপনার বাচ্চার পাশে থাকতে হবে। তাকে বলতে হবে- ঠিক আছে, এখন ভালো করোনি, তুমি তো পারো, তুমি পেরেছো। সুতরাং তুমি আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে। আপনার এই একটা কথা ওকে ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।
‘আবার ঠিক একটা কথা মন ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেবে। কারণ বাবা-মাকে খুব ছোট বেলায় কাছে পায় এবং তারা যা কিছু বলে কোনো বাধা ছাড়া তার বিলিভ সিস্টেমে এটা ডুকে যায়। সুতরাং তাকে আপনি যা কিছু বলবেন, তা অবধারিত সত্য বলে মেনে নেবে।’
বাচ্চাদের খারাপ সময়ে মা-বাকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, ‘আপনার একটা দায়িত্ব আছে যে, বাচ্চাটা যখন সমস্যায় পরবে। কখনো ফেইলিয়ার এর সম্মুখীন হবে তাঁর পাশে দাঁড়ানো। আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে আপনার বাচ্চাটার দেওয়ার এবিলিটি কতটুকু সেটা বোঝা। তার কাঁধে যদি অনেক বেশি বোঝা চাপিয়ে দেন, আল্টিমেটলি কিন্তু সে কিছুই আর পারবে না। সে ভেঙে পড়বে। এটা বোঝা খুব জরুরি যে আপনার বাচ্চার মেধাটা কোনদিকে।’
পুনাক সভাপতি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এক ধরনের মেধা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান না। সুতরাং সে যদি অংক বা ইংলিশে ভালো নাও হয়, এটা একচুয়ালি আমাদের সাধারণ যে মেধার রেটিং আইকিউ টেস্ট। এখানে এগুলোই দেখা হয় যেগুলো গোনা যায়। কিন্তু অনেক মেধা আছে যেটা কখনো কোনো সংখ্যা দিয়ে কাউন্ট করা যায় না।
‘আপনার বাচ্চাটা বিড়ালের পা ভেঙে গেল- বলে একবেলা খেলোনা অথবা সে আপনার সঙ্গে এসে কাজে আপনাকে সাহায্য করে, কাজের মেয়েটাকে নিজের একটা জামা দিয়ে দেয়; তার একটা ভালো জামা নেই বলে। তার এই আবেগীয় অন্তরের যে মূল্য, এটাকে কিন্তু স্কেলিং করার মতো স্কেল আমাদের এই পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। এগুলো অনেক বড় বড় একটা গুণ। এই গুণগুলোকে আপনাদের বুঝতে হবে এবং এগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে,’ বলেন তিনি।
মা-বাবার উদ্দেশ্যে হাবিবা জাবেদ আরও বলেন, ‘আপনারই হয়তো একটা বাচ্চা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। আরেকটা বাচ্চা হয়তো এতো ভালো করেনি। আপনি যেন হতাশ না হন। আপনি যেন কখনো ওর সঙ্গে তুলনা না করেন এবং আপনার এই ভালো ছাত্রটাকেও যেন আরেকটা ভালো ছাত্রের সঙ্গে তুলনা না করেন।
কারণ তুলনা কখনই, কোনো অবস্থাতেই কাউকেই হেল্প করে না। তুলনা শুধুমাত্র মানুষকে ছোট করে। আর কাউকে ছোট করে আঘাত দিয়ে তাঁর কাছ থেকে তো আমরা বড় কিছু পেতে পারি না। এটা যেন আমরা মনে রাখি।’
হাবিবা জাবেদ বলেন, ‘আমরা বড় চাকরি করবো। বিসিএসে ভালো করবো সেগুলা সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমি কেন পৃথিবীতে এলাম, এখানে কী করতে চাই বা কোথায় আবার ফিরে যাবো! এই প্রশ্নগুলো যখন আমি এখান থেকেই করা শুরু করবো এবং এটার একটা উত্তরও পেয়ে যাবো এবং জীবনের সার্থক যেখানে, আমি সেই স্বার্থকতার জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতে পারবো।’
মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য, ‘তোমাদের বলছি, যারা ভালো ফলাফল করেছো- এই অর্জন যেন তোমাদের অহংকারে পর্যবসিত না হয়। সামনে তোমরা ইউনিভার্সিটিতে যাবে। অনেক সুযোগ, বাবা-মার তেমন নজরদারি নাই, একটা ক্লাস থাকে মাঝখানে তিনটা ক্লাস আবার ফাঁকা।
‘অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। মনে হতে পারে জীবনটাকে উপভোগ করার এখনই সময়। এখন নয়তো কখন? একচুয়েলি এই চিন্তাগুলো একটা বয়সের একটা ধারা। কিন্তু আমি বলবো যে, তোমরা অতিরিক্ত, অমিতব্যয়ী হয়ে যেও না সময়ের প্রতি এবং জীবনের প্রতি। কারণ তোমার এখন যেমন উপভোগ করার সময়, তেমনি এখন জীবনকে তৈরি করারও সময়। উপভোগ করবে কিন্তু পরিমিত বোধ রেখে। পরিমিতি যদি না থাকে, তাহলে অনেক সুন্দর জিনিসও নষ্ট হয়ে যায়।’
শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন বিশেষ অতিথি বলে গেলেন, মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে। মোবাইল ব্যবহার করবে তবে মাত্রা রেখে করবে। সেখানেও সেই পরিমিতির কথা এসেছে। এটা ভালো দিক।’
‘এই পৃথিবীতে বাচ্চাটাকে নিয়ে আসার জন্য বাবা-মা দু’জনেরই ভূমিকা আছে। এদের জীবনে সফল হতে হলে দু’জনেরই ভূমিকা দরকার। যদি শুধু মা-ই পারত তাহলে আল্লাহতায়ালা শুধু মায়ের মাধ্যমেই বাচ্চা জন্মদিতে পারতেন তাহলে বাবাকে কেন নিয়ে আসলেন?
এ নিয়ে আসার পেছনে যেমন কারণ আছে তেমন- শুধুতো পড়ালেখায় সাফল্য নয়, আমি সে কথাটা আগেও বলেছি। তাকে হ্যাপি হওয়ার জন্য জীবনে বাবা-মা দু’জনেরই সংস্পর্শ দরকার। দু’জনেরই পরিচর্যা দরকার। দায়িত্বটা যেন শুধু স্ত্রীর কাঁধে আমরা চাপিয়ে না দিই। আর আমরা শুধু টাকা উপার্জনের একটা অবলম্বন না হই।’
পরামর্শ দিয়ে এই অভিভাবক বলেন, সময়ের কথা আমরা বলি, আমি বলবো যে সময় তো ২৪ ঘণ্টা সবার জন্যেই। এখানে কম বা বেশি নাই কেউ কেউ পারেন, কেউ কেউ পারেন না। কেন পারেন না-কারণটা হচ্ছে তিনি আসলে অন্যকিছুকে ইমপোর্টেন্ট মনে করেন। বাচ্চাকে সময় দেওয়া সংসারকে সময় দেওয়াকে লেস ইমপোর্টেন্টের তালিকায় রাখেন। যেটা ভুল, আপনাদের চাকরি একদিন থাকবে না, পদ পদবি থাকবে না। কিন্তু ফ্যামিলিটা কিন্তু সঙ্গে থাকবে।’
‘এই বাচ্চাগুলোই সাথে থাকবে, সুতরাং- এখনই সময় সচেতন হওয়ার আমার শেষ যেখানে, যাদের কাছে গিয়ে থাকতে হবে- তাকে যদি এখন আমি গুরুত্ব না দিই আমি তখন তার কাছ থেকে গুরুত্ব চাই, এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?’
মিসেস হাবিবা জাবেদের মতে, ফ্যামিলিকে এবং বাচ্চাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নাই। কোনো কারণও নাই, কারণ আপনি চাকরি তো করেন সংসারের জন্যেই, আপনি রাত জাগেন সংসারের জন্যেই আপনি সবকিছু করছেন বাচ্চাদের জন্য। কিন্তু বাচ্চাদের সময় দিচ্ছেন না। এই বিপরীতমুখী কার্যপ্রক্রিয়া থেকে আমি বলবো যে, পুলিশের একটা কগনেশন আছে যে চাকরির জন্য, উল্টাপাল্টা ডিউটির জন্য ওনারা এটা পারেন না।
‘কিন্তু এসবিতে আমি যখন এই কথাগুলো বলতাম, কোনো কোনো মেধাবী ছাত্রীদের মুখে শুনেছি বাবারা তার সবচেয়ে কাছের। অর্থাৎ এটা সম্ভব, এটা করা যায়। সময় দেওয়াটা একটা কৌশল। আমি মানছি যে আপনারা অনেক ব্যস্ত। এটা আমাদের বাচ্চাদের বলিও- বাবা পারছে না, এমন না যে তোমাকে দিচ্ছে না। দ্যাট ইজ ডিফারেন্ট থিংক। কিন্তু আমি বলবো যে, কৌশলটা রপ্ত করতে হবে যে কিভাবে সময় দেওয়া যায়?’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নিজেদেরও কিছু করার জন্য আপনারা যেন সুযোগ দেন। আমাদের পুলিশের বাচ্চাদের আরেকটা ফেনুমেনন তারা না চাইতেই সব পায়। হাতের কাছে সব সুযোগ সুবিধা পায়। হেল্প করার জন্য কাজের লোক পায়। ওদের জুতাটাও পরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলে যাওয়ার জন্য বোতামটা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের বাচ্চা কোনো একটা লেভেল পর্যন্ত ভালো করবে। কিন্তু জীবনে আল্টিমেটলি ভালো করতে পারবে না।’
‘মানুষের প্রাধান্য কিসে? মানুষের প্রাধান্য হচ্ছে তার এমন একটা ব্রেন আছে যা পৃথিবীতে সুপার কম্পিউটার। পৃথিবীতে একশটা কাজ এক সঙ্গে করলেও তার সমমানের হবে না। তার একটা মন আছে যেই কারণে সে মানুষ অর্থাৎ মনের হুঁশ আছে সেই মানুষ এবং সে দুই পায়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং তার পায়ের উপর দাঁড়াতে আমাদের হেল্প করতে হবে। তাঁর নিজের হাতে কাজ করার শিক্ষা তাকে দিতে হবে।
সারাক্ষণই যদি আমি তার পায়ের উপর পা রেখে হাঁটতে থাকি, তার হাতে হাত ধরে তার কাজগুলো করে দিতে থাকি তাহলে সেই শিক্ষাটা সে পাবে কবে? এই ধরনের বাচ্চাগুলো অতি আদরে ওভার প্রটেকটিভ যে প্যারেন্টিংয়ের মধ্যে যে বড় হয় তারা বড়জোড় বড় একটা ব্যাংকের অফিসার হতে পারে, এর বেশি কিছু না,’ বলেন পুনাক সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি চাই আমাদের বাচ্চাগুলো নেতা হবে, আমাদের বাচ্চাগুলো সময়ের বাউন্ডারিকে ভেঙে অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আকাশে এতদূরে উঠবে যেখানে আর কেউ যায়নি, তাহলে তাকে তার পা এবং হাতকে সক্রিয় করার সুযোগ দিতে হবে। এমনভাবে তারা পেতে থাকে এবং অভ্যস্ত হতে থাকে যে, সে যে পারে সে যে নিজের পায়ে হাঁটতে পারে এটাই সে ভুলে যায়। তার যে একটা শক্তি আছে সেটাই সে ভুলে যায়।
এবং এটা আরো অনেক বেশি হয়, যখন বাবা-মায়েরা, বাবা ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকেন। যেটা আরেকজন বলে গেছেন, র্যাবের ডিজি বলে গেছেন বাবাদের ট্রেন্ড হয়ে গেছে বাচ্চাদের ঢাকায় রেখে বাচ্চাদের ভালো রেজাল্ট করতে হবে।’
‘ভালো স্কুলে পড়তে হবে। সুতরাং মা বাচ্চাদেরকে নিয়ে থেকে যাচ্ছেন শহরে আর বাবা থাকছেন অনেক দূরে। এই যে এংসাস মাদার ওনি মনে করছেন আমার স্বামী কত কষ্ট করছেন সুতরাং আমার সব প্রাপ্তি বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া করিয়ে, ভালো রেজাল্ট করিয়ে এটা অর্জন করতে হবে। এটার আলটিমেট রেজাল্ট তার মন এবং ব্রেনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে এবং চাপ কিন্তু সব সময় নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। এই চাপ কখনো ভালো ফল আনে না।’
মিসেস হাবিবা জাবেদ আরও বলেন, ‘মানুষের ভালো কিছু তখনই হয় যখন সে একটা স্থিতি অবস্থায় থাকে শান্ত থাকে। তার মন এবং হৃদয় এক সঙ্গে কাজ করতে পারে। মায়েরা এটাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিবেন না। যেহেতু আমি ঢাকায় আছি বাচ্চাকে ভালো রেজাল্ট করিয়ে ছাড়তেই হবে। ভালো রেজাল্ট জীবনে সুখী হওয়ার জন্য, হ্যাপি হওয়ার জন্য খুব ক্ষুদ্র একটি কম্পুনেন্ট মনে রাখবেন।
‘আমরা ভালো আছি বাচ্চাদের নিয়ে ভয় পেয়ে যাবেন না যে, ওদের ভবিষ্যত কী হবে? ওদের ভবিষ্যৎ ইনশাআল্লাহ ভালোই হবে। আপনার ভবিষ্যৎ যিনি ভালো করেছেন তাদের ভবিষ্যৎ তিনিই ভালো করবেন। আমরা আরো দুশ্চিন্তায় পড়িযে ছেলের ভবিষ্যৎ আগে নিশ্চিত করতে হবে।
এই কাজে নিজেদের এমন কিছু কাজে ব্যস্ত করি যেটা আসলে আমাকে অনেকবেশি ব্যতিব্যস্ত রাখে, অনেকবেশি আতঙ্কিত রাখে এবং সেটার কারণে আমি স্থির থাকতে পারি না। একটা বিষয় পাওয়া কোনো জিনিসে কিন্তু আনন্দ নেই, অর্জন করাতে যে আনন্দ। ওদের আমরা অর্জন করার সুযোগ দিই, যোগ্য করে তুলি ওরা অর্জন করে নিক।’
পুনাক সভাপতি বলেন, ‘তোমরা কোনোদিনও যেন মাদক না ছুঁও। মাদক এবং জঙ্গিবাদ এই দুইটা তোমার সমস্ত অর্জনের পথে বাঁধা। মাদক এমন একটা জিনিস যেটা তোমার ব্রেনকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে দেয়। বিবেককে নষ্ট করে দেয়। আমি পেশায় একজন অ্যাডিকশন প্রফেশনাল এবং ন্যাশনাল ট্রেইনারও। এই জন্যে এই কথাটা বললাম, যেন তোমরা আমার কথাটাকে গুরুত্ব দাও যে, না, ওনি জেনে বুঝে বলছেন।
‘আমি জেনে বুঝে বলছি, কারণ বাচ্চাদের এখন একটা ধারণা গাঁজা তো আমেরিকায়, কানাডায় আরো অনেক দেশে লিগ্যাল করে দিয়েছে। সুতরাং গাঁজা খারাপ হবে কেন? গাঁজা খারাপ, গাঁজার মতো ভয়ংকর নেশা নাই। গাঁজা থেকে একটা রোগ হয় যেটাকে আমরা বলি গাঁজা সাইকোসিস। সাইকোসিস হচ্ছে যাকে আমরা সোজা বাংলায় পাগল বলি। এই সমস্ত সিনড্রোম কিন্তু গাঁজা থেকে আসে। অন্যকোনো ড্রাগস থেকে এত আসে না।’
তিনি বলেন, গাঁজা দেখতে নিরীহ, আপাত দৃষ্টিতে কিছু উপকারও আছে। কোরান শরীফেও বলা আছে, কিছু উপকার আছে। কিন্তু যেই জিনিসে এক পার্সেন্ট উপকার আর ৯৯ পার্সেন্ট অপকার ওই জিনিস কোনো বুদ্ধিমান কী নেবে? এই উপকারও একসময় গিয়ে থেমে যায়। অর্থাৎ নেশা করে তখন আর আনন্দ পাওয়া যায় না। তখন সে মৃত্যু কামনা করে এবং সুইসাইড করে। এদের মধ্যে অ্যালকোহলিক যারা তাদের মধ্যে সুইসাইডের হার সবচেয়ে বেশি।
এর কারণ তুলে ধরে এই মনোবিদ বলেন, এটা একটা ডিপ্রেশেন্ট, গাঁজা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসে ডিপ্রেশন। নিয়ে আসে চিন্তার অকার্যকারতা। আর ইয়াবাকে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি কেমন হিংস্র। এটা জম্বি বানিয়ে ফেলে। জম্বি ইংলিশ মুভিটা তোমাদের পরিচিত এই জন্যে জম্বির কথা বললাম। যে শুধু ওই ড্রাগটা ছাড়া আর কিছু চিনে না। যে শুধু মানুষকে ইনফেকটেড করা ছাড়া আর কিছু বুঝেনা।
‘ড্রাগের কাছে নেভার-এভার তোমরা যেন কোনোদিনও না যাও। এটার মধ্যে যদি ১ পার্সেন্টও ভালো থাকতো, তবে আল্লাহ এটা আমাদের জন্য নিষেধ করতেন না। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উদাহরণ টেনে হাবিবা জাবেদ বলেন, ‘আমি ক্লায়েন্ট হিসেবে পেয়েছি এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার জন্য সে গাঁজা খেত। বেশি সময় পড়তে পারে, তার নাকি অংকের মাথা খুলে যায়। কিন্তু সে ইন্টারমেডিয়েটে এসে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হলো। এটাই কিন্তু হয়, কিছু একটা দিন সময় পর্যন্ত এটা তেমন একটা ক্ষতির কারণ এফেক্ট ফেলে না।
কিন্তু যখন অ্যাডিকটেট হয়ে যায়, যে পড়ার জন্য সে নেশা করা শুরু করে সেই নেশার জন্যেই সে কিন্তু আর পড়াটাকে কন্টিনিউ করতে পারলো না। এটাই কিন্তু বাস্তবতা। তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, গাঁজা এবং জঙ্গিবাদ এই দুইটা থেকে আমরা যেন দূরে থাকি।
‘জঙ্গিবাদের মাঝেও কোনো ইসলাম নাই। ইভেন তায়েফের মাঠে আমরা জানি যে, ওইখানকার মানুষজন নবী করিম (সা.) এর দাওয়াত কবুল করে নাই এবং তাকে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখেছে পাথর মেরে মেরে। ফেরেস্তা এসে যখন বললেন, আপনি বলেন, ওদের দুই পাথরের মাঝে ফেলে পিসে দিই। ওনি বললেন না, ওরা হয়তো শোনেনি ওদের বংশধররা শোনবে। সুতরাং এই যে আশ্বাস, এই যে আশা এই যে ভিন্নমতের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা।
এটাই তো আমাদের ইসলাম শেখায়। ইসলামের মধ্যে জঙ্গিবাদ কোথায়, সুতরাং এটাও কিন্তু আরেকটা ভুল। যেটা আমাদের আধুনিক সন্তানরা করছে। মনে করছে এটা তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্বটা তারা মনে করে, নিজেদের সেলফ খুব দুর্বল থাকে। ওই আগের কথায় বাচ্চাদের সময় দিতে হবে বাবা-মাকে। যেন তার নিজের জায়গাটাকে বুকটাকে ফাঁকা ফাঁকা মনে না হয়। সে জানে যে সে কি?’
মিসেস হাবিবা জাবেদ বলেন, ‘এই শূন্যতা যেন তাদের ভিতরে তৈরি না হয় এবং বাচ্চাদের মধ্যে যেন আমরা আমাদের আদর্শ, ভালোবাসা তৈরি করে দিতে পারি। সেই কাজটা কিন্তু চাইল্ডহুডেই করতে হবে। বড় হলে এটা আর হয় না। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় এবং তাদের কতটুকু চাওয়া আমাদের কতটুকু চাওয়া কতটুকু আমরা যেতে পারি, কতটুকু আসলে দরকার। এই প্রশ্নগুলো করা খুব জরুরি।’
দার্শনিকতার আলোছায়ায় উম্মিলিত আইজিপিপত্নী
মিসেস হাবিবা জাবেদ সেদিন কী বলেননি অথবা তিনি যা বলেছেন তেমনটি এই সময়ে ভাবা ও বলা সহজ নয়, বিরল বলেই মনে করেন অনেকে। জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা, মানুষের সাফল্যকে নিশ্চিত করার প্রজ্ঞা যার থাকে তিনি যা বলেন, তাঁর পেছনে উদ্দেশ্য থাকে। থাকে নির্মোহ বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক ধ্যান ধারণা।
যা শুধু প্রজ্ঞার বিচ্ছুরণ নয়, অবশ্যই সেখানে জীবনবোধ দার্শনিকতার আলোছায়ায় উম্মিলিত হয়। তাঁর কথাগুলো সাধারণ হলেও নতুনমাত্রায় উদ্ভাসিত। যার আবেদন তাৎক্ষণিকতার গণ্ডি পেরিয়ে সীমাহীন পটভূমিতে চলমান, ইতিবাচক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে, এমন মত বিশ্লেষকদের।
তাঁরা মনে করেন, সমাজ রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে জীবনবোধের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ছন্দবদ্ধ অসাধারণ বাগ্মীতার গুণে। তাঁর বক্তব্য হয়ে উঠেছে অনন্য অভিভাষণ। এমনকি বিখ্যাত এবং সফল ব্যক্তিত্ব যারা কালজয়ী বক্তব্য রেখেছেন এবং যে বক্তব্যগুলো মানবজাতির সামনে সার্বজনীন ও সর্বকালীন প্রেরণা সঞ্চারী, আইজিপিপত্নীর এ বক্তব্যও ঠিক তেমনই দিক নির্দেশক।
এ বক্তব্যের প্রভাব বহুমাত্রিক। নিজের আস্থা, আবেগ ও আন্তরিকতার নির্যাসে তিনি শুনিয়েছেন সত্য, সুন্দর ও সফল জীবনের গল্প। তাঁর পরামর্শমূলক ও গঠনমূলক বক্তব্য সমকালীন দর্শক-শ্রোতার চেতনার মর্মমূলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে